নদী ভাঙনের পর সরকারি জমি হারিয়ে দ্বারে দ্বারে ঝুমকি
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/11/20/madaripur-news-pic-tham.jpg)
ঝুমকি বেগম। বৃদ্ধ শ্বশুর, স্বামীসহ পরিবারে রয়েছে ছয় সদস্য। একসময় তাদের কয়েক বিঘা ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও ডেইরি ফার্ম ছিল। বুকে ছিল অনেক স্বপ্ন। নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে সেসব স্বপ্ন আজ কেবলই স্বপ্ন। শেষ সম্বল সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া জমিটুকুও প্রভাবশালীরা দখল করে নেওয়ায় পরিবারের লোকজন নিয়ে বিভিন্নজনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ঝুমকি।
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার পূর্ব এনায়েতনগর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের আব্দুল হামিদ আকনের স্ত্রী এই ঝুমকি বেগম। নদীর পাড়ে বসে অপলক দৃষ্টিতে কী যেন দেখছিলেন তিনি। একটু এগিয়ে গিয়ে কথা হলো তার সঙ্গে।
কী দেখছেন? জানতে চাইলে বলেন, ‘ওই যে নদী দেখতেছেন না? ওই নদীর পাড়ে আমাগো বাড়িঘর, ফার্মসহ সব আছিল, অহন আর কিছুই নাই। আমার এই জীবনে তিনবার আমাগো বাড়িঘর নদীর পেটে গেছে। জায়গা-জমি যা ছিল, সব শ্যাষ। কত যে না খাইয়া থাকছি হিসাব নাই। নদীতে যাগো সব লইয়া যায়, তাগো তো আর কোনো কিছুই থাকে না।’
সব হারিয়ে এই অসহায় পরিবারটির আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই বলেও জানালেন ঝুমকি বেগম।
আজ রোববার সকালে উপজেলার পূর্ব এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আলীপুর গ্রামে গিয়ে জানা যায়, মো. হামিদ আকনের স্ত্রী ঝুমকি বেগম স্বামী, শ্বশুরসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে আড়িয়াল খাঁ নদের তীরে তার নিজ বসতবাড়িতে বসবাস করছিলেন। বাড়িতেই একটি ডেইরি ফার্মও গড়ে তুলে সুখেই চলছিল সংসার। কয়েক দফা নদী ভাঙনের পর প্রায় দুই বছর আগে আড়িয়াল খাঁ নদ তার বসতভিটা, ফসলি জমি গ্রাস করে। এতে তার স্বপ্ন মুহূর্তের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। এরপর তাকে ভূমিহীন হিসেবে ঘোষণা করেন ইউপি চেয়ারম্যান। পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করায় হামিদ আকন ও তার স্ত্রী ঝুমকির নামে ১১০ নং আলীপুর মৌজায় মোট ২৬ শতাংশ সরকারি খাস জমি কবুলিয়াত দলিল মূলে ভূমিহীন হিসেবে দেওয়া হয়। সেখানে বসতঘর নির্মাণ করে ভোগ দখল করছিলেন। কিন্তু একই গ্রামের প্রভাবশালী কবির খা, হাবি মালত, নজু মালত, আরিফ মালতসহ বেশ কয়েকজন মিলে তাকে মারধর করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরে তারা (ঝুমকি) তাদের নামে আদালতে একটি মামলা করেন। আদালত ঝুমকি ও হামিদ আকনকে তাদের জমি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই জমি এখনও বুঝিয়ে না দেওয়ায় তাঁরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তাঁরা জমি বুঝে পাওয়ার জন্য বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2022/11/20/madaripur-news-pic-.jpg)
ভুক্তভোগী ঝুমকি বেগমের স্বামী হামিদ আকন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে সুখেই ছিলাম। কিন্তু নদী আমাদের স্বপ্ন ভেঙে নিয়ে গেছে। পরে সরকার আমাদের কিছু জমি দিয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী কবির খা, হাবি মালত, নজু মালত, আরিফ মালতসহ বেশ কয়েকজন মিলে আমাকে মারধর করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আমি তাদের নামে মামলা করেছি। কিন্তু বিচার পাইতেছি না। এখন আমাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা জমি দখল ও বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পূর্ব এনায়েতনগর ইউপি চেয়ারম্যান নেয়ামুল আকন বলেন, নদী ভাঙনের পরে তাদের সরকারিভাবে একটি খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। আমি জানি, তারা ওখানেই বসবাস করছে। কেউ যদি তাদের ওখান থেকে সরিয়ে দেয় বা দেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিংকি সাহা বলেন, ‘ঝুমকি বেগমের পরিবারের বিষয়টি আমি দেখতেছি।’