ফেসবুক ব্যবহারের আদবকেতা

Looks like you've blocked notifications!

ফেসবুককে বলা হয়ে থাকে ডিজিটাল প্রোফাইল। বাস্তব জীবনের মতো ফেসবুকেও ফুটে ওঠে আপনার ব্যক্তিত্ব। তাই বাস্তব জীবনে ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে আমরা যতটা সচেতন, ফেসবুকেও ঠিক ততটাই সচেতন হওয়া উচিত। আজকাল ফেসবুকে অনেকের ব্যক্তিগত জীবনের প্রভাব লক্ষ করা যায়। কেউ কেউ সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত যা যা করেন, তার খতিয়ান দেন ওই ফেসবুকে। কিন্তু আপনি কি জানেন, আপনার এই একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়গুলো আপনারই কিছু বন্ধুর বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে? ফেসবুকের সঠিক ব্যবহার করতে হলে যে ব্যাপারগুলো জানা প্রয়োজন। পোস্ট প্লেনারের সুবাদে চলুন তা দেখা যাক এবার : 

১. প্রথমত মনে রাখুন, আপনি ফেসবুকে অনেকের সঙ্গেই বন্ধুত্ব রেখেছেন, যার মধ্যে কেউ আপনার আত্মীয়, অফিসের সহকর্মী, ব্যবসায়িক পার্টনার, স্কুলের বন্ধু, অল্প পরিচিত কিংবা একদমই অপরিচিত কেউও হয়তো এই তালিকায় রয়েছেন। কাজেই যেকোনো কিছু পোস্ট করার আগে ভাবুন, যা লিখছেন তা সবার দেখার উপযুক্ত কি না। যদি তা না হয়, তাহলে এ রকম কিছু পোস্ট করতে যাবেন না।  

২. অনেকেই আছেন, যাঁরা সঙ্গীর সঙ্গে একটু রাগারাগি বা ঝগড়া হলেই তা প্রকাশ করতে ফেসবুককেই মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন। অথচ আমরা ভুলে যাই, সম্পর্কের মধ্যে মন-কষাকষি, ঝগড়া তো হবেই। আবার তা মিটেও যাবে। তাই এটি ফলাও করে ফেসবুকে প্রচার করার প্রয়োজন নেই। এতে সঙ্গীর সঙ্গে আপনার সম্পর্কের তিক্ততা বাড়বে বৈ কমবে না। 

৩. একদমই অচেনা কাউকে বন্ধু হওয়ার অনুরোধ পাঠাবেন না। এটা খুবই সাধারণ একটি ভদ্রতা। এ ছাড়া মিউচুয়াল ফ্রেন্ড দেখলেই কাউকে বন্ধুত্বের অনুরোধ করতে যাবেন না। এতে আপনার পুরোনো বন্ধুটিও আপনাকে ভুল বুঝে দূরে সরে যেতে পারে। 

৪. নিজের ঠিকানা, ফোন নম্বর, ব্যক্তিগত তথ্য ফেসবুকে দিয়ে রাখবেন না। এতে ব্যক্তিগতভাবে নানা বিপত্তিতে পড়তে পারেন।

৫. মিনিটে মিনিটে আমি এখানে আছি, এটা করছি, ওটা খাচ্ছি, এই মুভি দেখছি—এসব পোস্ট করা থেকে বিরত থাকুন। এতে ব্যক্তিত্ব হ্রাস পায়।

৬. কমেন্টের ব্যাপারে সচেতন হবেন। অন্য কারো পাতায় এমন মন্তব্য করবেন না, যা নিয়ে তিনি বিব্রত হবেন। কারো ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাবেন না। 

৭. এমন কোনো ছবি পোস্ট করবেন না, যা আপনার ব্যক্তিত্ব নষ্ট করে। আজকাল নাক, মুখ, ঠোঁট বাঁকানো সেলফি তোলার প্রবণতা দেখা যায়। এমন ছবি পোস্ট করার আগে অন্তত দ্বিতীয়বার ভেবে দেখুন, এটা আপনার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যায় কি না। 

৮. খুব কাছের বন্ধুদের সঙ্গে মজা করা ছাড়া অন্য কাউকে পোক করতে যাবেন না। এতে বিরক্তির কারণ হবেন।

৯. কেউ আপনার বন্ধুত্বের অনুরোধ রিমুভ করে দিলে তাকে আবার বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠিয়ে নিজেকে তার কাছে হাস্যকর বানাবেন না। 

১০. ঘন ঘন কাউকে ট্যাগ করে তাঁর বিরক্তির কারণ হবেন না। মনে রাখবেন, আপনার লেখা বা ছবি বারবার গণহারে ট্যাগ করে আপনি কারো প্রিয় হতে পারবেন না। 

১১. অফিসে কাজের সময় ফেসবুক ব্যবহার না করাই ভালো। এতে আপনার মনোযোগ তো নষ্ট হবেই, আপনার সহকর্মীরাও আপনাকে নিয়ে সমালোচনা করার সুযোগ পেয়ে যাবে। এমনকি ফেসবুক ব্যবহার করার কারণেও আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন। 

১২. সারা দিন ধরে স্ট্যাটাস দিতে থাকবেন না। আপনার একটা লেখা বা ছবিকে আগে অন্যদের হজম করার সুযোগ দিন। 

১৩. আপনার ফেসবুক প্রোফাইলে ছদ্মনাম রাখবেন না। 

১৪. প্রোফাইল পিকচারে সব সময় নিজের ছবি রাখুন, নায়ক-নায়িকা বা গোলাপ ফুল মার্কা ছবি পরিত্যাগ করুন। তা না হলে আপনার পরিচিত মানুষও আপনাকে অচেনা ভাবতে পারে। এমনকি অনেকে ভুল বুঝতেও পারে। 

১৫. ফেসবুকে অনেকেই কোটেশন পোস্ট করেন। গবেষণা বলছে, ৬০% লোক এ ধরনের পোস্ট পছন্দ করেন না। তাই বাণী চিরন্তনী থেকে বিরত থাকুন। 

১৬. বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আড্ডায় কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলাপের সময় ফেসবুক খুলে বসবেন না। 

১৭. সাম্প্রতিককালে অন্যান্য নেশার মতো ফেসবুককেও নেশা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। আপনি সিগারেট খান নাকি সিগারেট আপনাকে খায়। তেমনি খেয়াল রাখুন, আপনি ফেসবুক ব্যবহার করেন নাকি ফেসবুক আপনাকে ব্যবহার করে। ফেসবুক ব্যবহার আপনার দিনলিপির একটা অংশ, কিন্তু ফেসবুকই যেন আপনার পুরো দিন খেয়ে না ফেলে—এ ব্যাপারে সচেতন হন। সারাক্ষণ আপনি ফেসবুক ব্যবহার করলে আপনি এটায় আসক্ত হয়ে যাবেন। যার কারণে আপনার ব্যক্তিগত জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মনে রাখবেন, ফেসবুক জীবনের খুব ক্ষুদ্র একটি অংশ, পুরো জীবন নয়।