মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি টেকনোলজির ভিপি নির্বাচিত বাংলাদেশি নাহিদ
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের জন্য এক অভূতপূর্ব গৌরব নিয়ে এলেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল নাহিদ। মালয়েশিয়ার অন্যতম শীর্ষ বিদ্যাপীঠ ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়া কুয়ালালামপুরের (ইউটিএমকেএল) ইন্টারন্যাশনালের স্টুডেন্ট সোসাইটির (আইএসএস) ২০২৫-২৬ সেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) নির্বাচিত হয়েছেন।
সংগঠনটির ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিয়মিত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে ভিপি পদে নির্বাচিত হলেন। আইএসএস ইউটিএমকেএলে এই ভিপি পদটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ দায়িত্বের স্থান হিসেবে বিবেচিত। এই নির্বাচনে মোট এক হাজার ২৪৯ জন ভোটারের মধ্যে নাহিদ এককভাবে ৬৮ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেন। সহপাঠীদের দৃঢ় আস্থা এবং ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা তাকে এই ব্যবধানে এগিয়ে রাখে।
ইউটিএমকেএলে নাহিদের নেতৃত্বযাত্রা শুরু হয় ২০২৩ সালে একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে পরবর্তী দুই সেশনে তিনি ভাইস ট্রেজারার (২০২৩-২৪) ও সেক্রেটারি (২০২৪-২৫) হিসেবে অত্যন্ত সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন।
এর আগে নাহিদ ইউটিএম জোহর ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সংগঠন আইএসএস সেন্ট্রালের ২০২২-২৩ সেশনে মাল্টিমিডিয়া এবং প্রোমোশন কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমে তার সময়নিষ্ঠা, সুপরিকল্পনা এবং অসাধারণ সমন্বয়ক্ষমতা কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়।
নাহিদ ইউটিএমকেএলে কম্পিউটার সায়েন্স ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতকে অধ্যয়নরত। প্রযুক্তি, নেতৃত্ব, কমিউনিটি ব্যবস্থাপনা এবং সামাজিক সম্পৃক্ততার সমন্বয়ে তিনি ক্যাম্পাসে একজন সক্রিয় ও সফল যুব নেতৃত্বের মুখ হয়ে উঠেছেন।
শিক্ষা জীবনের পাশাপাশি নাহিদ প্রতিষ্ঠা করেন ‘দ্য ল্যাব থার্টিন’ যা একটি উদ্ভাবনভিত্তিক যুব ও সমাজমুখী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। স্বেচ্ছাসেবী কাজেও তার সম্পৃক্ততা বিস্তৃত। তিনি ইউনিসেফ ও ইউনেস্কো সম্পর্কিত বিভিন্ন যুব কার্যক্রম, দৃষ্টিকোণ, হাসি-আপনার সুখের গোপন রহস্য, আইসেক মালয়েশিয়া এবং আইএসএসবিডিসহ একাধিক সংগঠনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন।
নাহিদ এই নির্বাচনে আন্তর্জাতিক ছাত্র অগ্রগতি জোট (আইএসএপি) প্যানেল থেকে অংশ নেন। তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বেশ কয়েকটি যৌক্তিক ও বাস্তবমুখী প্রতিশ্রুতি ছিল যার মধ্যে অন্যতম আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য দ্রুত সমাধানমূলক সহায়তা ব্যবস্থা চালু করা, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে পার্টনারশিপ বৃদ্ধি করা, একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক প্রকাশ্যতা বাড়াতে এডু-ট্যুরিজম এবং ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট চালু করা এবং আরও সংযুক্ত, সহায়ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আইএসএস কমিউনিটি গড়ে তোলা।
নির্বাচনে বিজয়ের পর আবদুল্লাহ আল নাহিদ জানান, তিনি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সমস্যাবলী সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং দ্রুত সমাধানের ওপর গুরুত্ব দিতে চান। পাশাপাশি নেতৃত্ব, ন্যায়নীতি এবং স্বচ্ছতা বজায় রেখে একটি কার্যকর ও সবার জন্য উন্মুক্ত ছাত্র সমাজ গড়ে তুলতে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ক্যাম্পাসের বাংলাদেশি কমিউনিটি এবং প্রবাসী শিক্ষার্থীরা এই নির্বাচনকে বাংলাদেশের তরুণ নেতৃত্বের একটি ইতিবাচক অগ্রযাত্রা হিসেবে দেখছে যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের মুখ উজ্জ্বল করল।

কায়সার হামিদ হান্নান, মালয়েশিয়া