লঙ্কার রসায়ন
বাঙালি খাবার ঝালপ্রধান। ঝাল ছাড়া যেন খাবার পানসে। আর তাই আমাদের রন্ধন সংস্কৃতিতে মিশে আছে নানা ধরনের মরিচের ব্যবহার। বাঙালি খাবারে মরিচের ব্যবহার কত পুরোনো? গবেষক গোলাম মুর্শিদ বলেছেন, এ দেশে মরিচ নিয়ে আসে পর্তুগিজরা। এই অঞ্চলে গোলমরিচ (Black pepper) ছিল কিন্তু লঙ্কা (Chili) ছিল না। পৃথিবীতে লঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে। সে অঞ্চলে ছয় হাজার বছর পূর্বেও, মরিচ ব্যবহারের পত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায়।
মরিচে ঝালের রহস্যটা কী? টক-ঝাল-মিষ্টি যাই বলুন না কেন, স্বাদ নামক জিনিসটার রসায়ন চমৎকার। প্রকৃতিতে এই যে বিচিত্রময় রং, গন্ধ কিংবা স্বাদ, এর সবই অণুর জন্য। বিভিন্ন স্বাদের জন্য বিভিন্ন প্রকার অণু দায়ী। অসংখ্য বিচিত্র অণুর জন্যই প্রকৃতিতে এত বৈচিত্র্য। লঙ্কার ঝালের জন্য প্রধানত যে অণু দায়ী, তার নাম ক্যাপসাইসিন। নামটা অত জটিল নয়। আমরা তো ক্যাপসিকাম নামক সবজির নাম শুনেছি। বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে ক্যাপসিকাম জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ক্যাপসাইসিন অণুকে লঙ্কা থেকে সরিয়ে ফেলা যায় না? তাহলে তো আর ঝাল লাগবে না! —গবেষণা করে অবশ্যই ক্যাপসাইসিনবিহীন লঙ্কার জাত আবিষ্কার করা যায়। ক্যাপসিকামে ঝাল নেই, তার কারণ এটিতে ক্যাপসাইসিন অণু নেই। বিভিন্ন মাত্রার ঝালের মরিচ যথারীতি পৃথিবীতে উদ্ভাবন করা হয়েছে। যেমন- নাগা মরিচ পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল মরিচ হিসেবে বর্তমানে স্বীকৃত। কারণ সেটিতে ক্যাপসাইসিনের পরিমাণ অনেক।
ঝাল কেন লাগে? —আমাদের জিহ্বায় স্বাদের জন্য অনেক রিসেপ্টর (receptor) থাকে। ক্যাপসাইসিন অণু যখন রিসেপ্টরের সংস্পর্শে আসে, তখনই আমাদের ঝাল অনুভব হয়। অণুর একটা বিচিত্র রূপ হলো সেটি সব প্রাণীর সঙ্গে একই আচরণ করে না। ক্যাপসাইসিন অণু মানুষের জন্য ঝাল হলেও পাখির জন্য নয়। সে জন্যই পাকা মরিচ শুকাতে দিলে কাকের দিকে খেয়াল রাখতে হয়।
রউফুল আলম : গবেষক, স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়, সুইডেন