জাবির প্রধান ফটকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মসূচি, ক্যাম্পাসজুড়ে বিক্ষোভ
 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর মিছিলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ক্যাম্পাসে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন ও কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের জাবি শাখা সভাপতি আখতারুজ্জামান সোহেলের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ‘হটাও ইউনূস বাঁচাও দেশ’ ব্যানারে ৪ জনের একটি মিছিলের ভিডিও পোস্ট করা হলে বিষয়টি সামনে আসে। মিছিলে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও জুলাই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর সরাসরি হামলায় জড়িত হিসেবে পরিচিত এনামুল ও সোহেল রানাকে চিহ্নিত করা গেছে। ছাত্রলীগের এই গোপন তৎপরতার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাত থেকেই প্রতিবাদ শুরু হয়।
ছাত্রলীগের মিছিলের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক থেকে একটি মোটরসাইকেল বিক্ষোভ শুরু করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে বিশমাইল প্রবেশ পথ দিয়ে এসে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল চত্বরে শেষ হয়।
আরও পড়ুন: আঘাত হানতে শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’
এদিকে, রাত ৯টার দিকে ছাত্রলীগের মিছিলের বিরুদ্ধে ও জুলাই আন্দোলনে জড়িত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্রুত বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্রশক্তি জাবি শাখার নেতাকর্মীরা।
রাত সোয়া ১০টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জাকসু) নেতৃত্বও বিক্ষোভ মিছিল করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও হল সংসদের নির্বাচিত ছাত্রনেতারা। এ সময় জাকসুর নেতারা জানান, বাংলাদেশে ছাত্রলীগ আর কেয়ামত পর্যন্ত ফিরে আসতে পারবে না। ছাত্রলীগের এই গোপন তৎপরতাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতারই ফল বলে আখ্যা দেন তারা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সমস্ত গোপন তৎপরতাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন জাকসুর নেতারা।
আরও পড়ুন: আজ থেকে ৪৮ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী মানববন্ধনে জাকসুর সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের মিছিল করার আস্ফালন বাইরে থেকে নয় ভেতর থেকে দেওয়া হচ্ছে। জুলাইয়ে হামলাকারী ছাত্রলীগের বিচার নিশ্চিত করতে আমাদের ঘাম ছুটাতে হয় এবং জাকসু নির্বাচন পরবর্তী হামলার সহযোগী আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের বিচার নিশ্চিত করতে আমাদের এখনও প্রশাসনের কাছে ধরনা দিতে হয়।
মাজহারুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আপনারা নিশ্চিত করুন আপনাদের সঙ্গে কি স্বৈরাচারী সরকারের প্রেম রয়েছে, নাকি পরকীয়া রয়েছে। নিষিদ্ধ সংগঠনের কোনো ছিটাফোঁটাও আমরা দেখতে চাই না। আওয়ামী লীগের দোসর প্রশাসনের মধ্যে যারা ঘাঁপটি মেরে রয়েছে, যারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ফিরিয়ে আনার গ্রাউন্ড তৈরি করছে তাদের দিবাস্বপ্ন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যারা প্রথম ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করেছিল তারা পূরণ হতে দেবে না। এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা জোরদার ও আওয়ামী দোসরদের প্রশাসন হতে অপসারণ করার আহ্বান জানান।
জাকসু সহ-সভাপতি আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের উপস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না। জুলাই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের রক্ত তাদের হাতে লেগে আছে। সেই রক্তের দাগ এখনও শুকাই নাই। মানববন্ধনে গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল তাদের ভূমিকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে তদন্ত করার আহ্বান জানান তিনি।

 
                   আকিব সুলতান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
                                                  আকিব সুলতান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
               
 
 
 
