সমকামিতা পশ্চিম থেকে আমদানি হয়নি : ভবানি লি
ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষিত হলেও নিউইয়র্ক ও লস অ্যাঞ্জেলেসে মুক্তি পেয়েছে রাজ অমিত কুমারের ‘আনফ্রিডম’ ছবিটি। এ ছবির কাহিনী এগিয়েছে ভারতের দুই নারীর প্রেম এবং পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আছড়ে পড়া সন্ত্রাসবাদ নিয়ে। একে তো সমকামিতা বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে বিতর্কের ব্যারোমিটার তুঙ্গে রেখেছে, সে সঙ্গে ছবিটি বেশ সহিংস। এ ছবিতে অভিনয় করেছেন ভিক্টর ব্যানার্জি, ভবানি লি, প্রীতি গুপ্ত, সিমা রাহমানি, অংকুর বিকাল, সম্রাট চক্রবর্তী ও আদিল হুসাইন।
ছবির অন্যতম শিল্পী ভবানি লি এ বিষয়গুলোর সঙ্গে সঙ্গে ছবিটি নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন বলিস্পাইস ডটকমের সঙ্গে। এ ছবিতে তিনি সাখি টেইলর নামের একজন উভকামী নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি আমেরিকান একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টস থেকে পড়ালেখা করেছেন। কিংবদন্তি নৃত্যশিল্পী পণ্ডিত বিরজু মহারাজের কাছ থেকে নিয়েছেন কত্থক নাচের তালিম। থিয়েটার প্রোডাকশন, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং ফ্যাশন শো কোরিওগ্রাফির কাজও করেছেন নিউইয়র্কে। চমকপ্রদ এ আলাপচারিতায় চলচ্চিত্র ছাড়াও সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে হয়েছে খোলামেলা কথা।
প্রশ্ন : সাখি টেইলর হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কী ছিল? কেন?
উত্তর : এ চরিত্রটাই চ্যালেঞ্জিং। আর এটায় কাজ করায় একটা আলাদা থ্রিল তো ছিলই। সে খুবই কঠিন ধাঁচের মেয়ে। আমার নিজেরই মনে হতো যে ওকে গিয়ে বলি, ‘ভালোবেসে নিজেকে একটু হারিয়ে ফেললে কী বা এমন ক্ষতি!’ তবে ওটা হয়তো নেহাতই আমার মধ্যকার একটুখানি রোমান্টিকতা!
প্রশ্ন : এ চরিত্রে কাজ করতে গিয়ে কোন বিষয়টি উপভোগ করেছেন? কেন?
উত্তর : তাঁর (সাখি টেইলর) স্বাধীনতা, তাঁর লড়াই, তাঁর নির্ভীকতা, তাঁর শক্তি। আমি নিজেও একজন নারী হিসেবে এগুলোর সংস্পর্শে থাকা উপভোগ করি। একজন অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর ভয়, দুর্বলতা এবং অনিরাপত্তাগুলো নিয়েও ভালোমতো বোঝার দরকার ছিল। এভাবেই, মানে পুরোপুরি মিলিয়েই তাঁকে বোঝার ছিল আমার। কোন পরিস্থিতি তাঁকে একজন এলজিবিটি অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে সংগ্রামের দিকে ঠেলে দিল, সেটা বোঝা দরকার ছিল।
প্রশ্ন : ‘পরিচয়/পরিচিতি’ বিষয়টার সংজ্ঞা কীভাবে দেবেন? এটার কি আসলে সংজ্ঞা দেওয়া যায়?
উত্তর : এটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যদি কোনো কিছু আপনাকে চুপ করিয়ে দিতে চায় বা আপনার অধিকার কেড়ে নিতে চায়, তাহলে তো অবশ্যই। সবারই নিজের পরিচয় জানানোর এবং প্রকাশ করার স্বাধীনতা রয়েছে, সেটা যার কাছে যেমনই মনে হোক না কেন।
প্রশ্ন : ছবিটা (আনফ্রিডম) ভারতে নিষিদ্ধ হলো কেন? ওদের ভয়টা কী নিয়ে ছিল বলে মনে করেন?
উত্তর : এই ছবিটার মেসেজ কিন্তু ‘সত্য’ নিয়ে। দুর্ভাগ্যবশত মানুষের নিজের অধিকার প্রকাশ করাকে কারো কারো কাছে আতঙ্কদায়ক হয়ে ওঠে। এটা ভয়ংকর ব্যাপার। নিজের জীবনের জন্য কোনটা সঠিক, সেটা বাছাই করার অধিকার সবারই রয়েছে।
প্রশ্ন : আপনি একজন বাইসেক্সুয়াল নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন? এই বিষয়টা নিয়ে অনেকের, এমনকি এলজিবিটি কমিউনিটিতেও কিন্তু এক ধরনের ফোবিয়া কাজ করে। আপনার চরিত্রে এ বিষয়টির সংযুক্তির কারণে আপনি কী ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন?
উত্তর : এটা খুব সহজ ছিল না। আমি চেষ্টা করেছি একটা মাত্রা মেনে চলতে, ওই ‘ফাইন লাইন’ বজায় রাখা বলতে পারেন। একদিকে সে নিজেকে মুক্ত সত্তা মনে করে, অন্যদিকে সে এমন কারো সঙ্গে একটা সংযোগ অনুভব করে, যে নারী না পুরুষ, তাতে তার কিছু যায়-আসে না। অন্যদিকে লীলা চরিত্রটিকে সে আসলেই গভীরভাবে ভালোবাসে, যদিও বিষয়টি সে স্বীকার করতে চায় না। এ বিষয়গুলো ফুটিয়ে তোলা কঠিনই ছিল।
প্রশ্ন : গণমাধ্যমে বাইসেক্সুয়ালিটি কীভাবে দেখানো হয়? কভারেজ কি রয়েছে? এটা কি ঠিক?
উত্তর : দেখুন, আমি বেড়ে উঠেছি নিউইয়র্কে। সুতরাং আমি আমার নিজের দৃষ্টিকোণ থেকেই জবাব দেব। আমার মনে হয়, প্রত্যেক সংখ্যালঘু দলেরই কঠিন সময় পার করতে হয়। সবার গল্পই বলা উচিত। আমি খুবই গর্বিত যে আমি সাখির গল্পটা বলতে পেরেছি, কারণ সে একই সঙ্গে জটিল এবং অপরূপ এক ব্যক্তিত্ব।
প্রশ্ন : সাখির মতো চরিত্রে কাজ করতে গিয়ে অভিনেত্রী হিসেবে আপনার মাথায় কী এসেছে?
উত্তর : আগেই বলেছি যে সাখি খুবই কঠিন ধাঁচের মানুষ। আমি নিজে ব্যক্তিগত জীবনে মোটেও তেমন না! যখন আমার স্বামীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল প্রথম, আমি তখন থেকেই তাঁকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম!
প্রশ্ন : এ ছবি থেকে আপনার প্রাপ্তি...
উত্তর : একটা কৃতজ্ঞতা নিজের ভাগ্যের প্রতি যে, এমন একটা জায়গায় বড় হয়ে উঠেছি যেখানে আমি নিজেকে ঠিকঠাক প্রকাশ করতে পারব।
প্রশ্ন : ‘সমকামিতা হলো পশ্চিম থেকে আমদানি করা’—এ বিষয়টা যে বলা হয় দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে, তা নিয়ে কী বলবেন?
উত্তর : এটা একদমই ভুল কথা। সমকামিতা মোটেও পশ্চিম থেকে আমদানি করা নয়। সত্য খোঁজার চেয়ে মানুষজন অন্যকে দুষতেই ভালোবাসে। আমি এটুকুই বলব যে, এ অঞ্চলের এলজিবিটি কমিউনিটির মানুষের জন্য আমি প্রার্থনা করি যে তারা যেন তাদের লড়াইটা চালিয়ে যেতে পারে এবং স্বাধীনতা পায়। এই ছবিটা তাদের লড়াইয়ে একটি সহায়তার ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে আশা করি আমি।
প্রশ্ন : এ অঞ্চলের কোনো পরিবারে যদি ‘এ রকম’ কেউ থাকে...
উত্তর : আমি যতটা দেখেছি সেখান থেকে বলব, পরিবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে এ অঞ্চলে। এই চমৎকার গুণটা পশ্চিম হারিয়ে ফেলেছে। সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার ভালোবাসা আর বন্ধন অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কোনো কিছুর কারণেই সেটাকে ভেঙে দেওয়া উচিত নয়। মনে রাখতে হবে যে সবশেষে ভালোবাসাই সবচেয়ে বড় বিষয়।
প্রশ্ন : এ অঞ্চলের ‘এ রকম’ কারো জন্য আপনার পরামর্শ...
উত্তর : নিজের জীবন নিজের মতো করে উপভোগ করার অধিকার আপনার রয়েছে। তার জন্য শক্তি আপনারই রয়েছে। কমিউনিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ ক্ষেত্রে। সাহায্য পেতে বা করতে অবশ্যই এমন একটি কমিউনিটি খুঁজে বের করতে হবে।