কবরী ও সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে এক দুপুর...

গতকাল মধ্যরাতে নিমন্ত্রণ এলো গান শোনার। করোনার এ সময়ে কোথায় কনসার্ট? এই প্রশ্ন করার আগেই ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জানানো হলো, বরেণ্য অভিনয়শিল্পী সারাহ বেগম কবরী পরিচালিত ‘এই তুমি সেই তুমি’ সিনেমার একটি গানের রেকর্ড হবে আজ। সেখানে উপস্থিত থাকবেন সিনেমার সংগীত পরিচালক বরেণ্য সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন আর পরিচালক নিজেই।
জানিয়ে রাখা ভালো, এ সিনেমার মাধ্যমে প্রথমবার সংগীত পরিচালক হিসেবে নাম লিখিয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন। এর বাইরে বরেণ্য দুজন ব্যক্তির সঙ্গ পাওয়ার লোভ কিছুতেই সামলানো গেল না। তাই স্থান আর সময় জেনে নির্ধারিত সময়ের জন্য অপেক্ষা...
সময়ের কিছুটা আগেই নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা। এই অপেক্ষার মাঝে জানা গেল, ভেতরে গান রেকর্ডিং চলছে। উপস্থিত আছেন সাবিনা ইয়াসমিন ও সারাহ বেগম কবরী। ‘তুমি সত্যি করে বলো’ শিরোনামের গানটি রেকর্ড হচ্ছে, যেখানে কণ্ঠ দিচ্ছেন ইমরান মাহমুদুল ও সোমনুর মনির কোনাল।
অপেক্ষা আরো কিছুটা বাড়ার পর ডাক এলো স্টুডিও থেকে। এর পরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা। স্টুডিওর ভেতর থেকে ভেসে এলো কোনালের কণ্ঠে গানটির কয়েক লাইন। সেই গান শোনার মাঝে অনুমতি মিলল স্টুডিওতে ঢোকার।
ঢুকেই দেখা গেল সেখানে বসে আছেন সিনেমার নায়িকা নিশাত নাওয়ার সালওয়াকে। আর একটি সোফায় বসে আছেন চার দশকের বেশি সময়ের দুই বন্ধু সারাহ বেগম কবরী ও সাবিনা ইয়াসমিন। সেখানে বসেই কথার শুরু, প্রথমে কথা বলবেন সিনেমার পরিচালক। আজকের রেকর্ড হওয়া গানটিও তাঁর লেখা।
সেই গল্পের শুরুতে কবরী বললেন, ‘খুবই ভালো লাগছে গান শুনতে। আমার লেখা গান, মনে হচ্ছে আমিই গাই। কোনাল গাইছে, সাবিনা সুর করেছে; মনে হচ্ছে, আমি গাইলে আমার আরো ভালো লাগত। গান নিয়ে কোনো প্রত্যাশা নেই, যখন মানুষ পছন্দ করবে, প্রত্যাশার ব্যাপারটা তখন বুঝব।’
গান লেখার গল্পে কবরী জানালেন, ‘গানটা লিখতে সাবিনার পারমিশন নিয়েছি। মনের আবেগ দিয়ে, আমি যেভাবে প্রেম করেছি, যেভাবে অভিনয় করেছি, বাস্তব জীবনে যেভাবে প্রেম করি, করেছি—এগুলো সব মাথার মধ্যে নিয়ে গানটা লিখেছি।’
কবরীর কথা শোনার মাঝে জানা গেল, গানটিতে আগেই কণ্ঠ দিয়েছেন ইমরান আর আজ কণ্ঠ দিচ্ছেন কোনাল। এবার সংগীত পরিচালক হিসেবে হাতেখড়ি হওয়া সাবিনা ইয়াসমিনের মুখোমুখি হওয়ার পালা। তার আগে দুই বন্ধুর খুনসুটি চলল কিছু সময়।

এরপর প্রথম সিনেমার গান সুর করার গল্পে সাবিনা ইয়াসমিন বললেন, ‘আমার খুব আনন্দের একটা অনুভূতি। যদিও আমি প্রথমে তেমনভাবে রাজি ছিলাম না, কারণ এর আগে কোনোদিন করিনি তো। তাও আবার একটা না, একই সিনেমার চারটি গান। আর কে আমাকে বলছে, কবরী... যে আমার ছোটবেলা থাকে প্রিয় বান্ধবী। ওর কথা তো আমি ফেলতে পারব না… আমি জানি। তাও প্রথমে একটু না-না করলাম। এরপর ভাবলাম, এত গান গেয়েছি জীবনে, কিছু তো একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে, হয়তো পারব। এভাবে এগোলাম আর কি...।’
ইমরান ও কোনালের গানে কণ্ঠ দেওয়া প্রসঙ্গে সাবিনা ইয়াসমিন বললেন, ‘তারা দুজনই সেরা কণ্ঠ থেকে এসেছে, আমার ছেলেমেয়ের মতো। সে কারণে আমি আরো বেশি আনন্দিত ওদের দুজনকে দিয়ে গাওয়াচ্ছি, আমার জীবনের প্রথম ছবির গান। এটা এক্সট্রা একটা পাওয়া, একটা আনন্দও বটে।’
এরপর এনটিভি অনলাইন সাবিনা ইয়াসমিনের কাছে জানতে চেয়েছে, সিনেমার সংগীত পরিচালনায় নিয়মিত দেখা যাবে কি না? এমন প্রশ্নে এই বরেণ্য সংগীতশিল্পী বললেন, ‘আমাকে কেউ সংগীত পরিচালনার জন্য ডাকবে কি না, তা তো আমি জানি না। আমি কী করে বলব নিয়মিত... আমি তো বলতে পারব না, আমাকে একটা ছবির কাজ দিন। যদি কেউ বলে, তখন চিন্তা করব।’
নাকি শুধু বান্ধবীর জন্য করবেন? এমন প্রশ্নে সাবিনা ইয়াসমিনের উত্তর, ‘তা না, আমার বান্ধবী আমাকে দিয়ে শুরু করাল। একটা প্ল্যাটফর্মে এসে আমি দাঁড়ালাম। তার পরে আমি দেখি... আসলে নির্ভর করবে কাজটা কেমন হলো। তারপর যদি কেউ বলে, আমি চেষ্টা করব; না করব না।’
এরপর চলল ফটোশুট, সে সময়ও দেখা মিলল দুই বন্ধুর মধুর খুনসুটি। এর মাঝে কোনাল বললেন, ‘সেরা কণ্ঠের আগের রাতে যেমন নার্ভাস ছিলাম, কাল রাতেও আমি অমন নার্ভাস ছিলাম। আমি সাবিনা ম্যামকে ফোন করে বলেছি, ম্যাম আমি কিন্তু ঠিক ওই রকম নার্ভাস। আপনি কিন্তু আমাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে ধরে-ধরে আমাকে গাওয়াবেন। তো উনি বললেন, কোনো টেনশন করো না। তুমি শুধু আসো...।’