১৫ ঘণ্টা পর চিকিৎসকের আন্তরিকতায় প্রাণ পেলেন সাপেকাটা জেলে
খুলনার কয়রায় সুন্দরবনে মাছ ধরতে যাওয়া এক জেলে বিষাক্ত সাপের দংশনের ১৫ ঘণ্টা পর ফিরেও চিকিৎসকের আন্তরিকতায় প্রাণ পেয়েছেন। দীর্ঘ সময় পর হাসপাতালে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই সফল চিকিৎসায় তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।
এদিকে গভীর রাতেও যথাযথ দায়িত্ব পালন করে প্রশংসায় ভাসছেন কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সুন্দরবনে মাছ ধরার সময় কয়রা উপজেলার ৪ নম্বর কয়রা গ্রামের শহীদুল্লাহ গাজীকে (৬২) বিষাক্ত সাপে দংশন করে। সঙ্গে থাকা আরেক জেলে নৌকা চালিয়ে তাকে বাড়িতে আনার চেষ্টা করেন। পথে অবস্থার অবনতি হলে রোগীর সেবা করতে গিয়ে তিনি নিজেও নৌকা চালাতে অপারগ হয়ে পড়েন। পরে বিকেল ৪টার দিকে অন্য জেলেদের সঙ্গে দেখা হলে তারা ঘটনাটি স্বজনদের জানায়। স্বজনরা কোস্ট গার্ডের কয়রা স্টেশনের সহায়তায় রাত ৯টার দিকে শহীদুল্লাহকে সুন্দরবন থেকে গোলখালীতে নিয়ে আসেন। এরই মধ্যে গ্রাম্য ওঝা দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনোম আছে কি না তা নিশ্চিত হয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের গোলখালী থেকে হাসপাতালে আনা হয় তাকে। তখন রোগী অচেতন ছিলেন এবং মুখে ফেনা উঠছিল। খবর পেয়ে হাসপাতালের চিকিৎসকরা এন্টিভেনোম প্রস্তুত রাখেন। এন্টিভেনোমের সফল প্রয়োগে ধীরে ধীরে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. রেজাউল করিম জানান, রাত সাড়ে ১১ দিকে আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. সুজিতের ফোন কলে তিনি ঘটনাটি জানতে পারেন। সে সময় তিনি খুলনা থেকে হাসপাতালে ফিরছিলেন।
ডা. রেজাউল করিম বলেন, ‘রোগীর স্বজনদের বর্ণনা শোনার পর বুঝতে পারি—এটি বিষাক্ত সাপের কামড় হতে পারে। তাই ফোনেই ডা. সুজিতকে অ্যান্টিভেনোম প্রস্তুত রাখা ও প্রটোকল অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করার নির্দেশ দেই। রোগী হাসপাতালে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই ডা. সুজিত রোগীর অবস্থা মূল্যায়ন করে ১০ ভায়াল অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করেন। রাত ২টার দিকে আমি হাসপাতাল পৌঁছে জরুরি বিভাগে রোগীর অবস্থার উন্নতি লক্ষ করি।’
ডা. রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘অ্যান্টিভেনোম দেওয়ার পর আল্লাহর অশেষ রহমতে রোগী ভালোভাবে রেসপন্স করে। কয়রার মতো দুর্গম এলাকায় এমন জরুরি মুহূর্তে রোগীকে সুস্থ করে তোলা আমাদের জন্য অত্যন্ত সন্তোষজনক।’
রোগীর স্বজন মোল্লা শাহাবুদ্দিন বলেন, আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে রোগী সুস্থ। আমরা বাড়িতে এসেছি। তিনি চিকিৎসকদের আন্তরিকতার প্রশংসা করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

তরিকুল ইসলাম, খুলনা (কয়রা-সুন্দরবন-উপকূল)