সামনে ঈদ, মসলার বাজার ঊর্ধ্বমুখী

Looks like you've blocked notifications!

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। হাতে আর মাত্র কয়েক দিন। এরই মধ্যে অনেকে ঈদের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দিয়েছেন। বাজার থেকে আরম্ভ করে পশুর হাটে কোরবানির পশু কেনা, সবই চলছে নিজস্ব গতিতে। এদিকে কোরবানির ঈদ বলে কথা, খাবারের তালিকায় মুখরোচক খাবারের আয়োজন থাকবে না, তা কী হয়? তাই এরই মধ্যে কেউ কেউ মসলার বাজারে ভিড় করছেন। তবে ঈদ এলেই মসলার দাম হয়ে পড়ে লাগামছাড়া। রান্না করতে যেহেতু মসলা লাগবেই, তাই কোনো উপায় না দেখে সাধারণ ক্রেতারা অনেকটা বাধ্য হয়ে চড়া দামেই মসলা কিনে থাকেন। এভাবে দাম বাড়া নিয়ে ক্রেতাদের ক্ষোভ প্রতিবছরই দেখা যায়, কিন্তু সমাধান মেলে না।

এবার ঈদে মসলা বাজারের অবস্থা জানতে চলুন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, দাম বাড়ার পুরোনো নিয়মে এবারও দাম বেড়েছে। অবশ্য আমদানি শুল্ক বেশি হওয়ায় মসলার দাম বাড়তে পারে বলে আগেই ধারণা করা হচ্ছিল। এবার বাজেটে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করায় মসলায় ১০ শতাংশ শুল্ক বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে মসলার বাজারে।

এবার কোন কোন মসলার দাম বাড়ল, দেখে নেওয়া যাক। খুচরা বাজারে জিরা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা। পাইকারি বাজারে ৩৯০ টাকা। দারুচিনি ৩০০ থেকে  ৩৫০ টাকা। এলাচ এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা। আলুবোখরা ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। তেজপাতা ১৭০ টাকা। পাইকারি বাজারে তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা করে। গোলমরিচ ৬৫০ টাকা। জয়ফল রকমভেদে ৯০০ থেকে হাজার টাকা। প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা। কাঠবাদাম ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। মানভেদে এসব মসলার মূল্য কমবেশি হতে পারে।

গত বছরের তুলনায় এবার মসলার দাম প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। আবার কোনটায় ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা অনেকে বলছেন, পর্যাপ্ত মসলা আমদানি না হওয়ার কারণে দাম বাড়ছে। যদিও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক লাখ ৮২ হাজার টন মসলাজাতীয় পণ্য আমদানি করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। বাড়তি দামের  বিষয়ে কারওয়ান বাজারের খুচরা মসলা বিক্রেতা ওমর ফারুক বলেন, ‘গত বছরের থেকে এবার দাম কিছুটা বেশি। সামনে কমবে কি না বলতে পারছি না। তবে ঈদের আগে কমার সম্ভাবনা নেই।’

ওমর ফারুকের দোকানের একটু দূরেই জসিম মোল্লার দোকান। কোনো ক্রেতা নেই। তাহলে কি মসলার বাজার জমে ওঠেনি এখনো? উত্তরে জসিম মোল্লা বললেন, ‘এখনো বিক্রি তেমন আরম্ভ হয়নি। টুকটাক হচ্ছে। সবাই গরু কেনায় ব্যস্ত। ঈদের আগে আগে বিক্রি বাড়বে।’

প্রতিবছর ঈদের আগে কারওয়ান বাজার থেকে মসলা ক্রয় করেন বেসরকারি চাকরিজীবী জাহাঙ্গীর আলম। তাঁর কাছে মসলার দাম এবং এত আগে মসলা ক্রয়ের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তিনি বেশ হতাশা নিয়েই বললেন, ‘প্রতিবার ঈদ এলে মসলার দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক; বরং না বাড়াটাই অস্বাভাবিক। ঈদের কয়েক দিন আগে তো আরো বেড়ে যেতে পারে। তাই আগে থেকে মসলা কিনে রাখছি।’

এ ছাড়া মসলা কিনতে আসা অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁরা প্রত্যেকে চাইছেন ঈদে যেন মসলার দাম আর না বাড়ে। তাহলে এই প্রয়োজনীয় জিনিসটি মধ্যবিত্তের ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাবে। এ জন্য সরকারকে মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণ করার অনুরোধ করেছেন অনেকে। সাধারণ ক্রেতাদের দাবি অনুযায়ী, সরকার যদি মসলার বাজার নিয়মিত নজরদারিতে রাখে, তাহলে হয়তো মসলার দাম স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে।