করোনাকালে বাচ্চাদের শেখান প্রাথমিক জীবনদক্ষতা

Looks like you've blocked notifications!

জীবন অনিশ্চতায় ভরা। তাই জীবনে চলার পথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আগে থেকে অনুমান করা আমাদের পক্ষে বেশ কঠিন। আর যেকোনো সময় বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে বাচ্চাদের মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হয়। তাই বাবা-মা হিসেবে আমাদের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু দক্ষতা শেখার জন্য বাচ্চাদের প্রস্তুত করে তোলাই বুদ্ধিমানের কাজ, যাতে তাদের জীবনে চ্যালেঞ্জ আসলে সেগুলো মোকাবিলা করতে পারে।

আপনি ভাবতে পারেন, বাচ্চাদের জীবনদক্ষতা শেখাতে যথেষ্ট পরিমাণ সময়, প্রচেষ্টা ও ধৈর্য ধরার সময় পাবেন। তবে আপনি কেন এ অবরুদ্ধ সময়কে ব্যবহার করছেন না? যদি আপনার বাচ্চাদের বাড়িতে পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু জীবনদক্ষতা শেখার কাজে ব্যস্ত রাখেন, তাহলে এটি তাদের মনের বিরক্তিকে কমিয়ে দেবে। করোনাভাইরাসে ঘরে অবরুদ্ধ থাকাকালে আপনার বাচ্চাকে শেখানোর জন্য এখানে কিছু প্রাথমিক জীবনদক্ষতা তুলে ধরা হলো—

সময় নির্ধারণ

প্রতিটি দিন আমাদের জন্য এক অমূল্য উপহার। প্রতিদিন আমরা নতুন করে জীবন শুরুর সুযোগ নিয়ে জেগে উঠি। তাই প্রতিটি দিনের সর্বোত্তম ব্যবহার করার জন্য কীভাবে সময় নির্ধারণ করতে হবে তা জানা জরুরি। আপনার বাচ্চা সময় বলার জন্য কীভাবে ঘড়ি দেখতে হয় তা জানে, কিন্তু প্রয়োজনীয় সময় নির্ধারণের কৌশলগুলো জানে না।

বাচ্চাকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কোনো দিন কিছু একটা শিক্ষা দিয়ে শুরু করতে পারেন, যেমন দাঁত ব্রাশ করে দিন শুরু করা। কোনো কাজ শেষ করতে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণের জন্য আপনি একটি ‘সময়’ ঠিক করতে পারেন, যেমন গোসল করা, জামা-জুতা পরা, সকালে নাশতা করা, টিভি দেখা, ঘর পরিষ্কার করা, খেলনা নিয়ে খেলা ইত্যাদি।

তবে আপনার বাচ্চার জীবনকে অতি মাত্রায় সময়সূচিনির্ভর করবেন না। বরং সময়মতো কাজ শেষ করার জন্য পুরস্কার নির্ধারণ করে আপনি এটি আনন্দদায়ক করতে পারেন। এতে সে অনেক বেশি উৎসাহ পাবে। বাচ্চাদের জন্য সময় নির্ধারণকে যত বেশি উপভোগ্য করবেন, তত বেশি তাদের সময়ের তাৎপর্য ও দক্ষতা বোঝা কার্যকর হবে।

অর্থব্যয়

বয়সের ওপর নির্ভর করে আপনি আপনার বাচ্চাকে অর্থের মূল্য ও গুরুত্ব শেখাতে পারেন। এটি তাদের পরবর্তী জীবনে কাজে লাগচে। একটি পরিষ্কার জারে অর্থ সঞ্চয় করা দুর্দান্ত শুরু হতে পারে। বাচ্চাদের পক্ষে অর্থের বাজেট শেখা আরো সহজ হবে, যদি তারা বুঝতে পারে এ পৃথিবীতে বাবা-মায়ের ভালোবাসা ব্যতীত আর কিছুই অর্থ ছাড়া হয় না।

যা-ই হোক, কোনো বাচ্চাকে অর্থের বিষয়টি বোঝার জন্য বক্তব্য খুব কমই কাজ করতে পারে। তার পরিবর্তে আপনি কিছু সহজ কৌশল প্রয়োগ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনার বাচ্চার জন্য খেলনা কেনার সময় তাকে তার নিজের সঞ্চয় থেকে কিছু নগদ ব্যয় করতে উৎসাহ দিন। বাচ্চাকে সুযোগ-ব্যয় সম্পর্কেও শিখিয়ে দিতে পারেন এমন একটি উপায়ে যাতে সে খেলনাটি পাবে, তবে এ জন্য তার প্রিয় চকলেট বক্স কেনার সুযোগটি হাতছাড়া হবে।

কোনো বাচ্চা যখন বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিনা কারণে অর্থ পায়, তখন তারা এটিকে সব সময়ের নিয়ম মনে করে নিতে পারে। সুতরাং আপনি বইয়ের তাক সাজানোর মতো ছোট ছোট কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য পুরস্কার হিসেবে অর্থ প্রদান করতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনার বাচ্চা আপনার অর্থ ব্যয়ের আচরণ পর্যবেক্ষণ করছে। কীভাবে ব্যয়বহুল না হয়ে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে অর্থ ব্যয় করা যায়, সে সম্পর্কে তাদের জন্য উদাহরণ তৈরির চেষ্টা করুন।

ঘরের কাজ করা

আপনার বাচ্চাকে ছোট বা বড় যেকোনো কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শেখাতে তাদের বাড়ির কাজে নিযুক্ত করতে পারেন। বাচ্চার বয়স বিবেচনা করে আপনি তাকে জামাকাপড় ইস্ত্রি করা, বাসন ধোয়া, ঘর পরিষ্কার করা, বোতাম সেলাই করা, সকালের নাশতা তৈরি করা, বাগান করা ইত্যাদির মতো সহজ কাজগুলো শিখিয়ে ফেলতে পারেন।

তবে কোনো কাজ করার জন্য আপনার বাচ্চাকে চাপ দেবেন না। বিকল্প উপায়ে আপনি সাহায্য করে বাচ্চাকে ঘরের কাজ শেখাতে পারেন। বাচ্চাকে তার কাজের দক্ষতার জন্য গর্বিত করতে আপনি কিছু উদ্ভাবনী কৌশল অনুসরণ করতে পারেন, যেমন চ্যালেঞ্জ দেওয়া বা কিছু প্রণোদনার প্রস্তাব।

যোগাযোগদক্ষতা

যোগাযোগদক্ষতা ব্যক্তি এবং পেশাগত দক্ষতা উভয়ই জীবনের সাফল্যের মূল। শৈশব থেকেই বাচ্চাকে ভালো যোগাযোগের দক্ষতা অর্জনের প্রশিক্ষণ দেওয়া বাবা-মায়ের ওপর নির্ভরশীল। দুর্বল আলাপচারিতার বাচ্চারা তাদের সমস্যাগুলো কাছের মানুষের সঙ্গে খুব একটা ভাগ করে নিতে পারে না এবং উদ্বেগ, হতাশা বা ক্রমবর্ধমান মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে পারে। ব্যক্তিগত যোগাযোগের দক্ষতার বিকাশকে স্বাস্থ্যকর সামাজিক-সংবেদনশীল ক্ষমতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি আপনার পরিবারের মধ্যে এবং বাইরেও কার্যকরভাবে লোকদের বুঝতে, কথোপকথন করতে ও যোগাযোগ করতে সক্ষম করবে।

বাচ্চাকে কোনো বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে কথা বলা, বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে কথা বলা এবং সমালোচনা বা উপহাস সুন্দরভাবে মোকাবিলা করার মতো কিছু জীবনদক্ষতা শেখাতে পারেন। তাকে কোনো একটি বিষয় দিয়ে তার ওপর বক্তব্য দিতে বলতে পারেন। এ জাতীয় ছোট কিন্তু উৎসাহজনক উদ্যোগ আপনার বাচ্চাকে শক্তিশালী যোগাযোগক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। সামাজিক ইঙ্গিতগুলো ধরতে পারা, অন্যদের কণ্ঠস্বর শোনা এবং সঠিক প্রতিক্রিয়া জানানো আপনার বাচ্চাকে বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করার প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের মুখোমুখি করতে যথেষ্ট স্মার্ট করে তুলতে পারে।

নিরাপত্তাদক্ষতা

কোনোক্রমে দুর্ঘটনা ঘটলেও সতর্কতা ঝুঁকির মাত্রা হ্রাস করতে পারে। এখন অবরুদ্ধ সময়ে আপনার বাচ্চাকে প্রাথমিক জীবনরক্ষার দক্ষতা সম্পর্কে শেখানোর সুযোগ রয়েছে। বাচ্চাকে তার নাম, আপনার বাড়ির ঠিকানা ও ফোন নম্বর মুখস্ত করতে সহায়তা করতে পারেন। দুর্ভাগ্যক্রমে যদি হারিয়ে যায়, তবে এগুলো বাচ্চাকে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে সহায়তা করবে। বাচ্চারা খেলার সময় প্রায়ই আহত হয়, যা ব্যথা বা রক্তক্ষয়ের কারণ হতে পারে। এ জাতীয় দুর্ঘটনা রোধ করতে আপনি বাচ্চাকে প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্স ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন।

আমাদের প্রতিদিনের জীবনে বাচ্চাদের হয়তো কিছু প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যেমন নেইল কাটার, রান্নাঘরের ছুরি, ম্যাচ, বাগানের সরঞ্জাম ইত্যাদির সঙ্গে কাজ করার প্রয়োজন হতে পারে। এ সরঞ্জামগুলোর নিরাপদ প্রয়োগ শেখা আপনার বাচ্চাকে কেবল বৈচিত্র্যময় জীবনদক্ষতায় সক্ষম করে তুলবে না, তাদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করবে। আগুন লাগলে কী করতে হবে তা শেখাতে বাড়িতে মহড়ার ব্যবস্থা করতে পারেন। বাড়ির ভেতরে উদ্বিগ্ন হওয়া বা লুকিয়ে থাকার পরিবর্তে বাচ্চাকে তাৎক্ষণিকভাবে বাইরে বেরিয়ে পড়তে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফায়ার সার্ভিসের লোকদের কল করতে শেখান।

আর কী আছে? আপনি যখন বাচ্চাকে একা বাড়িতে রাখেন, তখন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তাদের সাহায্য চাওয়ার প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। কীভাবে পুলিশ, পরিবারের সদস্য বা প্রতিবেশীদের ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে কল দিতে হবে তা শেখান।

সূত্র : ইউএনবি