বরেন্দ্র অঞ্চলে গম চাষে নতুন দিগন্ত
চলতি মৌসুমে রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলায় প্রায় ১ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে ৫ লাখ ৪০ হাজার টনেরও বেশি গম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। গম চাষে সাফল্য অর্জনের জন্য কৃষক, মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী ও গবেষকরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাজশাহী কৃষি অঞ্চলের চার জেলায় ৯৭ হাজার ৫৭৬ হেক্টর জমি থেকে ৪ লাখ ২০ হাজার টন এবং বগুড়া কৃষি অঞ্চলের চার জেলায় ৩১ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমি থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টন গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
ডিএই-এর অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান বলেন, তাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে এবং মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করছেন। তিনি উল্লেখ করেন, গত কয়েক বছর ধরে কৃষকরা ডিএই নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে গম চাষ করছেন।
এদিকে, কৃষক ও সংশ্লিষ্টরা চলতি মৌসুমে বিশেষ করে বিস্তৃত বরেন্দ্র এলাকায় ব্যাপক গম উৎপাদন নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী। গম পানি সাশ্রয়ী ও খরা সহনশীল ফসল হওয়ায় এ অঞ্চলে এটি উপযোগী। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) পানির সংকট মোকাবিলায় কৃষকদের গম চাষে উৎসাহিত করতে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছে।
তানোর উপজেলার কৃষক আবু বকর মোল্লা জানান, সময় মতো বীজ বপন এবং বর্তমান শীতল আবহাওয়া বাম্পার ফলনের জন্য ইতিবাচক লক্ষণ।
আঞ্চলিক গম ও ভুট্টা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জহিরুল ইসলাম বলেন, গম কম সেচনির্ভর ফসল হওয়ায় বরেন্দ্র এলাকার কৃষকরা নতুন জমিতে গম চাষে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন।
গম গবেষণা কেন্দ্র এখন পর্যন্ত ২৪টি গমের জাত এবং বাণিজ্যিক চাষের জন্য কিছু সময়োপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। ড. জহিরুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি উদ্ভাবিত ছয়টি জাত- প্রদীপ, বিজয়, শতাব্দী এবং বারিগম-২৬ পাতার ব্লাইট ও পাতার মরিচা রোগের প্রতি অধিক সহনশীল এবং উচ্চ ফলনশীল। বারিগম-৩৩ সর্বশেষ উদ্ভাবিত জাত, যা ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী, জিংকসমৃদ্ধ, বড় দানার এবং উচ্চ ফলনশীল।
ডিএই-এর সাবেক পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, গম খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি বলেন, রাজশাহী বিভাগ গম চাষে দেশের মোট জমির ৩৫ শতাংশ এবং মোট উৎপাদনের ৪৪ শতাংশ অবদান রাখে। বরেন্দ্র উঁচু এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর বৃষ্টিনির্ভর জমি গম চাষের আওতায় আনার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
বিএমডিএ -এর কৃষি ব্যবস্থাপক এটিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, গম পরিবেশবান্ধব ফসল হওয়ায় বরেন্দ্র উঁচু এলাকায় গম চাষের টেকসই সম্প্রসারণ বিদ্যমান পানির সংকট পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখন শুকনো এলাকায় শুধু ইরি-বোরো ধানের ওপর নির্ভর না করে গম চাষের পরিমাণ বাড়ানোর সময় এসেছে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)