হলিউড
অনুপ্রেরণার ১০ সিনেমা
কিছু কিছু সিনেমা আমাদের ভাবিয়ে তোলে। আমাদের জীবন নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়, শিক্ষা দেয় বাঁচার মতো বাঁচতে, প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠারও অনুপ্রেরণা দেয় সিনেমা। সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, যা হলিউড নামে পরিচিত, অনেক দিন ধরেই নানা ধরনের সিনেমা তৈরি করে উপহার দিচ্ছে দর্শকদের। সেসব সিনেমার সবই যে ভালো তা নয়। তবে অনেক সিনেমাই অনুপ্রেরণা জোগানোর মতো। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন সময়ে হলিউড থেকে মুক্তি পাওয়া ১০টি অনুপ্রেরণাদায়ক সিনেমার কথা।
দ্য পারস্যুট অব হ্যাপিনেস
পরাজয়, চ্যালেঞ্জ আর অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যাওয়া এক সেলসম্যানের গল্প ‘দ্য পারস্যুট অব হ্যাপিনেস’। স্ত্রী ছেড়ে চলে যায় তাকে, বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় হারান মাথা গোঁজার ঠিকানাটিও। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে তার মাথায় একটিই চিন্তা আর সেটা হলো নিজের সন্তানের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা। জীবনের সঙ্গে তার এই অদম্য যাত্রায় একবারও আশা ছাড়েনি, হোঁচট খেয়েছে বারংবার কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে আবারও।
আত্মবিশ্বাস, অধ্যবসায় আর নিজের স্বপ্নকে তাড়া করার তাড়না জন্ম দেয় ‘দ্য পারস্যুট অব হ্যাপিনেস’। শেখায় সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসাও।
সিনেমাটিতে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য অস্কার এবং গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন পান অভিনেতা উইল স্মিথ। উইল স্মিথের ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেন তাঁরই ছেলে জ্যাডেন স্মিথ।
গ্রাউন্ডহগ ডে
অহংকারী এক টেলিভিশন আবহাওয়াবিদের গল্প ‘গ্রাউন্ডহগ ডে’। ঘটনাক্রমে যে আটকে পড়ে প্রকৃতির এক গ্যাঁড়াকলে। তাঁর জীবন থেমে যায় একদিনেই। বারবার নিজের জীবনের ওই একটি সকালেই জেগে ওঠেন এই আবহাওয়াবিদ। প্রথম দিকে এই আটকে যাওয়া বর্তমান থেকে সুবিধা আদায় করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত নিজের জীবন আর জীবনের অগ্রাধিকার দেওয়ার মতো বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে শুরু করেন তিনি এবং শেষ পর্যন্ত খুঁজে পান জীবনের মানে।
অহংকারী রিপোর্টারের চরিত্রে বিল মারের অসাধারণ অভিনয় আর জীবন পাল্টে দেওয়ার মতো চিত্রনাট্য সিনেমাটিকে করে তুলেছে ক্ল্যাসিক।
দ্য সিক্রেট
ইতিবাচক চিন্তা আর নিজেকে আকর্ষণীয় করার সূত্র শেখায় এই নন-ফিকশন চলচ্চিত্রটি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সব চেতন আর অবচেতন চিন্তার প্রভাব পড়ে ফলাফলে আর এই চিন্তাকে কীভাবে কাজে লাগিয়ে সুন্দর একটি জীবন গড়া যায় তাই দেখানো হয় ‘দ্য সিক্রেট’ চলচ্চিত্রে। বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া এই চলচ্চিত্র উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে অপরাহ, দ্য এলেন শো, ল্যারি কিংয়ের মতো দুনিয়া মাতানো মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের।
ফরেস্ট গাম্প
‘জীবন হলো একটি চকলেটের বাক্সের মতো। তুমি জানবেও না ভেতরে কী পেতে যাচ্ছ।’
১৯৯৪ সালের এই আমেরিকান কমেডি ড্রামা ঘরানার চলচ্চিত্রটি মূলত উইন্সটন গ্রুমের উপন্যাস ‘ফরেস্ট গাম্প’-এর চলচ্চিত্রায়ন করেন রবার্ট জেমেকিস। অ্যালাবামা থেকে আসা এক অতিসাধারণ মানুষ ফরেস্ট গাম্প ছিলেন একজন প্রতিবন্ধী। কিন্তু নিজের অদম্য মানসিকতা দিয়ে এই মানুষটিই একসময় হয়ে উঠে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম একজন। চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম অনুপ্রেরণাদায়ক এই চলচ্চিত্র মুহূর্তেই পাল্টে দিতে পারে জীবন নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে।
পিসফুল ওয়ারিয়র
‘জগতে সাধারণ মুহূর্ত বলে কিছু নেই। প্রতিটা মুহূর্তেই ঘটছে অসাধারণ কিছু ভিন্নধর্মী কিছু।’
‘ওয়ে অব দ্য পিসফুল ওয়ারিয়র’ বইটির চলচ্চিত্রে রূপান্তর ‘দ্য পিসফুল ওয়ারিয়র’, যার কেন্দ্রীয় চরিত্র ড্যান, ইউসি বার্কলি পড়ুয়া ড্যানের আছে সবকিছুই। সৌন্দর্য, খ্যাতি, শখ কিংবা মেয়েদের আকর্ষণ, একজন কলেজ ছাত্রের চাওয়ার সবটুকু থাকা সত্ত্বেও সুখী নয় ড্যান। এক রাতে ড্যানের সঙ্গে দেখা হয় এক ‘আধ্যাত্মিক পরামর্শক’-এর, যার সংস্পর্শ আর নির্দেশনায় শুরু হয় ড্যানের নিজেকে চেনার যাত্রা।
বাস্তব ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত এই চলচ্চিত্র দেখলে গল্পই মনে হয়। জীবনের সহজ কিন্তু প্রয়োজনীয় সব দর্শনে ভরপুর চলচ্চিত্রের সংলাপগুলো। আমাদের ভেতরে থাকা নেতিবাচক ব্যক্তিত্বকে ছাপিয়ে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে কীভাবে আনন্দময় আর গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হয়, তাই দেখানো হয় চলচ্চিত্রটিতে।
ইনসাইড আই অ্যাম ড্যান্সিং
‘দেখ জীবন চলে যাচ্ছে। চল জীবনের সঙ্গে হাঁটি।’
হুইলচেয়ারে বসে থাকা এই চলচ্চিত্রের নায়করা অনেক বেশি স্বপ্নবাজ। ‘সেরেব্রাল প্যালসি’তে ভুগলেও শেষ হয়ে যায়নি তাদের বেঁচে থাকার আনন্দ। ছোটখাটো সব আনন্দের মধ্য দিয়ে তারা ভুলে যায় নিজেদের শারীরিক সীমাবদ্ধতার কথা, সমাজের অবহেলার কথা। হেসে, খেলে, নেচে ধরে রাখে তাদের বেঁচে থাকার আনন্দটুকু।
‘রয় ও’শেয়া ওয়াজ হেয়ার’ নামেও মুক্তি দেওয়া হয় সিনেমাটি ২০০৪ সালের এই আইরিশ কমেডি ড্রামা। পরিচালনা করেন ড্যমিয়েন ও’ডোনেল। সিনেমার কেন্দ্রীয় দুটি চরিত্রে অভিনয় করেন জেমস ম্যাকাভয় ও স্টিভেন রবার্টসন।
দ্য ইনটাচেবলস
‘বাইরে তুমি কে সেটা কোনো ব্যাপার নয় ভেতরের তুমিই হচ্ছে মূল বিষয়।’
দুর্ঘটনার স্বীকার হয়ে দুরারোগ্য এক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় এক ধনকুবের। অবশ হয়ে যায় শরীরের প্রায় পুরোটাই। নিজের সেবাশুশ্রূষার জন্য ভাড়া করে এক কৃষ্ণাঙ্গকে। সমাজের দুটি ভিন্ন অংশ থেকে আসা সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের দুজন লোক হয়ে ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে একে অপরের বন্ধু। একে অপরের সংস্পর্শে এসে পাল্টে যায় তাদের জীবন দর্শন।
২০১১ সালের জীবনীনির্ভর এই ফ্রেঞ্চ কমেডি-ড্রামার নির্মাতা অলিভিয়ে নাকাশে ও এরিক টোলেডানো। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন ফ্রাঁসোয়া ক্লুজেট আর ওমর সাই। বক্স অফিসে বিরাট সংগ্রহের পাশাপাশি সমালোচক মহলেও ব্যাপক প্রশংসিত হয় ‘দ্য ইনটাচেবলস’। .
লিটল মিস সানশাইন
‘পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ আছে। বিজয়ী ও পরাজিত। তাদের পার্থক্যটা খুবই সাধারণ, বিজয়ীরা কখনো হাল ছাড়ে না।’
টনি কোলেট আর গ্রেগ কিনেয়ারের অভিনয় করা সিনেমাটি তুলে ধরে ভঙ্গুর আর বিচিত্র এক পরিবারকে। পরিবারের কন্যা সানশাইনকে একটি সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যারা পাড়ি দেয় আরেক দেশে। কিন্তু রাস্তায় নানা প্রতিবন্ধকতা আর নিজেদের মধ্যকার বৈরী সম্পর্ক বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাদের যাত্রায়। তবুও পারিবারিক সম্পর্কের শক্তি দিয়ে একসময় সব বাধা অতিক্রম করে ঠিকই বিজয়ীর হাসি হাসে তারাই। জয়ের চেয়ে জয়ের প্রক্রিয়াটাই যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সিনেমাটির চিত্রন্যাট্য আবারো প্রমাণ করে সে সত্য।
ইনটু দ্য ওয়াইল্ড
ভালোবাসা, টাকা, বিশ্বাস, খ্যাতি কিংবা ন্যায়বিচারের পরিবর্তে আমাকে সত্য দাও।
এমোরি ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা প্রথম সারির শিক্ষার্থী ও অ্যাথলেট ক্রিস্টোফার ম্যাক্যান্ডলেস। নিজের জীবনকে আরো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার মনোবাসনা থেকে ২৪ হাজার ডলারের জমানো টাকার সাথে সাথে বিলিয়ে দেয় নিজের সর্বশেষ সম্বলটুকুও আর পাড়ি দেয় আলাস্কায়। একা একা বসবাস করতে থাকা এই অভিযাত্রী খুঁজেও পান তাঁর কাঙ্ক্ষিত আনন্দ কিন্তু ঘটনাক্রমে জীবনের শেষ মুহর্তে উপস্থিত হয়ে ক্রিস্টোফার অনুভব করে যে সব আনন্দ তখনই সার্থকতা পায় যখন তা ভাগাভাগি করা যায় অন্যদের সাথেও।
শন পেনের মেধাবী পরিচালনা আর চিত্রনাট্য সাথে এমিলি হার্শের অভিনয় সিনেমাটিকে করে তুলেছে অনন্য।
ইয়েস ম্যান
“যখনই তুমি ‘হ্যাঁ’ বলো তুমি আসলে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খোল।”
হতাশায় ভোগা এক সাধারণ ম্যানেজার সিদ্ধান্ত নেয় জীবন পাল্টানোর। নিজের যাবতীয় হতাশাকে কাটাতে একটি ছোট্ট সিদ্ধান্ত নেয় সে, সব কিছুতে ‘হ্যাঁ’ বলার এবং সবকিছু গ্রহণ করার। ধীরে ধীরে এই সিদ্ধান্ত তার জীবনকে পরিণত করে অসাধারণ এক অ্যাডভেঞ্চারে। এক বছরে পুরোপুরি নতুন এক জীবনে প্রবেশ করে সে।
জিম ক্যারির নজর কাড়া অভিনয় আর পেইটন রিডের পরিচালনায় অসাধারণ এক সিনেমা ‘ইয়েস ম্যান’।