শাবিপ্রবির ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যতম বিদ্যাপিঠ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও এটি। সিলেট জেলা শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ বিদ্যাপিঠটির আজ (১ ফাল্গুন) ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
১৯৯১ সালে মাত্র তিনটি বিভাগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীয় সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৩জন শিক্ষক ও ২০৫ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ১৯৯১ সালে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে ইংরেজি ১৩ ফেব্রুয়ারি এবং বাংলা ১ ফাল্গুন বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা হতো। কিন্তু বর্ষপঞ্জির নতুন নিয়মে ১ ফাল্গুন ১৩ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ১৪ ফেব্রুয়ারি হওয়ায় বিগত পাঁচ বছর ধরে এই দিনে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা হচ্ছে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতটি অনুষদের অধীনে ২৮টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। যেখানে প্রায় ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ রয়েছে ১১টি।
দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শাবিপ্রবি ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম ও পুরো ক্যাম্পাসে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে। বিভিন্ন সময় শাবিপ্রবি দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং গবেষণা ক্ষেত্রে অর্জন করেছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুরস্কার।
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করা, এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি চালু, দেশের প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপিলিকা তৈরি, দেশীয় প্রযুক্তির ট্র্যাকিং ডিভাইস তৈরি, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বাংলা ভাষার প্রথম সফটওয়্যার ‘মঙ্গল দ্বীপ’ উদ্ভাবন, প্রথমবারের মতো দেশে চালকবিহীন বিমান ড্রোন আবিষ্কার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্পন্ন একুশে বাংলা কি-বোর্ড, প্রথম কথা বলা রোবট (রিবো), ক্যানসার নির্ণয়ের নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।
এ ছাড়াও ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিভাগগুলো দেশে প্রথমবারের মতো এখানে চালু করা হয়। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সেকেন্ড মেজর কোর্স নেওয়ার সুবিধা অর্জন করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি বিজ্ঞান গবেষণায় কৃতিত্ব অর্জনস্বরূপ স্পেনের সিমাগো রিসার্চ গ্রুপ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্কপাস থেকে প্রকাশিত দেশের ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শীর্ষস্থান অর্জন, গবেষণার মাধ্যমে ক্যানসার শনাক্তকরণ পদ্ধতি আবিষ্কার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইআইসিটি) খাতে বিশেষ অবদানে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড পুরস্কার-২০১৭’, প্রযুক্তি খাতে অবদানের জন্য ‘ডিজিটাল ক্যাম্পাস অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ অর্জনসহ দেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখছে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে মানব সমাজকে এ বার্তা দিয়ে আসছে যে, এ বিশ্ববিদ্যালয় উত্থিত হয়েছে মানব সমাজের প্রত্যাশা পূরণ ও দেশকে অধিকতর আধুনিকরণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আজ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব দরবারে সফলতার বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। এ সফলতাকে আরও সুদৃঢ় করার জন্য আমরা সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে একজন ডিস্টিংগুইস অধ্যাপক নিয়োগ দিয়েছি। আশা করছি, আগামী দুই বছরের মধ্যে শাবিপ্রবি বিশ্বের সেরা ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্থান করে নেবে।
আজ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন-২ এ জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধু চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আনন্দ শোভাযাত্রা ও মুক্তমঞ্চে কেক কাটার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।