নির্বাচনি আইনশৃঙ্খলা নিয়ে যৌথ বিবৃতি দিতে পারে বাহিনীগুলো
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর গণভোটের তফসিলের পরদিনই একজন সম্ভব্য প্রার্থীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা হয়েছে। এরপর নির্বাচন অফিসে আগুন দেওয়া হয়। এ নিয়ে জনমনে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) উদ্বিগ্ন। এ নিয়ে রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সশস্ত্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে বসে ইসি। বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। সেজন্য বাহিনীকে যত কঠোর হওয়া যায়, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি।
সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদির হত্যাচেষ্টার ঘটনার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নাসির উদ্দিন ভীষণ অবাক হয়েছিলেন। সে কথা তিনি নিজেই বৈঠকের শুরুতে জানান। বিহ্বল সিইসি বলেন, ‘এই ঘটনাটা, আমার কাছে মনে হয়েছে— আমার মাথার ওপর বাজ পড়েছে। আমি আগের দিন তফসিল ঘোষণা করলাম, আর পরের দিনই এমন একটি ঘটনা ঘটল। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
অন্যদিকে বৈঠকে উপস্থিত সব বাহিনীর পক্ষ থেকে ইসিকে বলা হয়, কোনো গোষ্ঠী নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চালালে তা তারা যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করবে। জনমনে যেন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো শঙ্কা বা অনিশ্চয়তা তৈরি না হয়, সেজন্য যৌথভাবে কাজ করবে বাহিনীগুলো। দ্রুতই বাহিনীগুলো যৌথ বিবৃতি দেওয়ার কথা ভাবছে। নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রাখতে যেকোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা ইসিকে জানানো হয়েছে বৈঠকে। তাদের কথায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে ইসি।
বৈঠকে উপস্থিত সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে তারা নাম প্রকাশ করতে চাননি। সূত্রগুলো বলছে, ভোটের মাঠে কাজ করবে এমন সব বাহিনী একটি যৌথ বিবৃতি দেবে দ্রুতই। এ ধরনের আলোচনা তারা তুলেছে বৈঠকে। যেন সাধারণ মানুষ কোনোভাবে অতঙ্কিত না হন। ভয় না পান। যেন নির্বাচনে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা নির্ভয়ে নির্বাচনি কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও যেন নির্ভয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কাজ করতে পারেন।
রাজধানীর বাইরে দুটি উপজেলা নির্বাচন অফিসে অগুনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর সিইসি, ৪ নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, সব রিটার্নিং কর্মকর্তার বাড়তি নিরাপত্তার নির্দেশ দিয়েছে ইসি। সে অনযায়ী সংশ্লিষ্ট জায়গায় চিঠিও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া দেশের সব নির্বাচন অফিসে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। এ ছাড়া দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
নির্বাচনি পরিবেশ ঠিক রাখতে বৈঠকে সিইসি নাসির উদিন বলেন, দেশের জন্য আসন্ন নির্বাচন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, নির্বাচনি পরিবেশ ঠিক করতে যা যা করণীয়, তা নির্ধারণ করতে হবে। এখানে কোনো ছাড় নেই। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন ও গণভোটকে সুন্দর ও সার্থক করতে হবে।
বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকে ইসির প্রতি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, জুলাই-আগস্টের পক্ষের শক্তিগুলো যেন পরস্পরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি ও তিরস্কারে লিপ্ত না থাকে, সে ম্যাসেজটা তাদের দেওয়া যায় কিনা। যেন ঐক্য নষ্টের জন্য অপরাধীরা বাড়তি সুবিধা না পায়।
বৈঠক থেকে বের হয়ে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, একটি কথা বলা দরকার, যারা আমাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন বন্ধু সেজে, তাদের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি যারা আছেন এখন মাঠে। এই ঘটনাটা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। সহযোগী সেজেই কিন্তু আমাদের ভিতরে নাশকতাকারী থাকতে পারে। ঘটনা ঘটিয়ে ফেললে তারপরে হয়তো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। কিন্তু ক্ষতি যা হবার তা হয়ে যাবে। সবারই সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, এ বৈঠকে অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা শরীফ ওসমান হাদির বিষয়ে কথা বলেন। কেন এবং কীভাবে এই হত্যাচেষ্টা ঘটেছে; তা পর্যালোচনা করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হাদির সম্ভাব্য হত্যাচেষ্টাকারী গুলি ছোড়ার আগে তিন দিন তার আশপাশে ছিলেন। সখ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। হাদির প্রতি নজরদারি করেছেন।
ইসি সানাউল্লাহ আরও বলেন, যেখানে যতটুক দৃঢ় হওয়া প্রয়োজন সব বাহিনী ততটুক দৃঢ় হবে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ‘মেসেজ ইস ভেরি ক্লিয়ার’। নির্বাচন নিয়ে কোনো আশঙ্কা নাই। নির্বাচন সময়মতো হবে। নির্বাচনের পথে যে বাধাগুলো তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে, সেগুলো সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন অবহিত, সরকার অবহিত।
এ বৈঠকে সিইসি, ৪ নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা ছাড়া সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।
ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ও প্রতীক বরাদ্দ হবে ২১ জানুয়ারি। নির্বাচনি প্রচার চলবে ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১২ ফেব্রুয়ারি।

মাসুদ রায়হান পলাশ