প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় ক্লিনিকের ওটি সিলগালা
নীলফামারীর ডোমার জেনারেল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ট্রেড লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও প্রশিক্ষিত কর্মী না থাকায় অপারেশন থিয়েটার (ওটি) সিলগালা করে দিয়েছে তদন্ত কমিটি।
আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়ায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুন্না রানী চন্দের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত দল ক্লিনিকটিতে অভিযান চালায়।
তদন্ত কমিটি জানায়, ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার নিয়ম অনুযায়ী কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ট্রেড লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং প্রশিক্ষিত কর্মী নেই। এতে ক্লিনিকটির কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
নিহত প্রসূতি লক্ষ্মী রায়ের (২৫) পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিনি ডোমার উপজেলার হরিণচড়া ইউনিয়নের নীলাহাটি শালমারা গ্রামের বাসিন্দা তাপস কুমার রায়ের স্ত্রী।
ক্লিনিকের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. অরাতুল আক্তার বিভার ভুল চিকিৎসায় লক্ষ্মীর মৃত্যুর অভিযোগ করে তার পরিবার।
পরিবার জানায়, ২১ নভেম্বর গর্ভাবস্থায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে লক্ষ্মীকে ডোমার জেনারেল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর ডা. বিভা জরুরি সিজারের পরামর্শ দেন। পরিবারের সম্মতিতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক ফুটফুটে মেয়ে সন্তান জন্ম হয়। তবে সিজারের দুই দিন পর থেকেই লক্ষ্মীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রংপুর ডক্টর্স ক্লিনিকে দুই সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে তিনি মারা যান। নবজাতক সুস্থ আছে বলে পরিবার জানিয়েছে।
নিহত লক্ষ্মীর স্বামী তাপস কুমার রায় বলেন, ‘ডাক্তার জরুরি সিজারের কথা বলেছিলেন। আমরা রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু ভুল চিকিৎসার কারণেই আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসায় প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ হলেও লাভ হয়নি। অন্য কোনো পরিবার যেন এমন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তাই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’
ক্লিনিকের পক্ষ থেকে মো. জাহাঙ্গীর ইসলাম জানান, ‘সিজার সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হয়নি। বিষয়টি অকারণে বড় করে দেখানো হচ্ছে।’
গাইনি চিকিৎসক ডা. অরাতুল আক্তার বিভা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সিজারের সময় কোনো জটিলতা ছিল না। রোগীর জন্মগত কিডনি সমস্যা ছিল। এ জন্য ডায়ালাইসিসের জন্য রংপুরে রেফার করা হয়েছিল। কিন্তু রোগীর স্বজনরা কিডনি বিভাগে না গিয়ে গাইনি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে।’
তদন্ত কমিটির সদস্য ডা. মো. আইনুল হক বলেন, ‘ক্লিনিকে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ট্রেড লাইসেন্সসহ প্রশিক্ষিত কর্মীও নেই। প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ নথি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেসব অনিয়মের ভিত্তিতে ওটি সিলগালা করা হয়েছে।’

ইয়াছিন মোহাম্মদ সিথুন, নীলফামারী