ছেলেদের সঙ্গে খেলতাম, মারামারিও করতাম : শ্রদ্ধা
নামডাকহীন এক ছবি দিয়ে শুরু তাঁর। ‘তিন পাত্তি’র নাম হয়তো অনেকে ভুলেও যেতেন, কিন্তু তেমন হতে দেননি শ্রদ্ধা কাপুর। ‘আশিকি-২’-এর পর থেকে শ্রদ্ধার ক্যারিয়ার বলিউডে এগিয়ে চলেছে রেসিং কারের গতিতে। আগামীতে বক্স অফিসে উঁচু অবস্থানে থাকবেন শ্রদ্ধা, বি টাউন বিশেষজ্ঞদের এমনই মত। শক্তি কাপুরের আদরের কন্যা কীভাবে এমন প্রতাপশালী অবস্থানে দাঁড় করালেন নিজেকে? বিস্তারিত আলাপে ফিল্মফেয়ার খুঁজেছে সেই উত্তর।
প্রশ্ন : চলুন, একটু আগেকার কথা মনে করি। শক্তি কাপুরের কন্যা হিসেবে বেড়ে ওঠাটা কেমন ছিল?
উত্তর : আমি বাবার জন্য খুবই গর্ববোধ করতাম। স্কুলে সবাই আমাকে দেখত আলাদাভাবে, কারণ আমি একজন অভিনেতার সন্তান। এই বাড়তি মনোযোগ বেশ উপভোগ করতাম। আমি স্কুলে থাকতে শিক্ষার্থী কি শিক্ষক, সবার কাছেই পপুলার ছিলাম। মজাই লাগত। গরমের ছুটির সময় আমি তাঁর (শক্তি কাপুর) ছবির শুটিং সেটে যেতাম। আমি তাঁর মাধ্যমে প্রভাবিতও হয়েছি, বিশালভাবে বলতে পারেন। আর দশটা বাচ্চার মতো আমি কখনোই ছিলাম না। কেবল খুব বিচিত্র কোনো ব্যাপার ঘটলেই আমি সামান্য চমকাতাম। আমি মেয়েলি টাইপেরও ছিলাম না একেবারেই। ভাইয়ের নাইলনের চাপা প্যান্ট পরতাম, ছেলেদের সঙ্গে খেলতাম, মারামারিও করতাম। আমি খুবই শক্তপোক্ত হিসেবে গড়ে উঠতে চেয়েছি। নিজেকে রুক্ষ এবং টমবয় টাইপের ভাবতে ভালো লাগত। তার পর একটা সময়ে পরিবর্তনটা আসতে লাগল, শারীরিকভাবে। আমার দাঁতে ক্লিপ বসাতে হলো। তো আমি ভাবলাম, ঠিক আছে! আমাকে আর খরগোশের মতো দেখায় না! আমার আগের ছবিগুলো দেখলেই ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন ভালোমতো। বলতে পারেন, এর পরেই আস্তে আস্তে মেয়েলি হয়ে উঠতে লাগলাম।
প্রশ্ন : সেলিব্রেটিদের সন্তানরা কি একটু বেশিই বাড়তি নজরদারির ওপর থাকেন? আপনার বাবা কয়েকটা মামলায় জড়িয়ে গিয়েছিলেন, আপনার ভাইও। এগুলো কি আপনাকে পীড়া দেয়নি?
উত্তর : হ্যাঁ, আমরা তো বাড়তি নজরদারির ওপর থাকিই। আমরা হচ্ছি ভালো আর মন্দ বিবেচনার বড় একটা সাবজেক্ট, মানুষ আমাদের জীবন নিয়ে জানতে ও ভাবতে ভালোবাসে। আর এ জন্য আমাদের নিয়ে প্রচুর উল্টোপাল্টা ধাপ্পায় ভরা তথ্য প্রকাশ করা হয়, এমনকি এর জন্য কোনো সূত্রও ব্যবহার করা হয় না। কাজেই এ ধরনের বিতর্কিত ঘটনাগুলো যখন ঘটে, মন তো অনেক খারাপ হয়ে যায়। আমাকে নিয়েও মিথ্যা বা আংশিক তথ্য ভরে কিছু লেখা হলে খুবই খারাপ লাগে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এটা আমার মেনে নিতে হয়, কারণ এটা মেনে নেওয়াও এই পেশার একটা অংশ। লাইমলাইটে থাকতে হবে তো! একজন শিল্পী হিসেবে আমি ভালো ভালো ছবির অংশ হয়ে থাকতে চাই। যতক্ষণ মানুষ আমাকে দেখতে আসছে, একটু হাসি আর আনন্দের জন্য সেটাই সবচেয়ে বড় উপলক্ষ। অন্য বিষয়গুলোও ঠিক ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়, তবে এগুলো এত গুরুত্বপূর্ণ নয়।
প্রশ্ন : আপনি যখন ছোট ছিলেন, তখন বাবার ওপরে এসব লেখা আপনার ওপর কী রকম প্রভাব ফেলেছিল?
উত্তর : খুবই বাজে। যখন গণমাধ্যম আপনার পরিবারের মানুষকে নিয়ে এভাবে লিখবে, আপনার স্বাভাবিকভাবেই খারাপ লাগবে। আপনি যেভাবে আপনার বাবা বা মাকে দেখেন বা জানেন, তারা সেভাবে দেখে না; জানেও না।
প্রশ্ন : প্রথম কখন অভিনেত্রী হওয়ার চিন্তা করেছিলেন?
উত্তর : যখন আমি মোটামুটি বুঝদার হয়ে উঠেছি, তখন আয়নার সামনে নাচতাম। নিজেরই মজা লাগত। হোম অ্যালোনের বাচ্চাটার মতো বলতে পারেন! একটা রেকর্ডার থাকলে আমি বলতাম, ‘হাই, আমি শ্রদ্ধা কাপুর এবং আপনারা আমার গান শুনছেন এই রেডিও স্টেশনে! এর পর আপনারা শুনতে যাচ্ছেন স্পাইস গার্লসের গান!’ তার পর আমি স্পাইস গার্লসের গান বাজাতাম। তার পর বলতাম এর পরের গানটা হবে ব্যাকস্ট্রিট বয়েজের। আজব সব কাজকর্ম করতাম। সব সময়ই জানতাম যে আমি অভিনেত্রী হতে চাই...তার পর একটা সময় সবাই আমাকে বলতে লাগল যে তুমি শক্তি কাপুরের মেয়ে, তোমাকে অভিনেত্রীই হতে হবে! তখন আমি একটু বিদ্রোহী হয়ে উঠলাম! অনেকটা এ রকম যে, ‘না না, আমি ডাক্তার হবো, সাইকোলজিস্ট হবো।’ তার পর অবশ্য শামক দাভরের নাচের ক্লাসে ভর্তি হয়ে গেলাম। সিনেমা দেখা শুরু করে দিলাম। কারিশমা কাপুরকে ভীষণ ভালো লাগত। সে এত দারুণ, আকর্ষণীয় আর প্রাণবন্ত ছিল! ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ দেখে আমার মনে হলো, ওয়াও, আমি যদি এমন একটা ছবি পেতাম! বাবা আসলে ভেবেছিল যে আমি বুঝি ফিল্মে আসব না, পড়ালেখা নিয়েই থাকব! তবে আমি ঠিক করেছিলাম যে আগে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করব, তার পরে অভিনয়ে আসব। কিন্তু তাও হয়নি, কলেজ থেকে ড্রপআউট হয়ে গেলাম! আর তার পরই ‘তিন পাত্তি’র জন্য আমার জীবনের প্রথম অডিশন দিলাম।