বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি রক্ষায় রাজপথ-রেলপথ অবরোধের হুঁশিয়ারি
দিনাজপুরের পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় ছয় দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন।
আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় খনি শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের আয়োজনে সিবিএ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দাবি উপস্থাপন এবং পূরণ না হলে কয়লা খনি রক্ষায় রাজপথ-রেলপথ অবরোধের হুঁশিয়ারি দেন শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কাশেম শিকদারের সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিবিএর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। এতে বক্তব্য দেন খনি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রায়হানুল ইসলাম, শ্রমিকনেতা রবিউল ইসলাম প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দেশের একমাত্র লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত এই কয়লা খনিকে পরিকল্পিতভাবে লোকসানি দেখিয়ে বন্ধ করার চক্রান্ত চলছে। তারা অভিযোগ করেন, বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র দীর্ঘদিন আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় খনির উৎপাদিত কয়লা ব্যবহার হচ্ছে না। ফলে কোল ইয়ার্ডে বিপুল কয়লা ঝুঁকিপূর্ণভাবে মজুদ রয়েছে। কোল ইয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতা দুই লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টনের বিপরীতে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন স্তূপ করে রাখা হয়েছে। যা কোল ইয়ার্ডের নিরাপদ মজুদ উচ্চতার চেয়ে অনেক বেশি। স্বাভাবিকভাবে কয়লার মজুদ পাঁচ থেকে সাত ফুট উচ্চতায় রাখা হয়। কিন্তু বর্তমানে প্রায় ৫০ ফুটের বেশি উচ্চতায় কয়লা জমিয়ে রাখার ফলে পাহাড় ধ্বসের মতো ধ্বসে পড়ছে, যা বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে হাইওয়ে সড়ক বন্ধ হওয়ার উপক্রম। অতীতে কয়লা স্থানীয় ইটভাটা ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হলেও মন্ত্রণালয়ের একক সিদ্ধান্তে বর্তমানে কেবল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করা হয়।
নেতারা বলেন, একদিকে পিডিবি কয়লা ব্যবহার করতে পারছে না অন্যদিকে ডমিস্টিক ও ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও তাদের কাছে কয়লা বিক্রির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। বড়পুকুরিয়ার খনির প্রতি টন কয়লার উৎপাদন ব্যয় ১৭৬ ডলার, অথচ একমাত্র ক্রেতা পিডিবি, কয়লা খনিকে ৯১ থেকে ১০৭ ডলার করে মূল্য পরিশোধ করায় খনিটি বিপুল লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে।
বক্তারা বলেন, খোলা বাজারে যেখানে বড়পুকুরিয়ার কয়লার দাম ২০০ ডলারের বেশি, সেখানে অযৌক্তিকভাবে দাম কমিয়ে খনিকে লোকসান দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকার দুর্বলতা আড়াল করতেই খনি বন্ধের প্রক্রিয়া জোরদার করা হচ্ছে। এর ফলে খনি বন্ধ হলে এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ২০-২৫ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শ্রমিকনেতারা কয়লা খনিকে লাভজনক ও সচল রাখতে এবং শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে ৬ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে রয়েছে. পিডিবিতে ৯১-১০৭ ডলারে কয়লা বিক্রয়ের পরিবর্তে লোকাল মার্কেটে ২০০ ডলারের বেশি দামে বিক্রয় সম্ভব। তাই বড়পুকুরিয়ার কয়লা লোকাল মার্কেটে বিক্রয় করা হোক। লোকাল মার্কেটে কয়লা বিক্রয় মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পিডিবির কয়লার মূল্যে নির্ধারণ করতে হবে। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির বোর্ড বিদ্যুতের লোক দিয়ে চালানো যাবে না। অযৌক্তিক ভাবে কয়লার দাম কমিয়ে খনি বন্ধের চক্রান্ত বন্ধ হোক। খনি আমাদের রুটি রুজি, তাই কয়লার দাম নির্ধারণে আমাদেরও মতামত নিতে হবে। নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, এই খনি আদমজি পাট কলের মতো লস প্রজেক্ট হবে না।
দাবি আদায় না হলে আগামীতে রাজপথ-রেলপথ অবরোধসহ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন শ্রমিকনেতারা।

ফারুক হোসেন, দিনাজপুর