রাঙামাটির প্যাদা টিং টিং এখন ঢাকায়
টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ, গাছ-গাছালির সুনিবিড় পরিবেশ আর সঙ্গে আদিবাসী খাবার। এ যেন ঢাকায় বসে রাঙামাটির স্বাদ! গল্প নয়, সত্যি। বলছি ঢাকার গুলশানে অবস্থিত প্যাদা টিং টিং রেস্তোরাঁর কথা। ‘প্যাদা টিং টিং’ চাকমা শব্দ। যার মানে হলো, পেট ভরে খাওয়া। এই রেস্তোরাঁর প্রধান শাখা রয়েছে রাঙামাটিতে। এরই ধারা বজায় রাখতে চার তরুণের প্রচেষ্টায় ঢাকায় প্যাদা টিং টিং রেস্তোরাঁটির শাখা খোলা হয়েছে। যেখানে ঢাকার মানুষ পাবে আদিবাসী খাবারের অতুলনীয় স্বাদ।
প্রায় ১১ হাজার স্কয়ার ফুটের ওপর তৈরি করা হয়েছে প্যাদা টিং টিং। যেখানে ২০০-এর বেশি মানুষ একসঙ্গে খেতে পারবেন। পুরো রেস্তোরাঁটি তৈরি করা হয়েছে বাঁশ দিয়ে, যা সুদূর রাঙামাটি দিয়ে আনা হয়েছে। খুবই সাধারণ আসবাব ব্যবহার করা হয়েছে এই দ্বিতল রেস্তোরাঁয়। ঢুকতেই চোখে পড়বে বাঁশের দেয়ালে ঘেরা প্রাচীর আর বাঁশ দিয়ে তৈরি আদিবাসীদের তেলের কুপি, যা রাতের আঁধারে অন্য রকম পরিবেশ সৃষ্টি করে। আলো-আঁধারির খেলায় পুরো রেস্তোরাঁয় আনা হয়েছে আদিবাসী আমেজ।
রেস্তোরাঁর নিচতলায় রয়েছে একটি আর্ট গ্যালারি। যেখানে বিভিন্ন ধরনের আর্ট এক্সিবিশনের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া ১২ সিটের একটি কনফারেন্স রুমও রয়েছে। যেখানে আপনি চাইলে অফিশিয়াল কোনো মিটিংয়ের আয়োজন করতে পারেন। আরো রয়েছে খাবার খাওয়ার জন্য এসি রুম। এ ছাড়া আদিবাসীদের পোশাকের পসরা সাজানো একটি আউটলেটও রয়েছে। দোতলার সিঁড়ির পাশে রয়েছে ছোট্ট একটি জুস কর্নার। আর দোতলায় আপনি পাবেন মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। যেখানে বৃষ্টি হোক কিংবা চাঁদনি রাত, সবই উপভোগ করতে পারেন। এই রেস্তোরাঁর ডেকোরেশনের একটি বিশেষত্ব হলো এর আশপাশের এবং রেস্তোরাঁর ভেতরের গাছগুলো না কেটে এগুলোকেই সাজানোর অনুষঙ্গে হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
রেস্তোরাঁটির অন্যতম কর্ণধার গৌরব দেওয়ান বলেন, ‘চাকমা খাবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই ঢাকায় এই রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠা করেছি। অনেকেরই আদিবাসী খাবারের প্রতি আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু সময়ের অভাবের কারণে রাঙামাটি গিয়ে খাওয়া হয় না। তাই তাঁদের সুবিধার্থে আমরা আমাদের রেস্তোরাঁয় আদিবাসীদের বিভিন্ন খাবারের আয়োজন করেছি।’
গৌরব আরো বলেন, ‘অনেক বিদেশি ঢাকায় আসেন, যাঁরা আদিবাসী খাবার খেতে চান। অথচ ঢাকায় তেমন কোনো রেস্তোরাঁর ব্যবস্থা নেই, যেখানে সঠিক উপায়ে রান্না করা আদিবাসী খাবার পাওয়া যায়। এটাও একটা কারণ এই রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠার।’
যেসব স্পেশাল আদিবাসী খাবার পাওয়া যায় এই রেস্তোরাঁয় তা হলো, ছুমাত কুরা হেরা (বাঁশে রান্না করা মুরগির মাংস), ছুমাত ফিশ (বাঁশে রান্না করা কোরাল মাছ), ছুমাত বিফ হেরা (বাঁশে রান্না করা গরুর মাংস), ফিশ কেবাং (কলাপাতায় রান্না করা কোরাল মাছ), বদা কেবাং (কলাপাতায় রান্না করা ডিম), কুরা গুটিয়া (মুরগির মাংসের ভর্তা), ফ্রাইড এগ উইথ ড্রাই ফিশ। এ ছাড়া আরো রয়েছে ভিন্ন স্বাদের নানা আদিবাসী খাবারের অয়োজন, যা আপনি ভাত অথবা নানরুটি দিয়ে খেতে পারবেন।
ঠিকানা : প্যাদা টিং টিং, বাসা নম্বর ৬৯, রোড-২৭, গুলশান-১।
প্যাদা টিং টিং রেস্তোরাঁর স্পেশাল রেসিপি
ছুমাত বিফ হেরা (বাঁশে রান্না করা গরুর মাংস)
উপকরণ
গরুর মাংস ৪৫০ গ্রাম, কাঁচামরিচ বাটা চারটি, পেঁয়াজ কুচি একটি, হলুদ গুঁড়া এক চা চামচ, আদা বাটা দুই চা চামচ, জিরা গুঁড়া হালকা, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, সরিষার তেল সামান্য, প্যাদা টিং টিং স্পেশাল মসলা দুই চা চামচ এবং লবণ স্বাদমতো।
প্রস্তুত প্রণালি
প্রথমে ছোট করে কাটা গরুর মাংসের মধ্যে কাঁচামরিচ বাটা, পেঁয়াজ কুচি, হলুদ গুঁড়া, আদা বাটা, জিরা গুঁড়া, সয়াবিন তেল, সরিষার তেল, প্যাদা টিং টিং স্পেশাল মসলা ও লবণ একসঙ্গে মেখে মেরিনেটের জন্য আধা ঘণ্টা রেখে দিন। এবার ছোট করে কাটা বাঁশের মধ্যে মেরিনেট করা মাংস দিয়ে কলাপাতা দিয়ে মুখটা আটকে নিন। এর পর চুলায় কয়লার মধ্যে বাঁশটি এক থেকে দেড় ঘণ্টা রেখে দিন। মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে কাটা বাঁশের ওপর রেখে ধনেপাতা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন দারুণ সুস্বাদু ছুমাত বিফ হেরা (বাঁশে রান্না করা গরুর মাংস)।
ফিশ কেবাং (কলাপাতায় রান্না করা কোরাল মাছ)
উপকরণ
কাটা ছাড়া কোরাল মাছ ৪০০ গ্রাম, কাঁচামরিচ কাটা তিন/চারটি, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, সরিষার তেল সামান্য, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, রসুন বাটা সামান্য, হালকা আদা বাটা, প্যাদা টিং টিং স্পেশাল মসলা এক চা চামচ এবং লবণ স্বাদমতো।
প্রস্তুত প্রণালি
প্রথমে ছোট করে কাটা কোরাল মাছের সঙ্গে কাঁচামরিচ কাটা, সয়াবিন তেল, সরিষার তেল, হলুদ গুঁড়া, রসুন বাটা, আদা বাটা, প্যাদা টিং টিং স্পেশাল মসলা ও লবণ একসঙ্গে মিশিয়ে ১৫ মিনিট মেরিনেটের জন্য রেখে দিন। এবার মাছের মিশ্রণটি কলাপাতায় মুড়ে নিয়ে প্রেশারকুকারে রেখে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে চুলায় দিন। এক সিটি দিলেই চুলা থেকে নামিয়ে নিন। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল মজাদার ফিশ কেবাং।