তারেক রহমানের সঙ্গে ফিরবেন স্ত্রী-কন্যা, স্মরণীয় সংবর্ধনার প্রস্তুতি
আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটে স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান এবং একমাত্র কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমানকে নিয়ে ঢাকা ফিরবেন তিনি।
তারেক রহমানকে বহনকারী উড়োজাহাজ ওইদিন বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। ঢাকায় ফিরে তিনি সরাসরি চলে যাবেন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা খালেদা জিয়ার কাছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, আগামী শনিবার (২০ ডিসেম্বর) ঢাকা ত্যাগ করেন ডা. জুবাইদা রহমান। এরপর ২৫ ডিসেম্বর স্বামী তারেক রহমানের সফরসঙ্গী হয়ে তিনি আবার ঢাকায় ফিরবেন। জুবাইদা রহমান বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
এদিকে তারেক রহমানকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের অদূরে ৩০০ ফিটে সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। জানা গেছে, সংবর্ধনার কারণে জনদুর্ভোগ এড়াতে পূর্বাচলের ৩০০ ফিট সড়ক বেছে নেওয়ার চিন্তা করছে দলটি। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তারেক রহমানকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) নিরাপত্তা প্রটোকল সরবরাহ করতে পারে সরকার।
তারেক রহমানের অভ্যর্থনা কমিটির প্রধান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত বাণিজ্যক ফ্লাইটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসছেন। ফ্লাইটটি দুপুর ১১টা ৫৫ মিনিটে অবতরণ করবে। তার এই স্বদেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছে বিএনপির একটি টিম। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নিরাপত্তার টিমের দায়িত্বে থাকা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) একে এম শামছুল ইসলাম, আমি নিজে এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ অন্যরা বিমানবন্দরে গিয়েছি। বিমানবন্দরে তিনি (তারেক রহমান) অবতরণ করার পর গাড়িতে ওঠা এবং যে রাস্তা দিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে (এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া) যাবেন, সেখান থেকে গুলশানের বাসায় আসা ও অন্য যেসব অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে বিএনপি— সবগুলো আমরা সরজমিনে পরিদর্শন করেছি এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়েছিলাম। আর নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আলাদাভাবে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল এবং সব বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা টিমের প্রধান সমন্বয় করছেন। তারা বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন।
তারেক রহমানের স্বদেশে ফেরা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ সহযোগিতা পাচ্ছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা আমাদের জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশনা দিচ্ছি, তারা কিভাবে ২৪ ডিসেম্বর রাতে কিংবা ২৫ তারিখ সকালের মধ্যে প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানাতে ঢাকায় আসবেন।
তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন যেন বিগত ৫৫ বছরের ইতিহাসে যা কিছু দৃষ্টান্ত আছে তাকে ছাড়িয়ে যায় এবং আগামী ৫৫ বছরের ইতিহাসে যেন এই রকম ঘটনা না হয়, সেই রকম স্মরণীয় করে রাখার জন্য সমস্ত আয়োজন হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির এই নেতা। সারাদেশের মানুষ সেজন্য অপেক্ষা করছেন।
৩০০ ফিটে সংবর্ধনা দেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা জায়গাগুলো দেখছি। দীর্ঘ ১৭ বছর পর তারেক রহমান দেশে ফেরায় সারাদেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস কাজ করছে। সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা আসবেন আমাদের প্রিয় নেতাকে এক নজর দেখার জন্য। তাই আমরা এমন একটি জায়গা খুঁজছি যেখানে মানুষের ভোগান্তি এড়িয়ে সবাইকে সংকুলান করতে পারি। নির্দিষ্ট স্পট পরে জানানো হবে।
এদিকে তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে স্মরণকালের বৃহত্তম গণজমায়েতের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গুলশান কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা করেছে দলটি। গঠন করা হয়েছে অভ্যর্থনা কমিটিও। তারেক রহমানে নিরাপত্তায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ‘প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা’। কেনা হয়েছে বুলেটপ্রুফ গাড়ি। প্রস্তুত করা হয়েছে গুলশানের বাসভবন। নতুন করে সাজানো হয়েছে গুলশান ও নয়াপল্টন কার্যালয়ের কক্ষ।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, স্বৈরাচার হাসিনার রোষানলে পড়ে দীর্ঘদিন লন্ডনে নির্বাসিত জীবন শেষে তারেক রহমানের ঘোষণায় জেলায় জেলায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে উচ্ছ্বাস। কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনার আগেই তৃণমূল নেতাকর্মীরা নিজেরাই যানবাহন ভাড়া করছেন। শুধু ঢাকা নয়, দেশের সবগুলো জেলা, উপজেলা, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায় থেকে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ সংবর্ধনায় যোগ দেবেন। তারা বাস, ট্রাক, মাইক্রো, লঞ্চ, ট্রেন ও বিমানযোগে আসবেন।
উত্তরাঞ্চলের জেলা-উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীদের গাড়িবহর টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে রাখা হবে। সেখান থেকে হেঁটে বিমানবন্দর সড়কে জড়ো হবেন তারা। সাধারণ মানুষের যানজটের ভোগান্তি এড়াতে তারেক রহমানের ফেরার ক্ষণ হিসেবে বড়দিনের ছুটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে ভিভিআইপি লাউঞ্জে দলের সিনিয়র নেতারা থাকবেন। আর বিমানবন্দরের বাইরে থেকে পূর্বাচলের ৩০০ ফিট পর্যন্ত বিস্তৃত হবে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ঢল। তবে বিমানবন্দর থেকে তারেক রহমানের এভারকেয়ার হাসপাতালে অসুস্থ মা বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেজন্য বিমানবন্দর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতাল পর্যন্ত নেতাকর্মীরা রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে তারেক রহমানকে সংবর্ধনা জানাবেন।
এদিকে তারেক রহমানের সংবর্ধনায় সারাদেশের নেতাকর্মীদের আসার সুবিধার্ধে সাতটি রুটে বিশেষ ট্রেন বুকিংয়ের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত আবেদন বলা হয়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য থেকে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করবেন। তাকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য সারাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যাক ছাত্র-জনতা ঢাকায় আসবেন। তাদের আসার সুবিধার্থে বিএনপি’র পক্ষ থেকে ২৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাতের বিভিন্ন রুটে রেলগাড়ি রিজার্ভ করতে ইচ্ছুক। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভাড়া পরিশোধ করা হবে। আবেদনে যেসব রুটের কথা উল্লেখ করা হয় সেগুলো হচ্ছে— ১. কক্সবাজার-ঢাকা, ২. সিলেট-ঢাকা, ৩. জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা, ৪. টাঙ্গাইল-ঢাকা, ৫. চাঁপাইনব্বাগঞ্জ-রাজশাহী-ঢাকা, ৬. পঞ্চগড়-নিলফামারী-পার্বতীপুর-ঢাকা, ৭. কুড়িগ্রাম-রংপুর-ঢাকা।
আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক ও বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুল রহমান রুমন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, তারেক রহমান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সন্তান, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উত্তরসূরি এবং আগামী দিনে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা রক্ষার অন্যতম প্রধান ভরসা। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিরাপত্তা দিতে হবে। এর ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। দলীয় সিকিউরিটি ফোর্স দিয়ে তারেক রহমানের নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়।
আতিকুল রহমান রুমন আরও বলেন, আগের তারেক রহমান এবং এখনকার তারেক রহমান এক নয়। ১৯৯১ সালে থেকে ১৯৯৬ সালের তিনি একটাই গাড়িতে করে ঘুরতে এটা আমরা নিজের চোখেই দেখা। তখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হয়েও কোনো রাষ্ট্রীয় সিকিউরিটি নেননি। স্বাধীনতাবিরোধী কোনো রাজনৈতিক দলের বক্তব্য নিয়ে ভাবলে চলবে না। সরকারকে তারেক রহমানের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে।
তারেক রহমানের বাড়ি প্রস্তুত প্রসঙ্গে আতিকুল রহমান রুমন বলেন, গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়ি তারেক রহমানের থাকার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যদি কোনো কারণে বাড়ি পুরোপুরি প্রস্তুত না হয় তাহলে তিনি পাশের মায়ের থাকার বাড়ি ফিরোজায় উঠবেন। ফিরোজায় দুই-তিনটি রুম আগেই প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।

মাহমুদুল হাসান