স্ত্রীর শোকে না ফেরার দেশে স্বামী
ভালোবাসা শুধু বেঁচে থাকার গল্প নয়, কখনও কখনও তা মৃত্যুরও অমর সাক্ষী হয়ে থাকে। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কাদিবাড়ী গ্রামে ঘটেছে এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। স্ত্রীর মৃত্যুর মাত্র ১১ ঘণ্টা পর চলে গেলেন তার আজীবনের সঙ্গী স্বামী।
গতকাল শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) দিনটি ছিল এই দম্পতির জীবনের শেষ অধ্যায়। দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আঞ্জুয়ারা বেগম (৬৫)। জীবনের সঙ্গিনীকে হারিয়ে ভেঙে পড়েন স্বামী জলিলুর রহমান জলিল মাস্টার (৭৫)। বিকেল থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। রাতে তাকে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১২টা ২৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
একদিনে একই ঘরে দুটি মৃত্যু– একটি ভালোবাসার গল্পের অবিশ্বাস্য সমাপ্তি। মুহূর্তেই কাদিবাড়ী গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। সারা গ্রাম নির্বাক, স্তব্ধ, শুধু বাতাসে ভাসে কান্নার শব্দ। দীর্ঘ ৪৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে জলিল মাস্টার ও আঞ্জুয়ারা বেগম ছিলেন একে অপরের অবিচ্ছেদ্য ছায়া। একসঙ্গে হাঁটতেন, হাসতেন, জীবনযুদ্ধ লড়তেন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। সেই জীবনের শেষ লড়াইটাও যেন তাঁরা একসঙ্গেই লড়লেন- একজন চলে গেলে আরেকজনের থাকার শক্তিটুকুও ফুরিয়ে গেল।
এখন তাদের ঘরে পাশাপাশি রাখা দুটি কফিন যেন নিঃশব্দে বলছে- ‘জীবনভর একসঙ্গে থেকেছি, মৃত্যুতেও আলাদা হইনি।’
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ওদের ভালোবাসা ছিল নিখাদ। একজন ছাড়া আরেকজনকে কল্পনাই করতে পারতেন না। তাই হয়তো একজন চলে যাওয়ার পর অন্যজনও থাকতে পারেননি।
ছেলে রাকিবুল হাসান রকি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মা-বাবাকে একসঙ্গে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। মা হঠাৎই মারা গেলেন। বাবা তখনও কথা বলছিলেন, কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর তিনি একদম ভেঙে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ার পর আর ফেরেননি।

মিঠু হাসান, নওগাঁ (বদলগাছী-মহাদেবপুর)