নতুন পোশাক কেনার আসক্তি কমাবেন যেভাবে

Looks like you've blocked notifications!

কম দামে নতুন পোশাক কিনতে ছোট-বড় সকলেই পছন্দ করে। বেশিরভাগ সময়ই এগুলো আমরা দ্রুত ও সস্তায় কিনি এবং একবার পড়ার পরেই তা ফেলে দিই।

কিন্তু হালের এসব পোশাকই গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ, পানি ও বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। এ ছাড়াও এগুলো সৃষ্টি করে মাত্রাতিরিক্ত বর্জ্য এবং অন্যান্য দেশে এগুলো পাঠানো হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা তেমন ব্যবহার উপযোগী থাকে না।

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের পরিবেশগত অডিট কমিটি দেশটির সরকারের কাছে এই শিল্প বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। পরিবেশ এবং শ্রম বিষয়ক ১৮টি সুপারিশ করেছে তারা।

ক্ষতিকর এমন শপিং করার অভ্যাস কমিয়ে আনতে কি করা যায় এ বিষয়ে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানিয়েছে কিছু পরামর্শ। এগুলো হলো :

১. কম কেনাই বেশি কেনা

পরিবেশবাদী আন্দোলনকারী ও টলি ডলি নামে নৈতিক ফ্যাশন বিষয়ক ব্লগার টলমিয়া গ্রেগরি বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, কম কিনতে হবে। নির্দিষ্ট কোনো অনুষ্ঠান যেমন রাতে পরার কিংবা ছুটির দিনে পরার আলাদা আলাদা পোশাক কেনার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের।’

‘প্রথম দিকে মানুষের কাছে একে আক্রমণাত্মক মনে হতে পারে। কিন্তু এই চর্চা থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টা করতে হবে আমাদের। মাথায় রাখতে হবে যে এটা একটা ভালো উদ্যোগ,’ যোগ করেন তিনি।

একই কথা বলেছেন সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ফ্যাশনের উপযোগিতা, নকশা ও ফ্যাশন বিষয়ক অধ্যাপক কেট ফ্লেচার। তিনি বলেন, ‘কম পোশাক কেনা মোটেও দেহের প্রতি মারাত্মক কোনো অবিচার বা বঞ্চনা নয়।’

তিনি পরামর্শ দেন, নিজের ওয়্যারড্রোবে যেসব পোশাক রয়েছে সেগুলোই আগে লক্ষ্য করুন। কারণ, ওগুলোই আপনার জীবনমান নির্ধারণ করে। আমরা অনেক সময় এমন পোশাক কিনি যা আমাদের তুষ্ট করার পরিবর্তে অসন্তুষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’

‘কেনাকাটা করার সময় মানুষ অত্যন্ত তৃপ্তি লাভ করে। কিন্তু পরক্ষণেই ওই কেনা বস্তু বা পোশাকের ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে,’ বলেন তিনি ।

কেনাকাটা নিয়ে মানুষ কতটা সুখী এমন এক গবেষণায় দেখা যায়, মৌলিক চাহিদা মেটার পরে অন্যসব কেনা কাটা মানুষের কল্যাণে তেমন কোন কাজে আসে না।

তিনি বলেন, পোশাকের ব্র্যান্ডগুলোর অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব তথ্যকে অগ্রাহ্য করে।

‘আমরা আসলে যা দেখি তা হচ্ছে, অতিরিক্ত পাওয়ার বিষয়টি মানুষের কল্যাণের বোধকে কমিয়ে দেয়। এটা একাকিত্ব ও উচ্চ মাত্রার অবসাদ ডেকে আনে। এটা আমাদের সুখ কেড়ে নিচ্ছে এবং একাকি করে তুলছে,’ বলেন তিনি।

২. সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক কিনুন

টেকসই ফ্যাশন নিয়ে একাধিক বইয়ের লেখিকা ফ্লেচার বলেন, ‘জনপ্রিয় ফ্যাশনের শহরগুলো বা হাই স্ট্রিট কেনাকাটার জন্য খুব সুনির্দিষ্ট পরিসর দিয়ে থাকে যার মধ্য থেকেই মানুষ আগ্রহ নিয়ে কেনাকাটা করে। আপনার রুচি যদি আসলেই নতুনত্ব, আধুনিকতা, পরিবর্তন ও বৈচিত্র্যের ওপর নির্ভরশীল হয়, তাহলে আপনার ওয়্যারড্রোব আর সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক কেনাতেই আপনি এগুলো অনেক বেশি পরিমাণে খুঁজে পাবেন।’

ফ্রান্সেসকা উইলো, ইথিক্যাল ইউনিকর্ন নামে নিজের ফ্যাশন ব্লগের এই লেখিকা বলেন, ‘প্রথমেই খুঁজে দেখার জন্য সেকেন্ড হ্যান্ডই সবচেয়ে ভালো অপশন। কারণ, এটি ইতোমধ্যে অস্তিত্ব রয়েছে এমন জিনিসের উপযোগিতা বাড়িয়ে দেয়।’

তিনি বলেন, ‘অনেকেই চ্যারিটি শপগুলোকে কৌশলে এড়িয়ে যান। কারণ. তারা জানেন যে তারা আসলে কি চাইছেন। কিন্তু ডি-পপ এবং ভিনটেডের মতো সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্যের অ্যাপগুলো আপনার পোশাক নির্বাচনের জন্য আসলেই সহায়ক।’

৩. প্রাকৃতিক উপাদান বাছাই করুন

টেকসই বিষয়ক ব্লগাররা বলেন, ‘যেকোন মূল্যে’ নতুন সিনথেটিক উপাদান দিয়ে তৈরি পোশাক কেনা বন্ধ করতে হবে।

উইলো বলেন, ‘আমি হেম্প, লিনেন ও জৈব সুতি বস্ত্র, যা গ্লোবাল অরগানিক টেক্সটাইল স্ট্যান্ডার্ডের অনুমোদনের আওতায় পড়ে এমন পোশাক নিখুঁত না হলেও কিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উচিত কাপড়ের দীর্ঘস্থায়িত্ব বাড়ানো। এটা নির্ভর করে কীভাবে আপনি কাপড়ের যত্ন নিচ্ছেন তার ওপর। নির্দেশিকা দেখে এবং সে অনুযায়ী ধৌত করলে কাপড় টেকসই হয়। বেশিরভাগ মানুষই বেশি গরম পানিতে কাপড় ধুয়ে থাকেন। অথচ ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করলে জ্বালানিও কম ব্যয় করতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘আপনার কাছে থাকা সিনথেটিক কাপড় ধৌত করতে হলে তার সঙ্গে আলাদা ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে, যাতে এর থেকে বের হওয়া ক্ষুদ্র তন্তুগুলো জলজ পরিবেশকে দূষিত না করে। ব্যাগ কোন সমাধান নয়। তবে এটি আমাদের সৃষ্ট সমস্যাকে কিছুটা হলেও কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৪. যাচাই করুন

উইলো বলেন, যেকোনো ব্র্যান্ড থেকে নতুন কাপড় কেনার আগে সেগুলো কোথায় এবং কারা বানিয়েছে সে বিষয়ে মানুষের প্রশ্ন করা উচিত। ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অনুমোদন পাওয়া ব্র্যান্ডগুলোর কাপড়ই কেনা উচিত। কারণ, তারা অন্তত ন্যায্য মজুরির বিষয়টি নিশ্চিত করে। অনেক ব্লগ রয়েছে যেগুলোতে এ ধরণের ব্র্যান্ড সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে, যা আপনার সহায়ক হতে পারে।

‘অনেক ক্রেতার কাছেই ঝামেলার মনে হতে পারে। সত্যি করে বলতে গেলে ভোক্তাদের আসলেই অনেক কাজ করতে হবে এগুলো মানতে হলে। আর এজন্যই আমাদের প্রক্রিয়া এবং নীতিগত পরিবর্তন দরকার। কিন্তু নিজের থেকেই এই পরিবর্তন শুরু করাটা সহজ। দক্ষ হয়ে উঠুন, তাহলে আপনি নিজেই এই অভ্যাস তৈরি করতে পারবেন। এটি আপনাকে তৃপ্তি দেবে,’ যোগ করেন তিনি।