প্রেমের গল্পে বিশ্বাস নেই নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকির
‘বজরঙ্গি ভাইজান’ ছবিতে চাঁদ নবাবের ভূমিকায় অভিনয় করে রীতমতো সবাইকে চমকে দিয়েছেন তিনি। খ্যাতি এখন তাঁর পিছু ছাড়ছে না। তবুও খ্যাতির বিড়ম্বনা নিয়ে বিন্দুমাত্র বিচলিত নন; বরং বলা ভালো, খ্যাতি নিয়ে রীতিমতো নিরুত্তাপ। বলিউড গ্ল্যামারের ঘোড়দৌড়ে না ঢুকে বরং মাটির কাছাকাছি থাকতেই পছন্দ করেন তিনি। বর্তমানে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা বলিউডি সেই অভিনেতার নাম নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি। তাঁর শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘বজরঙ্গি ভাইজান’-এর পর ২১ আগস্ট ‘মাঝি : দ্য মাউন্টেন ম্যান’ নিয়ে ফের বড় পর্দায় আসতে চলেছেন তিনি। তার আগে গত সোমবার কলকাতার মল্লিকবাজারের কাছে একটি নামী হোটেলে ছবির প্রমোশনে ঘুরে গেলেন নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি। ভিড়ে ভিড়াক্কার সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ভিড়ে মিশে ‘এনটিভি অনলাইনের’ কলকাতা প্রতিনিধিও ছিলেন তাঁকে অল্প সময়ের জন্য হলেও ধরার অপেক্ষায়। কিন্তু অপেক্ষা শেষে নেমে এলো শুধুই হতাশা। ধরাছোঁয়ার অনেকটাই দূরে থেকে গেলেন বলিউডের এই নয়া সেলেব। অবশেষে ‘খবর ৩৬৫ দিন’ পত্রিকার বদান্যতায় এবং সহযোগিতায় নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকির সাক্ষাৎকারের কিছু মুহূর্ত উঠে এলো হাতে। সঙ্গে ছবিও।
‘বজরঙ্গি ভাইজানে’ সাংবাদিক হয়েছিলেন নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি। সোমবার সেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বললেন, বেশ ভালোই লাগছে। একসময় তো আমি সাংবাদিকের কাজও করেছি। বেশ কিছুদিন আগে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের হয়ে ভারতের লোকসভা ভোট কভার করেছিলাম। পিটিসি থেকে শুরু করে, স্পটে দাঁড়িয়ে রিপোর্টিংও করতে হয়েছে। তবে পর্দায় একেক সময়, একেক রকমের চরিত্রে অভিনয় করাটাই তো আমাদের জীবনের রোমাঞ্চ। একেকটা ছবিতে একেকটা চরিত্র হয়ে আমরা আসি। কখনো চাঁদ নবাব, কখনো খান, কখনো বা শেখ।
জীবনে সাফল্য উপভোগের প্রশ্নে নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকির চটজলদি জবাব, ‘আমি তো এখনো মনে করি না আমি সফল। তবে কাজের প্রতি আমার প্যাশন আছে, তাই দর্শককে এমন কিছু দিতে চাই, যা অবশ্যই প্রত্যাশার গণ্ডি ছাপিয়ে যাবে।’
সাফল্যের প্রশ্নে মানুষের বদলে যাওয়া-না যাওয়া নিয়ে নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকির দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই সোজাসাপ্টা। বললেন, মানুষ তো একই থেকে যায়। শুধু মানুষের দেখার ভঙ্গিটা বদলে যায়।
নওয়াজুদ্দিন তাঁর মুক্তি হওয়ার পথে ‘মাঝি : দ্য মাউন্টেন ম্যান’ ছবির দশরথ মাঝির চরিত্রে অভিনয় করা নিয়ে বলেন, দশরথ মাঝির চরিত্রে অভিনয় করাটা কঠিন তো ছিলই। কারণ, যে দশরথ মাঝি তার জীবনের ২২টি বছর ধরে এক অসাধ্য সাধন করেছে, তার মনের শক্তি কতটা ভাবুন তো? আসলে একজন অভিনেতা তার নিজের জীবন থেকেই অনেকটা প্রেরণা পায়। আমি ১০ বছর ধরে শুধু স্ট্রাগল করেছি। তবে মনের জোর ছিল। আশা ছিল যে একদিন কিছু হবে। সেটাই বলছি, স্ট্রাগল যেমন কাজে আসে, সে সঙ্গে স্ট্রাগল করার সময়টাকেও মনে রাখতে হবে। এই ছবির চরিত্র দশরথও ২২ বছর ধরে স্ট্রাগল করেছে। তার সঙ্গে খানিকটা হলেও তো আমার জীবনের মিল খুঁজে পেয়েছি আমি। জীবনে অনেক রকম অভিজ্ঞতা হয় মানুষের—খারাপ, ভালো, তিক্ত। তবে জীবনে খারাপ অভিজ্ঞতা মানুষকে অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়।
‘মাঝি : দ্য মাউন্টেন ম্যান’ ছবিতে তো অবিশ্বাস্য প্রেমের কাহিনী রয়েছে। প্রেম বা ভালোবাসায় বিশ্বাস করেন কি না জিজ্ঞেস করতেই নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকির সাফ জবাব, ‘ওই ছবির মতো ওমন প্রেম আমার দ্বারা হবে না। তবে প্রেমে যে জোর আছে, এটা আমি মানি। কিন্তু প্রেমের গল্পে আমার বিশ্বাস নেই। তা ছাড়া আজকালকার যুগে যেখানে মেসেজে সম্পর্ক ভাঙাগড়া হয়, সেখানে এ ধরনের প্রেম সত্যিই আছে কি না, তাতে আমার সন্দেহ আছে।’
ছবিতে হাতুড়ি হাতে নিয়ে পাথর ভাঙতে দেখা গেছে তাঁকে। তার ওপর চরিত্রের প্রয়োজনে জরাজীর্ণ পোশাক। কিন্তু তাতেও কোনো দুঃখ নেই নওয়াজুদ্দিনের। জানালেন, চরিত্র যত কঠিন হবে, অভিনেতার জন্য সেই চরিত্র ফুটিয়ে তোলা ততই কঠিন হবে। তাই ছবিতে অভিনয়ের সময় কষ্টের কথা বা দুঃখের কথা মাথাতেই আসেনি।
‘বজরঙ্গি ভাইজান’ ছবিতে চাঁদ নবাবের পর এবারে একেবারে মাঝির চরিত্র—দর্শক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে নওয়াজুদ্দিনের আত্মবিশ্বাসী জবাব, “আমি দর্শককে এমন কিছু দিতে চাই, যা তাঁরা আমার থেকে এখনো পাননি। আমার প্রতিটি ছবিতে আমি দর্শককে চমক দিতে চাই। আশা করছি, ‘মাঝি : দ্য মাউন্টেন ম্যান’ ছবিতে দর্শক নতুন কিছুর স্বাদ নিশ্চয়ই পাবেন।”
কোন ধরনের ছবিতে বেশি তৃপ্তি পান নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি? ব্যবসাসফল নাকি ভালো অভিনয়ের সুযোগ পাওয়া গেলে? হয়তো এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না নওয়াজুদ্দিন। তাই খানিকটা সময় নিয়ে উত্তর দিলেন, অনেক বিগ বাজেট ছবি বড় বড় স্টার থাকা সত্ত্বেও ফ্লপ করে। আবার কম বাজেটের ছবিও কিন্তু ভালো ব্যবসা করে। তবে আমার কাছে অপশন দুটো। হয় ছবি ভালো হবে, নয়তো ছবি খারাপ হবে। মাঝামাঝি কিছু হতে পারে না। মোটের ওপর, দর্শক যে ছবিতে আগ্রহ পায়, তা-ই দেখতে চায়।
এরই মধ্যে নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি ‘কিক’ ও ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ ছবিতে সালমান খানের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন ‘রইস’ সিনেমায় শাহরুখ খানের সঙ্গেও। বলিউডের দুই খানের সঙ্গে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে নওয়াজুদ্দিনের উত্তর, শাহরুখ ভীষণ আন্তরিক। আর সালমান খান তো বাচ্চাদের মতো। বলতে পারেন, একেবারে বাচ্চাই। তবে নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকির অপেক্ষা বলিউডের শাহেনশার জন্য। বললেন, অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে একটা ছবিতে অভিনয়ের প্রাথমিকভাবে কথা চলছে। উনার সঙ্গে অভিনয়ের অপেক্ষায় রয়েছি। দেখা যাক, শেষ অবধি কী হয়।