আপনি নেতা নাকি কর্মী, বুঝবেন কীভাবে
নেতৃত্ব একটা শিল্প। প্রভাবিত করার শিল্প। মানুষ যাকে অসম্ভব ভাবত, বৃহত্তর মঙ্গলের জন্য সেই কাজ করতে মানুষকে প্রণোদনা দেন নেতা।
আপনার নাম কী, তা দিয়ে কিছু যায়-আসে না। আপনার বয়স বা জ্যেষ্ঠতাও কোনো ব্যাপার নয়।
মানুষ আপনাকে মানে বলেই কেবল আপনি নেতা নন। কেউ কোনো নির্দিষ্ট বেতন বা সম্মানী কাঠামোর মধ্যে ঢুকে গেলেই নেতা হয়ে যান না।
একজন সত্যিকারের নেতা অন্যদের মধ্যকার সেরাটা বের করে আনতে প্রভাবিত করেন। নেতৃত্ব আসলে সামাজিক প্রভাব, কোনো পদের অধীন ক্ষমতা নয়।
ব্যক্তি জীবনে অথবা কর্মক্ষেত্রে আপনি নেতা নাকি শুধুই কর্মী তা জানতে কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।
দ্য হাফিংটন পোস্টে প্রকাশিত এই প্রশ্নগুলো দেখলে নিজেই বুঝবেন আপনি কোন দলে-
১. দায়িত্ব গ্রহণের মানসিকতা আছে কি?
সাধারণ মানুষ নিজের কাজটুকু করেই সন্তুষ্ট থাকে। নিজের কাজ ছাড়া অন্য বিষয় নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না। কিন্তু একজন লিডার কিংবা নেতা সব কাজকে গুরুত্ব দেন এবং কোনো সুযোগ পেলে তা কাজে লাগান। দায়িত্ব গ্রহণে সদা প্রস্তুত থাকেন।
২. আপনি কি আত্মবিশ্বাসী?
সাধারণ কর্মীরা অন্যের প্রতিভা ও অর্জনগুলোকে হুমকি মনে করে। অপরদিকে একজন নেতা, এই সফলতাগুলোকে সম্পদরূপে বিবেচনা করে। তিনি এসব সাফল্যকে সবার সহযোগিতায় আরো বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেন। আদর্শ নেতা নিজের দুর্বলতা কাটাতে অন্যের সহযোগিতা নিতে কখনো লজ্জিত হন না।
৩. আপনি কি আশাবাদী?
সাধারণ কর্মীরা সামান্য বিষয়েই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু একজন দক্ষ নেতা কখনো হাল ছাড়েন না। তাঁরা সবকিছুকেই ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেন। আর সবকিছুর নিয়ে ইতিবাচক থাকলে, সমস্যার সমাধান বের হয়। নেতা হিসেবে সব সমস্যার মোকাবিলা করতে হলে ইতিবাচক হতে হবে।
৪. পরিবর্তন মানিয়ে নেওয়া দক্ষতা আছে কি?
পরিবর্তন পৃথিবীর সাধারণ নিয়ম। প্রয়োজনের তাগিদে নানা ধরনের পরিবর্তন আসাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সাধারণ কর্মীরা পরিবর্তনকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে না। অন্যদিকে একজন নেতা পরিবর্তনের ফলে সম্ভাবনা দেখতে পান।
৫. আপনার কি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আছে?
কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হলে সাধারণ কর্মীরা দোটানায় থাকেন। কিন্তু নেতা চটজলদি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হলে, আপনি নেতা হিসেবে সফলতা পাবেন না।
৬. ভুল স্বীকার করার সাহস আছে কি?
কোনো ভুল হলে সাধারণ মানুষ একে অপরকে দোষারোপ করে। কিন্তু একজন নেতা দ্রুত ভুল স্বীকার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।
৭. চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মানসিকতা আছে কি?
অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া এবং সমস্যা দেখলে ভয় পাওয়া সাধারণ মানুষের লক্ষণ। দায়িত্ব এড়িয়ে কখনো নেতা হওয়া যায় না। কোনো বাধা এলে তা মোকাবিলা করে অর্পিত দায়িত্ব সফলভাবে পালন করাই একজন নেতার গুণ।
৮. আপনি কি সৎ?
একজন নেতা কখনো গর্ব করেন না। বিপরীতে সাধারণ কর্মীরা গর্ব করে কথা বলেন। নিজের অবস্থানে সৎ থাকা এবং অনুসারীদের ভালোর জন্য সৎ চিন্তা করা একজন দক্ষ নেতার গুণ।
৯. কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান কি?
নিজের কাজটুকু করা এবং দিনশেষে বাসায় ফিরে আসা- এই কাজটি একজন সাধারণ কর্মী করে থাকেন। কিন্তু একজন নেতা কাজকে জীবনের অংশ মনে করেন।
১০. আপনার মানসিকতা কেমন?
নিজেদের প্রাপ্তি নিয়ে সাধারণ কর্মীরা মগ্ন থাকেন। কিন্তু একজন আদর্শ নেতা নিজের অবস্থান উন্নতির জন্য কাজ করেন না। তাঁরা নিঃস্বার্থ মনোভাব নিয়ে অফিস ও কর্মীদের জন্য কাজ চালিয়ে যান।
১১. আপনার চিন্তায় কী রকম?
কী করে নিজের উন্নতি হবে? এমন সব চিন্তা করেন সাধারণ কর্মীরা। কিন্তু একজন নেতা দলের সবার জন্য চিন্তা করেন। যাঁদের সহযোগিতায় নেতা হয়েছেন, তাঁদের ভালো করতে সচেষ্ট থাকেন।
১৩. শেখার আগ্রহ আছে কি?
একজন নেতা কখনো অন্যের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে ভয় পান না। নতুন জ্ঞান আহরণের জন্য সদা প্রস্তুত থাকেন। অপরদিকে, সাধারণ কর্মীরা নিজেদের জ্ঞানী প্রমাণ করতেই ব্যস্ত থাকেন।