মার্শাল আর্টে হলিউডের সেরা ১০ অভিনেতা
‘অ্যাকশন স্টার’দের অনেকেরই মার্শাল আর্ট কিংবা কিকবক্সিংয়ের মতো কারাতের বিভিন্ন শাখার সঙ্গে তেমন পরিচয় নেই। তবে এঁদের বাইরে হলিউডে এমন কিছু অভিনেতা রয়েছেন, যাঁরা বছরের পর বছর পরিশ্রম করে আয়ত্ত করেছেন মার্শাল আর্ট আর অর্জন করেছেন অনেক স্বীকৃতি। হলিউড তারকাদের মধ্যে মার্শাল আর্টে দক্ষ ১০ অভিনেতাকে নিয়ে এই আয়োজন।
১০. ডলফ লুন্দগ্রেন
অর্জনের তালিকাটা একটু বড়ই এই তারকার। কেমিক্যাল ইঞ্জিয়ারিংয়ে মাস্টার্স ডিগ্রির পাশাপাশি কিয়োকিউশিন কারাতেতে একটি থার্ড ড্যান ব্ল্যাক বেল্ট রয়েছে তাঁর। রজার মুর আর ক্রিস্টোফার ওয়াকেনের সঙ্গে ‘আ ভিউ টু আ কিল’ ছবিতে ছোট একটি চরিত্র দিয়ে হলিউডে আগমন তাঁর। পরবর্তী সময়ে সিলভেস্টার স্ট্যালোনেরর ‘রকি ৪’-এর বিখ্যাত আইভান ড্রাগো চরিত্রের মধ্য দিয়ে নজর কাড়েন সবার। তাঁর দৈহিক শক্তি আর সামর্থ্য নিয়ে সিলভেস্টার স্ট্যালোন এক ইন্টারভিউতে বলেন, রকি ৪-এর শুটিংয়ের সময় লুন্দগ্রেনের ঘুষি বেকায়দায় লেগে যায় তাঁর বুকে; যার ফলাফল হিসেবে চারদিন আইসিউতে থাকতে হয়েছিল তাঁকে।
৯. ওয়েসলি স্নাইপস
১২ বছর বয়স থেকেই মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন এই অভিনেতা। ইউএসএ শাওলিন টেম্পল, ব্রাজিলিয়ান জিউ-জুতসু এবং কিকবক্সিং থেকে যিনি পরবর্তীকালে শোতোকান কারাতেতে অর্জন করেন একটি ফিফথ ড্যান ব্ল্যাক বেল্ট, হ্যাপকিদোতে একটি সেকেন্ড ড্যান ব্ল্যাক বেল্ট। ‘জাঙ্গল ফিভার’ আর ‘নিউ জ্যাক সিটি’তে তাঁর অভিনয় নৈপুণ্যের পাশাপাশি স্নাইপসের অসাধারণ এই মার্শাল আর্ট দক্ষতার জন্য ধীরে ধীরে পরিচালক এবং দর্শকদের কাছে চাহিদা বাড়তে থাকে তাঁর। ‘প্যাসেঞ্জার ৫৭’, ‘ডেমোলিশন ম্যান’, ‘দ্য ফ্যান’ এবং ‘ইউএস মার্শাল’-এর মতো ছবিগুলো দিয়ে যিনি পরবর্তীকালে হলিউডে নিজের অবস্থান জানান দিলেন আরো শক্তভাবে এবং দিনে দিনে হয়ে উঠলেন কমিক বুক কেন্দ্রিক যত বক্স অফিসকাঁপানো ছবির মূল আকর্ষণ।
৮. টেইলর লটনার
অবস্থাদৃষ্টে মনে হতে পারে যে জন্ম থেকেই মার্শাল আর্ট অনুশীলন করেন লটনার! মাত্র ছয় বছর বয়সেই কারাতে প্রশিক্ষণ শুরু হয় এই অভিনেতার, আট বছর বয়সে ব্ল্যাক বেল্ট। একবার তো আমেরিকান স্পোর্টস কারাতে অ্যাসোসিয়েশনের র্যাংকিংয়ে একটি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অধিকার করে নিয়েছিলেন। কারাতে ছাড়াও ফুটবল আর নৃত্যকলায় পারদর্শী এই অভিনেতা অনেক অল্প বয়সেই অভিনয় করেন ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অব শার্কবয় অ্যান্ড লাভা গার্ল’ ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে। পরবর্তীকালে ‘টোয়াইলাইট’ সিরিজের মাধ্যমে হলিউডে নিজের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করে নেন, যে ছবির প্রয়োজনে ভারোত্তোলনের মাধ্যমে লটনার ৩০ পাউন্ড বাড়তি পেশি গড়ে তোলেন অনেক অল্প সময়ের মধ্যেই।
৭. নেইল ব্রাউন জুনিয়র
এএমসির ‘দ্য ওয়াকিং ডেড’-এর গুইলেরমো চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা নেইল তাঁর জীবনের ২৬ বছর কাটিয়েছেন মার্শাল আর্ট আর বক্সিং ট্রেনিংয়ে। এরপর হাজির হয়েছেন মার্শাল আর্ট টিভি সিরিজ ‘ডব্লিউএমএসি মাস্টার্স’-এ। ‘ক্যাসল’, হ্যারিস ল’, ‘স্যুটস’ এবং ‘উইডস’-এর মতো নামকরা টিভি সিরিজে অভিনয়ের পাশাপাশি নেইল অভিনয় করেছেন ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’, ‘টাইগারল্যান্ড’, ‘ব্যাটল লস অ্যাঞ্জেলস’-এর মতো হাই-প্রোফাইল সিনেমাতেও। সর্বশেষ তাঁকে দেখা গেছে বহুল প্রশংসিত বায়োপিক ‘স্ট্রেইট আউটা কম্পটন’-এ ডিজে ইয়েলা চরিত্রে।
৬. মার্ক ড্যাকাস্কোস
জীবনে মাত্র একবার কোনো অ্যাকশন চরিত্রে অভিনয় করলেও মার্ক একজন দক্ষ মার্শাল আর্টিস্ট। মাত্র সাত বছর বয়স থেকেই শুরু করেছেন মার্শাল আর্ট অনুশীলন। সাত থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে জিতেছেন অনেক কুংফু এবং কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপ। মার্কের এই কারাতে দক্ষতার প্রদর্শন হয়েছে তাঁর অভিনীত অনেক ছবিতেই, যার মধ্যে ‘ড্রাইভ’ অন্যতম। পরবর্তী সময়ে ‘দ্য ক্রো’-এর সিক্যুয়েল ‘দ্য ক্রো : স্টেয়ারওয়ে টু হেভেন’-এর জনপ্রিয় এরিক ড্র্যাভেন চরিত্রেও অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি। ইদানীংকালে মার্ক অধিক পরিচিত ‘আয়রন শেফ আমেরিকা’, ‘হাওয়াই ৫-০’ আর মার্ভেল-এর ‘এজেন্ট অব শিল্ড’-এর কল্যাণে।
৫. মাইকেল জে হোয়াইট
টাইলার পেরির ‘হোয়াই ডিড আই গেট ম্যারিড’ এবং ‘হোয়াই ডিড আই গেট ম্যারিড টু’-এ অভিনয় করা এই অভিনেতা মার্শাল আর্টেও ওস্তাদ। মার্শাল আর্টের জন্য তাঁর ত্যাগের মাত্রাটাও কম নয়। এখন পর্যন্ত শোতোকান, তায়কোয়ানদো, কোবুদো, গোজু র্যু, ত্যাং স্যু, উশু এবং কিয়োকিউশিনে সব মিলিয়ে আটটি ব্ল্যাক বেল্ট আছে তাঁর। মাত্র সাত বছর বয়সে শুরু করেছিলেন প্রশিক্ষণ। ২০০১ সালের ‘এক্সিট উন্ডস’-এ তাঁর অভিনয়ের প্রায় পুরোটাতেই দেখানো হয় অনবদ্য মার্শাল আর্ট দক্ষতা।
৪. চাক নোরিস
কথিত আছে যে চাক নোরিস যখন ‘পুশ-আপ’ দেন, তখন তিনি আসলে নিজেকে ওপরের দিকে ‘পুশ’ না করে পৃথিবীকে নিচের দিকে চাপ দেন। চাক নোরিসের শক্তি নিয়ে এ রকম অসংখ্য জোকের প্রচলন থাকলেও বাস্তবের চাক নোরিসও কিন্তু কম নয়! ১৯৫৮ সালে এয়ারফোর্সে জয়েন করেন এই অভিনেতা আর তাঁর কর্মক্ষেত্র হয় কোরিয়া, যেখানে তিনি সর্বপ্রথম ‘তাং সু দো’-এর প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। কারাতের বিভিন্ন শাখা মিলিয়ে সর্বমোট পাঁচটি ব্ল্যাক বেল্টের অধিকারী চাক নোরিসের আছে নিজস্ব ‘ফাইটিং স্টাইল’, যার নাম ‘চান কুক দো’। ১৯৯০ সালে তাইকোয়ানদোতে ‘এইটথ ডিগ্রি’ ব্ল্যাক বেল্ট অর্জনের মধ্য দিয়ে চান নোরিস হন পৃথিবীর সর্বপ্রথম পশ্চিমা ব্ল্যাক বেল্টধারী ‘গ্র্যান্ড মাস্টার’। ব্রুস লির ‘ওয়ে অব ড্রাগন’-এ সফল অভিনয়ের পর ক্যারিয়ারে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি এই অভিনেতার।
৩। জন ফু
তারকা হিসেবে জন ফু এখনো উঠতি, ‘ব্যাটম্যান বিগিনস’ ছবিতে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয় করলেও পরিচালকদের নজর কেড়েছেন স্টান্ট প্রতিভা দিয়ে। জন ফু এখন অভিনয় করছেন টিভি সিরিজ ‘রাশ আওয়ার’-এ, মূল সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত এই সিরিজের কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘ডিটেক্টিভ লি’ তে অভিনয় করেছিলেন ‘জ্যাকি চ্যান’। তবে জন ফু এরই মধ্যে বহুল প্রশংসিত হয়েছেন এই চরিত্রে তাঁর অনবদ্য এবং সাবলীল অভিনয়ের জন্য। মাত্র আট বছর বয়স থেকেই কুংফু ও জুডো নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন এই অভিনেতা। আর ১৫ বছর থেকে শুরু করেন ‘উশু’ অনুশীলন।
২. জন কুস্যাক
আশির দশকের মধ্য থেকেই ‘সে অ্যানিথিং’, ‘স্ট্যান্ড বাই মি’ এবং ‘সিক্সটিন ক্যান্ডেলস’ ছবিতে অভিনয় করে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেন জন কুস্যাক। ১৯৮৯-এ ‘সে এনিথিং’ সিনেমায় নিজের চরিত্রের প্রয়োজনেই প্রথম কারাতে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। সাবেক কিকবক্সিং চ্যাম্পিয়ন বেনি উর্কিডেজের অধীনে প্রায় ২০ বছরের এই অনুশীলনের অর্জন হিসেবে কুস্যাকের রয়েছে একটি ‘লেভেল সিক্স ব্ল্যাক বেল্ট’।
১. কিয়ানু রিভস
‘পয়েন্ট ব্রেক’ আর ‘স্পিড’ এ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে রিভস নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন ‘অ্যাকশন স্টার’ হিসেবে। ১৯৯৯ সালে ‘দ্য ম্যাট্রিক্স’-এর সূত্র ধরে মার্শাল আর্টের সঙ্গে জড়িয়ে যান এই অভিনেতা। ‘জিউ জিতসু’, ‘উশু’, বক্সিং কিংবা ‘ক্র্যাভ মাগা’-এর মতো বিভিন্ন মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। বিখ্যাত স্টান্টম্যান টাইগার চেনের সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয় থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি নিজেই নির্মাণ করেন ‘ম্যান অব তাই চি’। অভিনয় আর মার্শাল আর্টের দক্ষতা মিলিয়ে কিয়ানু রিভসই এই তালিকায় সেরা তারকা।