ধুঁকছে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ছবি
ভেন্টিলেশনে ধুঁকছে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ছবি। অন্যদিকে চিতা বাঘের গতি নিয়ে ক্রমাগত ছুটছে বলিউডের ছবি। বলিউডের সঙ্গে টেক্কা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলা ছবি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। ২০১৫ সালে এই পর্যন্ত বাংলায় ৪৩টি ছবির মধ্যে মাত্র সাড়ে তিনটি ছবি হিট করেছে। যার মধ্যে ১০০ শতাংশ হিটের তালিকায় রয়েছে ‘বেশ করেছি প্রেম করেছি’, ‘বেলাশেষে’ আর ‘ওপেন টু বায়োস্কোপ’। আর ৫০ শতাংশ হিটের তালিকায় রয়েছে ‘এবার শবর’ ছবিটি। অন্যদিকে, বলিউডে ৭৭টি হিন্দি ছবির মধ্যে ৩৮টি ছবিই হিট। যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে ৪০০ শতাংশ হিট ‘বজরঙ্গি ভাইজান’, ১৫০ শতাংশ হিট ‘দৃশ্যম’ এবং ১০০ শতাংশ হিট ‘পিকু’সহ অন্য ছবিগুলো।
অভিযোগ উঠেছে, বাংলার একদল পরিচালক তাঁদের ভাবনাকে কাজে লাগাচ্ছেন বিদেশি ফিল্ম ফেষ্টিভ্যালে পুরস্কার এবং জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার আশায়। ফলে বাণিজ্যিক ছবি ব্যাপকভাবে মার খাচ্ছে বাংলায়। অপরদিকে, মুম্বাই, তেলেগু কিংবা ভারতের অন্যান্য ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রিগুলো মূল টার্গেট করেছে দর্শকদের। যে কারণে বলিউডসহ ভারতের অন্যন্য ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রির সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে গিয়ে রীতিমতো গোত্তা খেতে হচ্ছে বাংলা ছবিকে। চলতি বছর শেষ হতে এখনো তিন মাস বাকি। তাই এখন থেকেই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সবাই বছরটা কেমন কাটল সেই হিসাব করতেই ব্যস্ত। আর বাংলা ছবির কাটাছেড়া করতে গিয়ে চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞদের কাছে উঠে আসছে নানা তথ্য। অভিযোগ, বাংলা ছবির এক শ্রেণীর পরিচালকরা এত দিনে কেবল বলিউডে কে কীভাবে ছবি করে সেটাকে হিট করাচ্ছে সেদিকে মনোযোগ দিতেন এবং সেইসঙ্গে বলিউডের মতো টাকা থাকলে সব ছবি হিট করানো যায় এই ধারণায় আগোছালো চিত্রনাট্য তৈরি করে ভুলভাল বিদেশি লোকেশনে টাকা খরচ করে চলেছেন। ফলে আসল কাজটাই সেই অর্থে ফলপ্রসূ হয়নি।
বাংলা ছবির ক্ষেত্রে ব্যাপক হিট না পাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে ফিল্ম সমালোচকদের ধারণা: (১) বাংলা ছবির গল্প একঘেয়ে এবং ম্যাড়ম্যাড়ে। যার তুলনায় হিন্দি ছবির গল্পে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভ্যারিয়েশন। (২) ছবি তৈরির ক্ষেত্রে সাহসী ভাবনার নির্বাচন এবং ব্যতিক্রমী চেষ্টা হিন্দি ছবিকে এগিয়ে রাখছে। যার জ্বলন্ত উদাহরণ, ‘পিকু’, ‘বেবি’ এবং ‘দৃশ্যম’-এর মতো ছবিগুলো। (৩) বলিউডের প্রযোজকরা নির্দিষ্ট পরিচালকদের নিয়ে এক গণ্ডিতে আটকে না থেকে বিভিন্ন পরিচালককে দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট ভিত্তিক ছবি করাচ্ছেন। যা বাংলায় ঘটছে না। (৪) বলিউডের পরিচালকরা এবং প্রযোজকরা অযথা জাতীয় পুরস্কারের পিছনে ছোটেন না। তাঁদের মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে দর্শকদের মনোরঞ্জন করা এবং ব্যবসা করা। (৫) বাংলার অধিকাংশ ছবিই এখন হয়ে পড়েছে মাল্টিপ্লেক্স নির্ভর। তাই গ্রাম বাংলার দর্শকরা অনেক ছবিই দেখতে পান না। (৬) বাংলা ছবির গানের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ গানই হিট হতে পারছে না। যারফলে বলিউডের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে পদে পদে মুখ থুবড়ে পড়তে হচ্ছে বাংলা ছবিকে।