আগামী শীতে বাংলাদেশে আসতে পারেন মুনমুন সেন
‘বাংলাদেশ মানেই তো আমার নিজের দেশ। বাংলাদেশের মানুষ আমার অত্যন্ত প্রিয় এবং খুব কাছের মানুষ।’ দুর্গাপূজার মহা-অষ্টমীর দিন শহর কলকাতার উপকণ্ঠে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার মধ্যমগ্রামে স্থানীয় বারাসত এলাকার তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের বাড়িতে দুর্গাপূজায় শামিল হয়ে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষ নিয়ে এমন অভিব্যক্তির কথা জানালেন অভিনেত্রী তথা সাংসদ মুনমুন সেন। পূজায় শ্রদ্ধাঞ্জলি, প্রসাদ খাওয়া আর আড্ডার ফাঁকে বাংলাদেশের এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বেশ খানিকটা সময় পার করে দিলেন তৃণমূলের এই সাংসদ ও অভিনেত্রী।
urgentPhoto
দুর্গাপূজায় শামিল হয়ে প্রথমেই বললেন, ‘এবার পূজাতে খুব বেশি কোথায় যেতে পারিনি। আসলে পূজামণ্ডপে ফিতে কাটা আমার কাছে কিন্তু পূজা নয়।’ বলেই হেসে ফেললেন তিনি। পুরোনো দিনের পূজার স্মৃতি মনে করতে গিয়ে বললেন, ‘ছোটবেলায় মায়ের (সুচিত্রা সেন) সঙ্গে গাড়ি করে পূজা দেখতে বের হতাম। তবে পূজাতে কখনো মায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে যাওয়া হয়নি।’ পূজায় মায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে না যেতে পারার একটা ক্ষীণ হতাশার কারণে হয়তো সংগোপনে আজও কিছুটা মন খারাপ হয়ে যায় এই অভিনেত্রীর। কথায় কথায় বললেন, ‘পরে অনেকবার বাংলাদেশে গিয়েছি। ঠিক পূজাতে কখনো বাংলাদেশে গিয়েছি কি না এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। তবে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়েছি। কিন্তু ঢাকেশ্বরী মন্দিরে কখনো যাওয়া হয়নি।’
অষ্টমীর সকালে ভিড়ভাট্টা, হৈ চৈ, ক্যামেরার ফ্ল্যাশের ঝলসানি এত কিছুর মধ্যেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উঠতেই অনেকটা স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়লেন মুনমুন। বাংলাদেশের এনটিভি অনলাইনের প্রতিনিধি পরিচয় পেতেই পাশে বসিয়ে একরাশ কথার ঝাঁপি খুললেন। বললেন, ‘আমার মায়ের বাড়ি বাংলাদেশের পাবনা জেলায়। রাজধানী ঢাকা থেকে অনেকটাই দূর। বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে আমার মায়ের (সুচিত্রা সেন) বাড়ি অধিগ্রহণ করেছে। মায়ের স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁরা সেখানে নানা পরিকল্পনাও নিয়েছেন। ওখানকার অনেকের সঙ্গে আমার এই মধ্যে কথা হয়েছে। তাঁরা আমাকে আমার মায়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ঘর তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছেন। আমি আমার মায়ের কিছু ছবি তাঁদের দেব বলে জানিয়েছি।’ আগামী শীত মৌসুমে বাংলাদেশ যাওয়ার একান্ত ইচ্ছা রয়েছে মুনমুন সেনের। বললেন, ‘ওখানকার অনেকেই আমাকে শীতের সময় বাংলাদেশে যেতে বলেছেন। তাই পরিকল্পনা নিয়েছি, সম্ভব হলে রিয়া-রাইমাকে (দুই মেয়ে) নিয়েও যেতে পারি।’
এদিন কথায় কথায় বাংলাদেশ নিয়ে নানা গল্প প্রসঙ্গে বললেন, ‘আমরা এখানে যা খাই বাংলাদেশ গেলে অনেক বেশি খাওয়াদাওয়া হয়ে যায়। ওখানকার মানুষজন অনেক পদের খাবার খান। শুধু মাছই তো হরেক পদের খান। ঝোল মাছ, ভাজা মাছ, কুচো মাছ। কত রকম মাছের পদ। এখানে বসে ভাবা যায় না।’
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের সিনেমায় তেমনভাবে অভিনয় করার সুযোগ না হলেও, আগে বাংলাদেশের সিনেমায় অভিনয় করেছেন বলে জানালেন মুনমুন। বললেন, ‘আমার দুই মেয়েও বাংলাদেশের সিনেমায় অভিনয় করেছে।’ আর ভবিষ্যতে সুযোগ এলে নিশ্চয়ই তিনি এবং তাঁর দুই মেয়েও বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় করতে যথেষ্ট আগ্রহী বলেও জানান মুনমুন।
এদিন একান্ত আলাপচারিতার ফাঁকে তিস্তা নিয়ে প্রশ্ন করতেই একরাশ হেসে মুনমুন বললেন, ‘দেখুন বাংলাদেশের মানুষের সবার কাছে তিস্তার কথা শুনি। বিষয়টি আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। তাই এই বিষয়ে আমার কথা বলা উচিত নয়। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, সাংস্কৃতিক লেনদেন যেভাবে বাড়ছে, আমি আশাবাদী। আর তা ছাড়া দুই দেশের ভাষা এক, ফলে আস্তে আস্তে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে ভীষণভাবে আশাবাদী আমি। আর আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ঢাকায় গিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক আলাপচারিতার সময় ইলিশের কথা বললে শেখ হাসিনা বলেছিলেন পানি ছাড়া কি ইলিশ বাঁচে? সুতরাং আমাদের আশা, দুই দেশের মধ্যে সব সমস্যা মিটে যাবে।’