শিল্পের আলোয় শ্রদ্ধাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গবন্ধু

বঙ্গীয় নবজাগরণে যেমন রবীন্দ্রনাথ, বাংলাদেশের নবজাগরণে তেমনি বঙ্গবন্ধুর অবদান : ড. কাজল রশীদ শাহীন

Looks like you've blocked notifications!
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮২তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে রোববার সন্ধ্যায় জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘শিল্পের আলোয় শ্রদ্ধাঞ্জলি : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোচনায় ড. কাজল রশীদ শাহীন। ছবি : শিল্পকলা একাডেমি

বিশিষ্ট সাংবাদিক, গবেষক ও সাহিত্যিক ড. কাজল রশীদ শাহীন বলেছেন– “বঙ্গীয় রেনেসাঁ বা নবজাগরণ যেমন পূর্ণতা পায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে তেমনি বাংলাদেশের রেনেসাঁর চূড়ান্ত বিকাশ ঘটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের রেনেসাঁ বা নবজাগরণের অনুপ্রেরণা, রসদ পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প কবিতা গান উপন্যাস নাটক চিত্রকলা ও প্রবন্ধ থেকে। রবীন্দ্রনাথের শিল্পের মনোভূমি, কল্পনার বাংলাদেশ, সোনার বাংলাকে বাস্তব সত্যে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন, সাংস্কৃতিক চেতনা ও দেশপ্রেমের প্রতি আমরা যদি একজন গবেষকের দৃষ্টি রাখি, তাহলে দেখব সেখানে নানাভাবেই হাজির রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।”

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে একাডেমি। ‘শোক থেকে শক্তির অভ্যুদয়, স্বপ্নপূরণের দৃঢ় প্রত্যয়’শিরোনামে মাসব্যাপী কার্যক্রম পালিত হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ২২শে শ্রাবণ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮২তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হয় ‘শিল্পের আলোয় শ্রদ্ধাঞ্জলি: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচক হিসেবে ড. কাজল রশীদ শাহীন একথা বলেন। রোববার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

ড. কাজল রশীদ বলেন, “বঙ্গীয় রেনেসাঁর যে সীমাবদ্ধতা বা অপূর্ণতা ছিল, যা চিহ্নিত করেছেন সুশোভন সরকারের মতো ঐতিহাসিক, বাংলাদেশের রেনেসাঁ সেসব কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল। বাংলাদেশের রেনেসাঁর সূত্রপাত ১৯২০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। এই বছরেই জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের রেনেসাঁ তিনটি পর্বে সম্পন্ন হয়। প্রথম পর্ব ১৯২০ থেকে ১৯৪৭ এ, দ্বিতীয় পর্ব ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৬ তে, তৃতীয় পর্ব ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ এ। বাংলাদেশের রেনেসাঁর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হল বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের অভ্যুদয় হওয়া, যার নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ কারণে বাংলাদেশের রেনেসাঁ বা নবজাগরণের ভরকেন্দ্র তিনি।”

ড. কাজল রশীদ শাহীন আরও বলেন, “বাঙালি সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য হলো, কারও অধীনস্থ না থাকা। বাঙালির অস্থি-মজ্জায় রয়েছে স্বাধীন চেতনা। বাঙালি পরাধীনতাকে কখনোই মেনে নেয়নি। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়, নীরদচন্দ্র চৌধুরী, আবুল মনসুর আহমদ দেখিয়েছেন বাঙালির এই বৈশিষ্ট্য তার প্রকৃতি-পরিবেশ, ভূমির গঠন, আবহাওয়ার ধরন, নদীর স্বভাবেও রয়েছে। বাঙালি সংস্কৃতির এই শক্তিকে পাঠ করতে পেরেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই শক্তিকে সংহত অবস্থানে নিয়ে এসে মুক্তির যুদ্ধে রূপান্তর করতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এ কারণেই সম্ভব হয়েছিল একাত্তরের যুদ্ধে বিজয় অর্জন, স্বাধীন বাংলাদেশের আত্মপ্রতিষ্ঠা।”

সভাপতির বক্তব্যে মহাপরিচালক বলেন– “কবিগুরুকে বঙ্গবন্ধু গুরুর মতো মানতেন। ‘সাত কোটি বাঙালিরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ কর নি… কবিগুরুর সেই বাণীকে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মিথ্যা প্রমাণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু ১৯৭৫ এ ১৫ আগস্ট আবারো যেন সেই বাণীই সত্য হয়ে ওঠলো।”

লিয়াকত আলী লাকী আরও বলেন, “আমাদের বন্যা খরার দেশ হিসেবে যেভাবে তিরস্কার করা হতো, এখন এখানে যত বন্যা খরা হয়, যারা আমাদের নিয়ে সমালোচনা করে তাদের দেশে এসব আরো বেশি হয়ে ওঠে। ২০৪১ সালে বিশ্বে একটা মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে আমরা গড়ে উঠবো।”

আলোচনা পর্ব শেষে শুরু হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান কবিতা নিয়ে সাজানো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল দলীয় রবীন্দ্রসংগীত। ‘আলো আমার আলো/আনন্দলোকে মঙ্গলালোক/আমরা নতুন যৌবনের দূত’এই গানগুলো পরিবেশন করে একাডেমির শিশু-কিশোর দল।

একক সংগীত ‘পথের শেষ কোথায় কি আছে’পরিবেশন করেন বুলবুল ইসলাম। সালমা আকবর পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসংগীত ‘তোমায় নতুন করে পাব/তবু মনে রেখো’। মহাদেব ঘোষের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ‘চরণ ধরিতে দিও গো আমারে’; মনীয়া সরকারের কণ্ঠে ‘গোধূলি গগনে মেঘে ঢেকেছিল তারা’; মেরী দেবনাথ এর কণ্ঠে ‘শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে’; দেবলীনা সুর এর কণ্ঠে ‘তোমার  প্রাণ মন লয়ে’; মোহনা দাসের কণ্ঠে ‘সমুখে শান্তি পারাবার’/নয়ন ছেড়ে গেলে চলে’;  আনিসুর রহমান তুহিন এর কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘আছে দুঃখ আছে মুদু’; অণিমা রায় পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসংগীত ‘আমার প্রাণের পরে চলে গেল’; সাব্রিনা খান পরিবেশন করেন ‘তোমার খোলা হাওয়া’/জীবন মরণের সীমা ছাড়ায়ে’; বিশ্ব যখন নিদ্রা মগন, গগন অন্ধকার’।

আশরাফুল আলম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ‘বাসা বাড়ি’ আবৃত্তি করেন। সবশেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত দল পরিবেশন করে রবীন্দ্রসংগীত ‘কান্না হাসির দোল দোলানো’ও ‘সমুখে শান্তি পারাবার’।