আড়িয়ালখাঁয় অভিযানে আটক ৯, রেল সেতুর নদীশাসন বাঁধে বাধার অভিযোগ
আড়িয়ালখাঁ নদে অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের অভিযান পরিচালিত হয়। এসময় বালু উত্তোলন কাজে নিয়োজিত ৯ জন শ্রমিককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে কমিশন। রোববার (১১ জুন) বিকেলে উপজেলার আড়িয়ালখাঁ নদে এ অভিযান চালান জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। তবে রেল বিভাগ দাবি করেছে, রেল সেতুর নদীশাসন বাঁধের নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে এ অভিযানে৷
শিবচর থানা পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ অভিযানে আড়িয়ালখাঁ নদের রেল সেতুর নিচে তীর রক্ষা কাজের জন্য ব্যবহৃত বার্জ থেকে ৫ জন কর্মচারী এবং একটি ড্রেজার থেকে ৪ জন কর্মচারীকে আটক করা হয়। সংশ্লিষ্টদের দাবি, আড়িয়ালখাঁ নদের উভয় পাড়ে সেতুর নিচে ব্লক ডাম্পিং করার জন্য একটি বার্জ আনা হয়। বেশ কিছুদিন ধরে এই রেল সেতুর নিচে নদীর তীর রক্ষার কাজ শুরু করা হয়। উভয় পাড়ে প্রায় ২২৫ মিটার স্থান ব্লক ডাম্পিং করে পাথর দিয়ে নদীশাসন কাজ করা হবে। এ অভিযানের কারণে রেল সেতুর তীর রক্ষা কাজ বিঘ্নিত হবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
সূত্র আরও জানায়, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার আড়িয়ালখাঁ নদের হাজী শরীয়ত উল্লাহ সেতু সংলগ্ন ভাঙ্গা-ঢাকা রেললাইনের রেল সেতুর নিচের আড়িয়ালখাঁ নদে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে রোববার বিকেলে অভিযান চালানো হয়। এসময় ড্রেজারের কাজে নিয়োজিত ৯ শ্রমিককে আটক করে পুলিশ।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সানাউল কাদের খান, শিবচর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিয়াজুল ইসলামসহ শিবচর থানা পুলিশ ও নৌপুলিশের টিম যৌথ অভিযান চালায়।
ড্রেজিংয়ে কর্মরত চায়না প্রকৌশলীদের দোভাষী আ. আজিজ জানান, অভিযানে একটি বার্জ ও একটি ড্রেজার থেকে ৯ জন কর্মচারীকে আটক করায় সেতু রক্ষা কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এসময় নদী শাসন বাঁধের কথা বারবার বলা সত্ত্বেও তারা কোনো কথাই শোনেননি৷ রেল প্রজেক্টের কাজের মধ্যে এ ধরনের অভিযানে আমরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছি।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের সহকারী নদী শাসন বিশেষজ্ঞ বুলবুল আহমেদ জানান, রেললাইনের সব সেতুতেই এভাবে নদী শাসন বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। আড়িয়ালখাঁ রেল সেতুর নিচে নদীর গতিপথ সঠিক রাখার জন্য বালুরবস্তা ডাম্পিং করে সিসি ব্লক দ্বারা নদী শাসনের কাজ করা হয়। আড়িয়ালখাঁ নদের এখানে উভয় পাড়ে ১৫ মিটার পর্যন্ত গভীর করা প্রয়োজন। এ কাজের জন্য গত ২০২০ সালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া ছিল।
বুলবুল আহমেদ আরও বলেন, গত ৫ জুন থেকে এ কাজ শুরু হয়। কিন্তু বর্তমান সেতু রক্ষার জন্য জিরো মিটার থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত ড্রেজিং করে গভীরতা সৃষ্টি করতে হয়। যে কারণে এখানে ড্রেজার লাগাতে হয়েছে। যেমনটি আমরা পদ্মা সেতুর বেলায়ও নদীর পাড় ড্রেজিংসহ বালুর বস্তা ডাম্পিং করে ব্লক দ্বারা নদী শাসন কাজ করেছি। তবে নদী রক্ষা কমিশনের এই অভিযানে আমাদের কাজে বাধা সৃষ্টি হয়েছে।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের খান জানান, সেতুর উভয় দিকের এক কিলোমিটারের মধ্যে কোন রকম ড্রেজিং করে বালু বা মাটি উত্তোলন করার নিয়ম নেই। তবে রেল সেতুর তীর রক্ষার জন্য নদী শাসনের প্রয়োজনে সেতু কর্তৃপক্ষ নদী গভীর করে বস্তা ডাম্পিং করে ব্লক দিয়ে কাজ করতে পারে বলে আমরা অভিযান চলাকালে জানতে পেরেছি। এটা রেল সেতু কর্তৃপক্ষের কাজ।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী জানান, নদীতে যেকোন স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে মাটি বা বালু উত্তোলন করার কোনো নিয়ম নেই। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে দুপুরে হাজী শরীয়ত উল্লাহ সেতু ও পার্শ্ববর্তী রেল সেতুর নিচে অনুমোদনহীনভাবে একটি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করার কাজে নিয়োজিত ৯ শ্রমিককে আটক করা হয়। তাদের শিবচর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।