খায়রুল হকের রায়ে একাধিক ত্রুটি ছিল : আপিল বিভাগ
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার রায়ের পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ বলেছেন, ২০১০ সালের ১০মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে বেঞ্চের রায়টি একাধিক ত্রুটিতে ত্রুটিপূর্ণ বলে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। এ রায়টি সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা হলো। তবে এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে চতুর্দশ সংসদ নির্বাচন থেকে।
আজ বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত সাত বিচারকের আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
কিছু পর্যবেক্ষণসহ আপিল নিষ্পত্তি করে, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে বেঞ্চের রায় বাতিল ও ত্রয়োদশ সংশোধনী বৈধ ঘোষণা করে এ রায় ঘোষণা করা হয়।
আপিল বিভাগ আদেশে বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর চতুর্দশ সংসদ নির্বাচন থেকে কার্যকর হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে বেঞ্চের অন্য বিচারকরা হলেন–বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম ইমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।
আপিল বিভাগ বলেছেন, ২০১০ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় আপিল বিভাগ। সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে বেঞ্চের রায়টি একাধিক ত্রুটিতে ত্রুটিপূর্ণ বলে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। এ রায়টি সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা হলো।
রায়ে আপিল বিভাগ বলেন, সংবিধানের চতুর্থ ভাগের পরিচ্ছদ ২ (ক)-এর নির্দলীয় সরকার সম্পর্কিত বিধানবলী, যা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী আইনের ৩ ধারায় সন্নিবেশিত হয়েছিল। আজকের রায়ের মাধ্যমে তা পুনরুজ্জীবিত ও সক্রিয় করা হলো। নির্দলীয় সরকার সম্পর্কিত বিধানবলী কেবলমাত্র ভবিষ্যৎ প্রয়োগ যোগ্যতার ভিত্তিতে কার্যকর হবে।
রায়ে আরও বলা হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর চতুর্দশ সংসদ নির্বাচন থেকে কার্যকর হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা।
রায়ের পর রিটকারীর আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আপিল বিভাগের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল হলেও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এ ব্যবস্থায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাদের মতে, পরবর্তী অর্থাৎ চতুর্দশ জাতীয় নির্বাচনই হতে পারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এর উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, আগে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগ রায় দেওয়ার পর ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ যেমন স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়েছিল, তেমনি ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকারের আনা সংশোধনীতে বিভাগীয় শহরে স্থাপিত হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ হাইকোর্ট বাতিল করলে সেই রায়ের পর সার্কিট বেঞ্চ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
২০১০ সালের ১ মার্চ আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে আটজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শুনানিতে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির পক্ষে মত দেন। শুনানি শেষে ওই বছরের ১০ মে আপিল মঞ্জুর করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় আপিল বিভাগ। তবে রায়ের দিন আরও দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে বলে অভিমত দিয়েছিলেন বিচারপতি খায়রুল হক। যদিও পূর্ণাঙ্গ রায়ে সেই পর্যবেক্ষণ ছিল না। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই ২০১১ সালের ৩০ জুন আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তিসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রস্তাব পাস করিয়ে নেয়। একই বছরের ৩ জুলাই রাষ্ট্রপতি তাতে অনুমোদন দেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক