ফিল্মফেয়ারের সাক্ষাৎকার
ব্যর্থ প্রেম কোনো বোঝা নয় : কঙ্গনা
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/10/14/photo-1444795739.jpg)
তিনি কোনো ‘খান’ নন, বলিউডের কোনো জমিদারি সেলেবও নন, এমনকি আসেননি কোনো তারকা পরিবার থেকে। তার পরও কঙ্গনা রানাউত এ সময়ে বলিউডের সবচেয়ে প্রভাবশালী তারকাদের একজন। অভিনয় আর অসামান্য উপস্থিতি দিয়ে ছবির সাফল্যের পাশাপাশি পেয়েছেন সমালোচকদের তারিফ, আবার বেপরোয়া কথাবার্তায় আলোচনাতেও সব সময় থাকছেন। তবে এ নিয়ে নিশ্চয়ই কঙ্গনা বলবেন, তিনি আলোচনায় থাকার জন্য কিছু করেন না। তিনি যেমন, তেমনটাই প্রকাশ করেন। ফিল্মফেয়ারের সাথে লম্বা আলাপে নিজেকে নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন বলিউডের ‘কুইন’।
ফিল্মফেয়ার : ‘কাট্টি বাট্টি’ ছবিটি অনেকাংশে লিভ টুগেদারকে সমর্থন করে। আপনি এ নিয়ে কী বলবেন?
কঙ্গনা : যা আসলে করা ঠিক নয়, তা নিয়েই প্রথমে বলে ফেলি। মানুষজন ঝটপট ‘লিভ-ইন’ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এমনটা বেশি হয় যখন আপনি একটা ছোট শহর থেকে মেট্রো সিটিতে চলে আসবেন এবং সদ্য পাওয়া চনমনে স্বাধীনতা উপভোগ করতে চাইবেন। আমি তো আমার আঙুলই পুড়িয়ে ফেলেছিলাম! তবে আপনি কখনোই এমন মানুষের সঙ্গে চলাফেরা করতে পারবেন না, যার খারাপ বা বাজে কোনো উদ্দেশ্য আছে। এ জন্যই আমি তরুণীদের, বিশেষ করে কম বয়স্কদের সতর্ক করে দিতে চাই... মানুষটাকে চেনার জন্য তোমরা সময় নাও। মা-বাবার সাথে তাকে নিয়ে আলাপ-আলোচনা করো। যার অতীত, পরিকল্পনা, কাজের জায়গা—এসব কিছুই জানো না, চট করে তার সাথে একসাথে থাকার জন্য বেরিয়ে পড়ো না কখনোই। এমন করলে কিন্তু বড় বিপদে পড়ে যেতে পারো তুমি। সবার আগে তোমার নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এরপর আবার ভালো দিকগুলো নিয়েও বলতে হয়। ইমরানের (ইমরান খান) কিন্তু লিভ-ইন অভিজ্ঞতাটা খুবই ভালো, এটা ওর জীবনে ভালো ফলাফলও নিয়ে এসেছে। অবন্তিকার সাথে আমেরিকায় ও অনেকটা লম্বা সময় কাটিয়েছে, তারপর দুজনে বিয়ে করেছে। তবে আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তেমন ছিল না, আমি ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিলাম। ক্রিমিনাল, রেকর্ড, মানসিক সমস্যা, হিংস্র মেজাজের মানুষ... এরা খুবই ভয়ংকর হতে পারে। প্রথম দিকে এদের এই রূপটা দেখতে পাওয়া যায় না, এরা দেখায় না। কিন্তু একবার এদের সাথে চলতে শুরু করলে বের হয়ে আসাটা কঠিন। একসাথে থাকলে ব্যাপারটা তো প্রায় বিবাহিত সম্পর্কের মতোই হয়ে যায়। তখন অনেক কিছুই হতে পারে। শারীরিক নির্যাতন হতে পারে, উল্টোপাল্টা খাবার খাওয়া বা খাবারে উল্টোপাল্টা জিনিস মেশানো হতে পারে, শুনতে বেশ আজব শোনালেও আসলে কিন্তু বাস্তবে এমন ঘটতেই পারে। আর সত্যি বলতে, ব্যাপারটা মোটেই তেমন গ্ল্যামারাস, আকর্ষণীয় জীবন নয়। পরিবারকে সবসময়ই পাশে পাওয়াটা জরুরি, ভালো। আপনি আসলেই বিশ্বাস করেন, এমন মানুষদের পাশে রাখা দরকার। বিয়ের ক্ষেত্রে পরিবার সবসময় সাথে থাকে আর বিষয়টায় বৈধতাও আছে। আমি বলব, কেবল যদি আপনি কোনো মানুষের ওপর একেবারেই নিশ্চি হয়ে থাকেন এবং ভরসা করতে পারেন, তাহলেই এ ধরনের সম্পর্কে জড়াতে পারেন।
ফিল্মফেয়ার : তাহলে আদর্শ পরিস্থিতি কেমন হওয়া উচিত?
কঙ্গনা : যখন দুজন মানুষ একে অন্যের বিষয়ে সিরিয়াস হয়, একে অন্যের ব্যাকগ্রাউন্ড সম্বন্ধে ঠিকঠাক জানে; তখন তারা একসাথে থাকতে পারে। এখানে কোনো ধরনের গোপন এজেন্ডা থাকা চলবে না। কেউ হয়তো বা কেবল কিছু খরচ বাঁচানো বা বা অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া শেয়ার করার জন্য বলবে, কেবল আপনাকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য। আপনি যদি কাণ্ডজ্ঞানহীন হয়ে থাকেন, তাহলে মানুষ ঠিকই এর সুযোগ নিয়ে নেবে। তারা নিজেদের মতো সময়টা উপভোগ করবে, আপনাকে ব্যবহার করবে, তারপর সময়মতো কেটে পড়বে।
ফিল্মফেয়ার : লিভ-ইন রিলেশনশিপে চলে যাওয়ার সুযোগ থাকে, এটাই তো সবচেয়ে বড় সুবিধা, তাই না?
কঙ্গনা : লিভ-ইন রিলেশনশিপের দরকারটাই কোথায়? যারা নিজেদের নিয়ে সুখী নয়, তারা সঙ্গ খোঁজে আর লিভ-ইন সম্পর্কে জড়ায়। আমি কিন্তু আমার নিজের সঙ্গেই খুশি। আপনি যখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হবেন এবং নিজেই নিজের দেখভাল করতে পারবেন; তখন আপনি একেবারেই মুক্ত, স্বাধীন আর নিজের ইচ্ছেমত চলতে ফিরতে পারবেন। আমার জন্য কিন্তু জীবনের পরবর্তী ধাপ মোটেও লিভ-ইন নয়, হয়তোবা সেটা হবে বিয়ে। পুরুষরা তাদের স্ত্রী এবং প্রেমিকাকে ভিন্ন ভিন্ন নজরে দেখে। লিভ-ইন সম্পর্কে চলে যাওয়ার দরজা সবসময় খোলা থাকে। ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনি কখনোই নিরাপদ বা নিশ্চিত বোধ করতে পারবেন না। এই ধারণার সাথে আমি মোটে কমফোর্টেবল নই।
ফিল্মফেয়ার : পুরুষরা কি আপনার সাফল্যে ভীত হয়ে পড়ে? এটা কি সম্পর্কের ঘরানায় পরিবর্তন আনে?
কঙ্গনা : হ্যাঁ, কারণ পুরুষরা একেবারেই বিরক্ত বা অসুখী হয়ে যেতে পারে। আমার সম্পর্কগুলো শেষ পর্যন্ত কখনোই সাফল্যে গড়ায়নি কারণ পুরুষরা আমার অবস্থান ঠিক মেনে নিতে পারেনি। আমি যখন নতুন একটা মেয়ে ছিলাম, তখন আমার সম্পর্কের বিষয়গুলো ছিল স্বপ্নের মতো। আমি ভাবতাম, আমার প্রেমিক আমাকে সমর্থন দেবে, আমার সাফল্যে গর্ববোধ করবে এই কারণে যে যখন আমি কোনো চেনামুখ ছিলাম না, তখনই সে আমাকে ভালোবেসেছিল। কিন্তু সম্পর্ক শেষ হয়েছে বিশ্রীভাবে। আমি আসলে কেমন ছিলাম বা ‘তার’ চোখে আমি আসলে কেমন ধরনের ছিলাম, এ ধরনের বাস্তবতার সাথে আমার তীব্র লড়াই করতে হয়েছে অনেকটা সময়। আমার ব্যাপারে ‘তার’ ধারণা শুনে আমি রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। এমন একটা সত্যের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটা খুব সহজ নয় কখনোই। হয় নিজের যা আছে সব তাকে দিয়ে দিতে হবে, নইলে সম্পর্ক রাখা যাবে না। বিষয়টা খুবই দুঃখজনক।
ফিল্মফেয়ার : আপনি কি একটা সম্পর্কের বোঝা আরেকটা সম্পর্কে নিয়ে যান?
কঙ্গনা : ব্যর্থ সম্পর্ক তো কোনো বোঝাই হতে পারে না। আমি সময়গুলোর ভালো অংশটুকু নিজের মধ্যে রাখি, তা একটা সম্পর্ক থেকে আরেকটা সম্পর্কে যাওয়া যতই কঠিন হোক না কেন। বলতে পারেন যে আমি একজন ভালো ‘লুজার’! আমি নিজেকে চরমভাবে হেরে যেতে দেখেছি। কিন্তু আমি এখনো নিজেকে পছন্দ করি। অনেকে ভালো, ‘ওহ্ মাই গড, তুমি নিজে নিজেকে বড্ড বেশি ভালোবাস’! কিন্তু আমি নিজেকে সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতির মধ্যে সময় পার করতে দেখেছি। আমি সত্যিকারের নায়ক, কারণ আমি যে অবস্থা থেকে জেগে উঠেছি তা অনেকটা ফিনিক্সের জন্মের মতো। আমার কোনো সম্পর্ক যদি কাজ না করে, আমি সেই পুরুষটিকে কখনোই দোষারোপ করি না বা তার পেছনে লেগে পড়ি না-এটাই আমার কাছে দারুণ ব্যাপার। আমি বরং অনেক নারীকে দেখেছি যে তারা বিষয়টা কাটিয়েই উঠতে পারে না। আমার এসব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে কেবল এক মাসের মতো সময় লাগে। এসব নারীর জন্য এটা ভাবাই অসাধ্য যে আমি যখন ভালোবাসা বা সম্পর্কের মধ্যে জড়িয়ে থাকি তখন কতটা প্যাশন আর উন্মাদনার স্বাদ নিই। কিন্তু যখন আমি সম্পর্কটা থেকে চলে আসতে বাধ্য হই, তখন একেবারে সাধু-সন্তদের মতোই চলে আসি (হাসি)! আমি মেয়েদের বলব, যদি বিশ্বাস করো যে কোনো পুরুষ তোমাকে ধ্বংস করে দিতে পারে, তাহলে তোমার আমার গল্পটা জানতে হবে। আমি বলব। আমি গল্পটা আমার হৃদয়ের মাঝেই বয়ে বেড়াই, যদিও বা এটা ট্র্যাজিক! তাতে কী, ব্যাপারটা তো দারুণ, তাই না?