টুথপেস্টের টিউবের গোপন সংকেত আসলে কী?

Looks like you've blocked notifications!
প্রতীকী ছবি

বোঝার বয়সের পর থেকেই সেলিম দাঁত মাজতে একটি ব্র্যান্ডের টুথপেস্ট ব্যবহার করেন। হঠাৎ একদিন জানতে পারলেন তাঁর টুথপেস্টটি ভালো নয়; কারণ, পেস্টের টিউবের নিচের অংশে কালো রং রয়েছে। পেস্টের নিচের রং দিয়ে নাকি গোপনে বোঝানো হয় সেটি কী কী উপাদান দিয়ে তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে ভালো টুথপেস্ট হলো যার টিউবের নিচে আছে সবুজ রং। কারণ, এই রঙের টিউবের মধ্যে থাকা টুথপেস্ট প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি। আর কী করা। সেলিম বাজার ঘুরে এমন টুথপেস্ট সংগ্রহ করলেন যার টিউবের নিচে আছে সবুজ রং।

গত কয়েক বছরে অনলাইন নিউজ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা তথ্য থেকে মানুষ অনেক নতুন কিছু জানতে পারছে। তারই একটি হলো টুথপেস্টের টিউবের নিচের রং দেখে টুথপেস্ট চেনা। সেলিমের মতো অনেকেই হয়তো টিউবের নিচের রঙের কথা জেনে টুথপেস্ট পরিবর্তন করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আসলেই কি টিউবের নিচে থাকা রঙের মধ্যে উপাদানের কথা গোপনে লেখা থাকে? যদি তা-ই হবে, তাহলে টুথপেস্টের টিউবে এর উপাদানের কথা আলাদাভাবে লেখা থাকবে কেন?

তত্ত্বের শুরুটা যেভাবে

২০১৪-১৫ সালের দিকে বাংলাদেশে ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপক প্রসার হয়। প্রতিনিয়ত মানুষ বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করে এবং মুহূর্তের মধ্যে সেটি লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। ওই সময়ই ভাইরাল হওয়া একটি তথ্য ছিল টুথপেস্টের টিউবের নিচের রং দেখে পেস্ট চেনা যায়। বিভিন্নভাবে তথ্যটি ছড়িয়ে পড়লেও এর মূল বিষয়বস্তু ছিল এমন—

টুথপেস্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে পেস্ট তৈরির আসল উপাদানগুলোর তথ্য লুকাতে চায়, এ কারণেই টুথপেস্টের গায়ে উপাদান যা-ই লেখা থাকুক না কেন ভেতরের উপাদান বোঝাতে টিউবের নিচের অংশে চারকোনা আকৃতির সাংকেতিক রং ব্যবহার করা হয়। লাল, সবুজ, নীল, কালো—মূলত এই চারটি রঙের কোনও একটি টিউবের নিচে থাকে। এগুলোর অর্থ হলো :

লাল : এই টুথপেস্ট তৈরিতে কিছু প্রাকৃতিক এবং কিছু রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার হয়েছে।

সবুজ : টুথপেস্ট তৈরিতে ব্যবহৃত সব উপাদানই প্রাকৃতিক।

নীল : কিছু উপাদান প্রাকৃতিক এবং কিছু ঔষধি (হারবাল)।

কালো : এই টুথপেস্ট তৈরিতে ব্যবহৃত সব উপাদানই রাসায়নিক।

আসলে কি তাই?

টুথপেস্টের টিউবের নিচের অংশের রং দেখে উপাদান চেনার কথা বহু বার বহু ভাবে বলা হলেও কোথাও এই যুক্তির পক্ষে জোরালো কোনও প্রমাণ দেখা যায়নি। অবশ্য টুথপেস্ট কোম্পানির নীরবতা এই তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়তে সহায়তা করেছে। তবে সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম টুথপেস্ট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কোলগেট এর প্রতিবাদ জানিয়েছে।

কোলগেট তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, রং ব্যবহার করে টুথপেস্টের উপাদান বোঝানোর বিষয়টি পুরোপুরি ভুয়া। কোনও টুথপেস্ট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এমন রঙের সংকেত ব্যবহার করে না। টুথপেস্টের উপাদান বুঝতে রং নয়, বরং প্যাকেটের গায়ে লেখা উপাদানের কথা পড়ুন।

তাহলে রং কেন ব্যবহার হয়?

খেয়াল করে দেখুন, লাল, সবুজ, নীল, কালো মূলত এই চারটি রং টিউবের নিচে থাকে। লাল, সবুজ, নীল এই তিনটি হলো মৌলিক রং, যাদের সংক্ষেপে ইংরেজিতে বলা হয় RGB। আরেকটি রং হলো কালো। যন্ত্রের মাধ্যমে এই রংগুলো সহজেই চিহ্নিত (মেশিন রিডেবল) করা যায়। টুথপেস্টের প্যাকেজিং হলো পুরোপুরি যন্ত্রনির্ভর। টুথপেস্টের টিউবের নিচের অংশের রং দেখে যন্ত্র বুঝতে পারে কোথায় চাপ দিয়ে সেটি লাগাতে হবে। বিশ্বাস না হলে নিজেই ইউটিউবে গিয়ে টুথপেস্টের টিউব তৈরির ভিডিও দেখুন।

চিপসেও একই কাণ্ড

শুধু টুথপেস্টেই নয়, চিপসের ক্ষেত্রেও একই কাণ্ড ঘটেছে। অনেক সময়  চিপসের প্যাকেটের কোনও অংশে বিভিন্ন আকৃতির (কখনও চারকোনা, আবার কখনও গোল) রঙের ব্যবহার দেখা যায়। এসব রং দিয়েও চিপস তৈরির উপাদান গোপনে বোঝানো হয় বলে তথ্য ভাইরাল হয়। টুথপেস্টের রঙের সংকেতের তত্ত্বের মতো এটিও ভুয়া। আসল বিষয় হলো, চিপসের প্যাকেটগুলো সাধারণত রঙিন হয়, যেখানে অনেক রং ব্যবহার হয়। রংগুলো ভালোভালো প্রিন্ট হচ্ছে কি না, সেটি বুঝতে প্যাকেটের এক কোনায় ব্যবহৃত রংগুলো আলাদা আলাদাভাবে সারিবদ্ধভাবে দেওয়া হয়। অনেক সময় রঙের কোডও উল্লেখ করা হয়।

পণ্যের উপাদানের কথা জানতে হলে

টুথপেস্ট, চিপসসহ যে কোনও পণ্যের প্যাকেটের কোনায় ব্যবহৃয় রং কোনও ভাবেই এর উপাদান বোঝানোর সংকেত নয়। এগুলোর বেশির ভাগই উৎপাদনের প্রয়োজনে। আর কিছু প্যাকেট প্রিন্টিংয়ের জন্য। তাই, পণ্য তৈরিতে কী কী উপাদান ব্যবহার হয়েছে জানতে কোনও ষড়যন্ত্র তত্ত্বে কান না দিয়ে প্যাকেটের গায়ে লেখা উপাদানের বিবরণ পড়ুন।

তথ্যসূত্র : টেস্টঅবহোম ডটকম, কোলগেট ডটকম, ইউটিউব ডটকম : টুথপেস্ট ম্যানুফ্যাকচারিং