ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে বিরাজমান কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভ্যাক) আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) খোলা থাকবে। গতকাল ঢাকায় ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে দেশটির হাইকমিশন। তবে, আইভ্যাক সূত্র জানায়, পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী তাদের কার্যক্রম আজ থেকে চলবে।

গতকাল নিরাপত্তা শঙ্কার কথা বিবেচনা করে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আইভ্যাক কর্তৃপক্ষ। আইভ্যাক বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বুধবার দুপুর ২টা থেকে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের আর কোনো কার্যক্রম চলবে না। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যেসব আবেদনকারীর বুধবারের স্লট বা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারিত ছিল, তাদের জন্য পরবর্তীতে নতুন তারিখ ও সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

এদিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলবের তিন দিনের মাথায় ‘ক্রমাবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি’ নিয়ে নয়াদিল্লির ‘গভীর উদ্বেগ’ জানাতে দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে গতকাল বুধবার তলব করেছিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে ভারত রয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে আসছে ভারত।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন দুই দেশের হাইকমিশনারদের তলব-পাল্টা তলব নিয়ে বলেন, ‘আমরা তাদের (ভারত) হাইকমিশনারকে ডেকেছি। আমরা যা কিছু বলেছি, তা থেকে কিছু তারা গ্রহণ করেনি। সে বিষয়ে তাদের কিছু দ্বিমত আছে। একইভাবে আমাদের হাইকমিশনারকেও ডেকেছে। এটা খুব অপ্রত্যাশিত না। সাধারণত এটা ঘটে। সর্বশেষ তাদের যে বক্তব্য এসেছে তাতে কিছু নসিহত করা হয়েছে আমাদের। আমি মনে করি বাংলাদেশে নির্বাচন কেমন হবে—এটা নিয়ে আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের উপদেশ চাই না।

নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই সরকার ‘ডে ওয়ান’ থেকে স্পষ্টভাবে বলে আসছে যে আমরা ‘অত্যন্ত উঁচু মানের, মানুষ যেন গিয়ে ভোট দিতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই, যে পরিবেশ গত ১৫ বছর ছিল না।’

নির্বাচন নিয়ে ভারতের উপদেশ প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, এখন ভারত আমাদের এটা (নির্বাচন) নিয়ে উপদেশ দিচ্ছে। এটা আমি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য মনে করি এই কারণে যে, তারা (ভারত) জানে এর আগে গত ১৫ বছর যে সরকার ছিল, যে সরকারের সঙ্গে তাদের (ভারতের) অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক ছিল। তখন কিন্তু এই যে নির্বাচনগুলো প্রহসনমূলক হয়েছিল, তখন তারা (ভারত) একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। এখন সামনে আমরা একটা ভালো নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি, এই মুহূর্তে তো আমাদের নসিহত করার তো কোনো প্রয়োজন নেই। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা জানি আমরা কি করব। আমরা একটা ভালো নির্বাচন করব যেটাতে মানুষ ভোট দিতে পারবে এবং যাদেরকে ভোট দেবে তারাই নির্বাচিত হবে।

ভারতে বসে শেখ হাসিনার দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্য প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা জানি আগে শেখ হাসিনা ভারতে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য দিতেন। এখন প্রতিনিয়ত মূল ধারার গণমাধ্যমেও তার বক্তব্য আসছে এবং সেই বক্তব্যে প্রচুর উসকানি আছে। যিনি একটা আদালত থেকে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছেন, তিনি আমাদের পাশের দেশে বসে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। সেই ক্ষেত্রে আমরা বক্তব্য বন্ধ বা তাকে ফেরত চাইব, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।