শুরু হলো শিকড়ের গানের মহোৎসব

Looks like you've blocked notifications!

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক লোকসংগীত। কথিত আছে, এই সংগীতের অপূর্ব সুর এবং কথায় আত্মা হয় পরিশুদ্ধ। হৃদয়ের গহিন স্পর্শ করা লোকসংগীত শুধু বাংলার মানুষের জীবনধারা নয়, বরং বিভিন্ন ধর্মের প্রার্থনায়, মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবনযাপনের সঙ্গে দারুণভাবে জড়িয়ে আছে।

ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, জারি, সারি আর বাউল গানসহ হাজার বছর ধরে বাংলার শিকড়ে ছড়িয়ে থাকা গানগুলো আলোড়িত করে যাচ্ছে শ্রোতাদের প্রাণ। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সেই সুরের মুগ্ধতার ছোঁয়া।

তেমনই লোকগান নিয়ে দেশজুড়ে সাড়াজাগানো উৎসব ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব’। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে সান ইভেন্টসের আয়োজনে দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হলো তিন দিনব্যাপী ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব-২০১৬’।

সুরপিপাসী মানুষের দীর্ঘ লাইন আর কয়েক স্তরের নিরাপত্তা পেরিয়ে স্টেডিয়ামে ঢুকতেই ক্ষণিকের জন্য চোখ-ধাঁধানো বর্ণিল মঞ্চে তাকাতেই দেখা গেল ‘হেইয়া রে হেইয়া, জোরে মারো টান’, ‘বকুল ফুল বকুল ফুল, সোনা দিয়া হাত কেন বান্ধাইলি’ লোকগানের কোলাজের সঙ্গে বর্ণিল সাজে নৃত্য পরিবেশন করছেন একদল নৃত্যশিল্পী।

নৃত্যশেষে মঞ্চে আসেন বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের শিষ্য হবিগঞ্জের আবদুর রহমান বাউল। তিনি গেয়ে শোনান, ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’, ‘বন্ধে মায়া লাগাইছে’সহ বেশ কয়েকটি গান।

এরপরই মঞ্চে আসেন আয়োজকরা। এবার উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পালা। প্রধান অতিথি হিসেবে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান সান ইভেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী।

এ ছাড়া বক্তব্য দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, গ্রামীণফোনের চিফ মার্কেটিং অফিসার ইয়াসির আযমান, ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ও মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোনিয়া বশির কবির।

উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঞ্চে আসেন কুষ্টিয়ার শিল্পী টুনটুন বাউল। তিনি গেয়ে শোনান লালনের বিখ্যাত কয়েকটি গান। ‘বল স্বরূপ কোথায় আমার সাধের পেয়ারি, ‘কে বানাইলো এমন রঙমহলখানা’, ‘মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপা রে তুই মূল হারাবি’সহ কয়েকটি গান।

এরপর মঞ্চে আসেন যুক্তরাজ্যের শিল্পী সাইমন থ্যাকার্স সাভারা কান্তির সঙ্গে ভারতের রাজু দাস বাউল ও বাংলাদেশের ফরিদা ইয়াসমিন। পাশ্চাত্য আর প্রাচ্যের লোকসংগীতের অপূর্ব সুর-ছন্দের মধ্যে শেষ হয় এই পর্বটি। রাজু দাস বাউল ও ফরিদা ইয়াসমিন শোনান, ‘পার করো আমারে’, ‘তোমরা কুঞ্জ সাজাওগো আজ আমার প্রাণনাথ আসিতে পারে’,  ‘আর কি হবে মানব জনম’, ‘ধন্য ধন্য বলি তারে’সহ বেশ কয়েকটি গান।

তারপর মঞ্চে আসেন পাকিস্তানের শিল্পী জাভেদ বশির। হিন্দুস্তানি ক্লাসিক্যাল ঘরানার এ শিল্পী বাংলাদেশে অধিক পরিচিত লাভ করেন ‘ইয়ে তুনে ক্যায়া কিয়া’ গানের মধ্য দিয়ে। তাঁর নাম ঘোষণার পর আর পরিবেশনার সময় দর্শকের উচ্ছ্বাস দেখে বোঝা যায়, এ দেশেও অনেক ভক্ত জমিয়েছেন তিনি।

প্রথম দিনের শেষ আকর্ষণ নিয়ে মঞ্চে আসেন বাংলা লোকগানের সবচেয়ে পরিচিত মুখ শিল্পী মমতাজ বেগম। তিনি মঞ্চে হাজির হতেই শ্রোতাদের উচ্ছ্বাস আর করতালি জানিয়ে দেয় তাঁর প্রতি অনুরাগের কথা। সব মিলিয়ে তিন দিনের এ উৎসবের প্রথম দিনেই প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে লোকগানের এই মহোৎসব। এবারের উৎসবের বাংলাদেশসহ ছয় দেশের শতাধিক শিল্পী অংশ নিচ্ছেন।

আজ শুক্রবার ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবের দ্বিতীয় দিন। বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে এদিন পরিবেশনায় অংশ নেবেন জালাল ও লতিফ সরকার। আরো থাকছেন বাউল শফি মণ্ডল ও লাবিক কামাল গৌরব। এদিন বিশেষভাবে শ্রোতাদের নজর কাড়বেন ভারতের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কৈলাস খের।