ঈদের কেনাকাটা

পোশাকে বলিউডের ছায়া

Looks like you've blocked notifications!

পোশাকের নাম বাহুবলি, কাটাপ্পা, টিউবলাইট ইত্যাদি। কয়েক বছর ধরেই ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের বিপণিবিতানগুলোতে ভারতীয় সিরিয়াল ও চলচ্চিত্রের বিভিন্ন চরিত্রের এমন নামে পোশাক দেখা যাচ্ছে। মূলত ক্রেতাদের আকর্ষণ করতেই এমন নামকরণ করা হয়। এই নামকরণ দোকান মালিকরা নিজেরাই করে থাকেন। এ ধরনের কৌশল অবলম্বন করে এর আগে সফল হওয়ায় এবার ঈদেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। রাজধানীর নিউমার্কেট, চাঁদনী চক মার্কেট ও গাউছিয়া মার্কেট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেল। তবে শপিংমলগুলোতে পোশাকের এমন নামকরণ করতে দেখা যায়নি।

নিউমার্কেট, চাঁদনী চক আর গাউছিয়া মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানের সামনে নামসহ পোশাক সাজিয়ে রাখা হয়েছে। বাহুবলি-টু, কাটাপ্পা, টিউবলাইট, বাঘি, কাবিল, সানাম তেরি কাসাম, হুররাম, রাখি বন্ধন, ধুম-ফোর, ২২ ক্যারেট, পাংচুসহ আরো বিভিন্ন নামের পোশাক। এসব পোশাকের দাম হাঁকানো হচ্ছে আকাশছোঁয়া। এর মধ্যে বাহুবলি-টু বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার থেকে নয় হাজার টাকা পর্যন্ত। কাটাপ্পা তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। টিউবলাইট বিক্রি হচ্ছে আরো একটু বেশিতে। দাম রাখা হচ্ছে সাত হাজার থেকে আট হাজার টাকা। বাঘি তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। সানাম তেরি কাসামের সর্বনিম্ন দাম পাঁচ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ সাত হাজার টাকা। হুররাম নয় হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু। বাচ্চাদের পোশাক রাখিবন্ধন ও ধুম-ফোর দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে। এসব পোশাকের মধ্যে বাহুবলি-টু, বাঘি, রাখিবন্ধন আর হুররাম বেশি চলছে। সবই মেয়েদের পোশাক। মেয়েদের অন্যান্য পোশাকের মধ্যে রয়েছে থ্রিপিস, বুটিক করা কাপড়। থ্রিপিসের মূল্য তিন হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু। বুটিক করা জামার দাম আট হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা।

ছেলেদের পোশাকে বিশেষ কোনো নামকরণ নেই। তবে দু-একটি দোকানে ছেলেদের পাঞ্জাবিকে কাটাপ্পা নামে বিক্রি করতেও দেখা গেছে। ৮০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঞ্জাবির মূল্য রাখা হচ্ছে। জিন্সের প্যান্ট ৫০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা। টি-শার্ট আড়াইশ’ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা। শার্ট ৬০০ থেকে দুই হাজার টাকা। দোকানভেদে এসব দাম কমবেশি হতে পারে।

গত বছরের তুলনায় এ বছর কাপড়ের দাম বেশি বলে অভিযোগ করতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। এ বিষয়ে কথা হলো নিউমার্কেটে পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা সরকারি চাকরিজীবী আবদুর রহমান মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবার জিনিসপত্রের দাম অনেক। প্রতিবছর দাম বাড়ছে। এমন চলতে থাকলে আমরা মধ্যবিত্তরা কেনাকাটা করতে পারব না।’

আসলে কি পোশাকের দাম বেশি এবার? জানতে চাইলাম দোকানি ফরিদ আহমেদের কাছে। তিনি বলেন, ‘ক্রেতারা তো প্রতিবছর এমন অভিযোগ করেন। তবে এবার কিছুটা বেড়েছে পোশাকের দাম। অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে পোশাকের দাম যদি না বাড়ে, তাহলে আমরা সংসার চালাতে পারব না। দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল দিতে পারব না।’ বেচাবিক্রি কেমন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যা হচ্ছে তাতেই খুশি। ঈদের তো আরো কয়েকদিন আছে, আশা করি বাড়বে।’

এদিকে, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় বিপরীত চিত্র। প্রত্যাশা অনুযায়ী ক্রেতা নেই। এ জন্য সব দোকানির অভিযোগ ভারতের প্রতি। এ বছর ভারত ভিসা সহজ করে দেওয়ায় এ দেশের বেশিরভাগ মানুষ সেখানে কেনাকাটা করতে চলে যাচ্ছেন। শাহাবুদ্দিন নামের এক কাপড় বিক্রেতা বলেন, ‘গতকাল একটি পত্রিকায় পড়লাম যে বসুন্ধরায় ভালো বিক্রি হচ্ছে। এটা ভুল। আমাদের ক্রেতা নেই। সব চলে যাচ্ছে ভারতে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা পথে বসে যাব। সরকারের উচিত এ বিষয়ে নজর দেওয়া। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করা।’

কাপড়ের বিভিন্ন নামকরণ সম্পর্কে জানতে চাইলাম বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের আরেক দোকানি তারেক মাহমুদের কাছে। তিনি বলেন, ‘এসব হচ্ছে ব্যবসার পলিসি। বলতে পারেন এক ধরনের প্রতারণা। খুব সাধারণ মানের কাপড়ের এসব নাম দিয়ে চড়া দামে বিক্রি করছে। বসুন্ধরাতে এসব নামে কাপড় বিক্রি হয় না। এ ধরনের প্রতারণা এখানকার কাপড়ের দোকানদাররা করেন না।’

রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতান ঘুরে যতটুকু বোঝা গেল তাতে দেখা যায়, দেশি কাপড়ের চেয়ে বিদেশি কাপড়ের চাহিদা বেশি। তবে দেশি বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস থেকেও ক্রেতারা টুকটাক কেনাকাটা করছেন। সেখানেও দাম বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। তারপরও ঈদের খুশিকে বাড়িয়ে তুলতে মানুষ একটু দাম বেশি দিয়ে হলেও নিজের জন্য, পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনাকাটা করছেন।