ভাতার টাকা আত্মসাৎ করলেন আ.লীগনেতা, ভুল স্বীকার স্ত্রীর
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় প্রতিবন্ধী নারীর ভাতার টাকা আত্মসাৎ করেছেন এক আওয়ামী লীগনেতা। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ভুল স্বীকার করেছেন ওই নেতার স্ত্রী পাহাড়পুর ইউনিয়নের নারী সদস্য তহমিনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের পাঁচঘরিয়া গ্রামের প্রতিবন্ধী নারী মোসা. মুক্তা (৪০) ভাতা পাওয়ার জন্য পাহাড়পুর ইউনিয়নের নারী সদস্য তহমিনার কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। পরে নারী সদস্য তহমিনা তার নামে ভাতার কার্ড করে দেন ঠিকই, কিন্তু সেখানে ভাতাভোগীর মোবাইলফোন নম্বর না দিয়ে তহমিনার স্বামী শেরপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পাহাড়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমানের মোবাইলফোন নম্বর বসিয়ে দেন। এরপর থেকেই নিয়মিত ভাতা তুলছেন ওই আওয়ামী লীগনেতা।
ভাতাভোগী মোসা. মুক্তাকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি, টাকাও দেওয়া হয়নি। প্রায় আড়াই বছর ধরে প্রতি মাসেই টাকা তুলেছেন তিনি অথচ প্রকৃত ভাতাভোগী রয়েছেন অন্ধকারে। হয়তো আরও কয়েক বছর এভাবেই চলত। কিন্তু চলতি নভেম্বরের মাঝামাঝি নতুন ভাতার আবেদন নিতে সমাজসেবা অফিস থেকে ঘোষণা দেওয়ার পর মোসা. মুক্তা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন, তার নামে আড়াই বছর ধরে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এ কথা শুনে তার চোখে-মুখে হতাশা নেমে আসে। পরে এলাকাজুড়ে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা।
ভাতাভোগী মুক্তা বলেন, ‘প্রায় আড়াই বছর আগে মেম্বার তহমিনা আমার কাগজপত্র নিয়েছিল। বারবার জিজ্ঞেস করলে বলতো হয়ে যাবে। কিন্তু আমি কোনো টাকা পাইনি। সমাজসেবা অফিসে কয়েকদিন আগে গিয়ে শুনলাম, আমার নামে ভাতা তো হয়েছে অনেক আগে, মোবাইলফোন নম্বরও আমার না, মেম্বারের স্বামীর।’
মুক্তা আরও জানান, ‘এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর মিজানুর মাস্টার আমাকে ১০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছেন। কয়েকদিন পর পাহাড়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জিল্লুর মাস্টার ও মাসুদ মেম্বার আমার বাড়ি এসে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু আড়াই বছরের টাকা তো প্রায় ৩০ হাজার টাকা হয়। আমার প্রতিবন্ধী ভাতার বাকি টাকা দিলো না কেন?’
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আফসার আলী ক্ষোভ নিয়ে বলেন, এক প্রতিবন্ধী নারীর ভাতার টাকা আত্মসাৎ কোনো সাধারণ অন্যায় নয়। এটি তার বেচে থাকার আশাকে চুরি করা।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ও পাহাড়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমানকে মুঠোফোনে পাওয়া গেলেও তিনি শুধু বলেন, ‘মুঠোফোনে কিছু বলা যাবে না, সাক্ষাতে কথা বলবো।’ এরপর তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
পাহাড়পুর ইউনিয়নের নারী সদস্য তহমিনা বলেন, ‘ভুল করে এমনটি হয়েছে। এখন মোবাইলফোন নম্বর সংশোধন করা হয়েছে। তাছাড়া আমার স্বামী মুক্তার সঙ্গে বিষয়টি মীমাংসা করেছেন।’
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রাজীব আহমেদ বলেন, এটি স্পষ্ট অনিয়ম। আমরা মুক্তার মোবাইলফোন নম্বর সংশোধন করেছি। আবেদনকারীদের নিজের নগদ নম্বর ব্যবহারের পরামর্শ আমরা সবসময় দেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইসরাত জাহান ছনি জানান, এ বিষয়ে এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। আপনার কাছ থেকে প্রথম শুনলাম। যদি সত্য হয়, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মিঠু হাসান, নওগাঁ (বদলগাছী-মহাদেবপুর)