সুখী হতে চান? ৫টি কৌশল মেনে চলুন

Looks like you've blocked notifications!

মানুষ প্রকৃতগতভাবেই সুখান্বেষী। সুখী হওয়ার লক্ষ্যেই তার জীবনের পথচলা। তবে সুখ নিতান্তই এক প্রকার ইন্দ্রিয়ানুভূতি। মানুষের মধ্যে ভালো-মন্দ, উত্তম-অধম, উচিত-অনুচিত, আনন্দ-নিরানন্দ পরিমাপ করার একটা মানদণ্ড রয়েছে। এই মানদণ্ড ইন্দিয়ানুভূতি সৃষ্টি করে।

প্রত্যেকেই যে যার মতো সুখে থাকতে চায়। এর মূল চাবিকাঠি রয়েছে নিজের হাতেই। নিজের চেষ্টাতেই সুখী হওয়ার পথটা তৈরি করে নেওয়া সম্ভব।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান এবং কগনিটিভ বিজ্ঞান বিভাগের জনপ্রিয় অধ্যাপক লরি স্যান্টোস বলেছেন, বিজ্ঞানে এটা প্রমাণ হয়েছে যে সুখী হতে হলে সচেতন প্রচেষ্টার প্রয়োজন। বিবিসি বাংলার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইউএনবি প্রকাশ করেছে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন।

অধ্যাপক লরি স্যান্টোসের মতে, ‘সুখী হওয়ার চেষ্টা করাটা খুব একটা সহজ কাজ নয়, এ জন্য সময় লাগবে।’

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১৬ বছরের ইতিহাসে তার ক্লাস শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। ক্লাসে প্রায় এক হাজার ২০০ ছাত্রছাত্রী রয়েছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি রেকর্ড।

ইতিবাচক মনোবিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে এই কোর্সটি পরিচালনা করেন অধ্যাপক স্যান্টোস। এটা মনোবিজ্ঞানেরই একটি শাখা যেখানে সুখ এবং আচরণগত পরিবর্তনের বিষয়ে পড়ানো হয়।

অধ্যাপক স্যান্টোস বলেন, সুখী হওয়া বিষয়টি এমন নয় যে এটা আপনা আপনি হয়ে যায়। সুখী হওয়ার জন্য আপনাকে এটা চর্চা করতে হবে। এটা অনেকটা ভালো সংগীতশিল্পী বা ক্রীড়াবিদ হয়ে ওঠার মতোই, সাফল্যের জন্য তাদের যেমন চর্চা করতে হয় সুখী হওয়ার ব্যাপারেও আপনাকে সেটা করতে হবে।

কীভাবে সুখী হতে হবে, তার কিছু কলাকৌশল তিনি শিক্ষার্থীদের শেখান সপ্তাহে দুদিন। এখান তাঁর দেওয়া পাঁচটি টিপস তুলে ধরা হলো:

১. কৃতজ্ঞতার একটি তালিকা তৈরি করুন

অধ্যাপক স্যান্টোস তার শিক্ষার্থীদের বলেন, প্রত্যেক রাতে তারা যাদের কাছে বা যেসব জিনিসের কাছে কৃতজ্ঞ, তার একটি তালিকা তৈরি করতে।

‘এটা শুনতে খুব সহজ মনে হতে পারে, কিন্তু আমরা দেখেছি যেসব শিক্ষার্থী নিয়মিতভাবে এটা চর্চা করেন তাদের সুখী মনে হয়,’ বলেন অধ্যাপক স্যান্টোস।

২. আরো বেশি করে ও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে চেষ্টা করুন

এ কাজটা করা সবচেয়ে সহজ বলে মনে হয়, কিন্তু আসলে এই কাজটা করা খুব কঠিন, বলেন অধ্যাপক। এখানে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, প্রতি রাতে আট ঘণ্টা করে ঘুমানো। এবং এই কাজটা করতে হবে এক সপ্তাহ ধরে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সবাই জানি যে বেশি ঘুমাতে পারলে এবং নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারলে বিষণ্ণতায় ভোগার আশঙ্কা কম থাকে। এতে ইতিবাচক মনোভাবও তৈরি হয়।’

৩. ধ্যান করুন

প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট করে ধ্যান করা চেষ্টা করতে হবে। কারণ এটি মানুষকে সুখী হতে সাহায্য করে। অধ্যাপক স্যান্টোস বলেন, তিনি যখন ছাত্রী ছিলেন, তখন তিনি নিয়মিত ধ্যান করতেন এবং দেখেছেন সেটা করলে মন ভালো থাকে।

এখন তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন কীভাবে ধ্যান করতে হয়। তিনি বলেন, এ ধরনের কাজে পূর্ণ মনোযোগ দিতে হয়, যা মানুষকে সুখী হতে সাহায্য করতে পারে।

৪. পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে আরো সময় কাটান

অধ্যাপক স্যান্টোস বলেছেন, গবেষণায় পরিষ্কার একটি বিষয় দেখা গেছে যে, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে ভালো সময় কাটালে আপনি সুখী হবেন। আপনার যদি ভালো বন্ধুত্ব থাকে এবং সামাজিক যোগাযোগ থাকে এবং তাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ হয়, তখন তারা উল্লেখযোগ্য রকমের ভালোবোধ করেন।

এ জন্য যে খুব বেশি কিছু করতে হবে তা নয়। স্যান্টোস বলেন, ‘শুধু এটা নিশ্চিত করুন যে আপনি এই সময়ে বেঁচে আছেন, মনে করুন যে আপনারা একসঙ্গে বর্তমান সময় কাটাচ্ছেন এবং আপনি কীভাবে আপনার সময় কাটাচ্ছেন সে বিষয়ে একটু সচেতন থাকুন।’

তিনি বলেন, সুখী হওয়ার জন্যে সময় সম্পর্কে আপনার ধারণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কত অর্থ রয়েছে, সেটা দিয়ে আমরা প্রায়ই আমাদের সম্পদের হিসাব করি। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, সম্পদ হচ্ছে আসলে আমাদের হাতে কত সময় রয়েছে সেটার সঙ্গে সম্পর্কিত।

৫. সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগের পরিবর্তে বাস্তব যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন

অধ্যাপক স্যান্টোস মনে করেন, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সুখের বিষয়ে মিথ্যা যেসব ধারণা পাওয়া যায়, সেসবে ভেসে যাওয়া উচিত নয়। সবশেষ গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যম ব্যবহার করেন তাঁরা, যাঁরা এটা খুব বেশি ব্যবহার করেন না তাঁদের চাইতে কম সুখী।

তাই আপনি যদি সত্যিই জীবনে সুখী হতে চান, তাহলে কৃতজ্ঞ হতে শুরু করুন, পরিবারের সঙ্গে আরো বেশি সময় কাটান, বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা করুন, দিনের একটা সময়ে কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে সবকিছু থেকে সরিয়ে ধ্যানে মগ্ন হোন, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে সরে এসে আরো একট বেশি ঘুমাতে চেষ্টা করুন।