অনলাইনে যে ৯ কাজ করবেন না
প্রযুক্তির কল্যাণে আজকাল যোগাযোগ সহজ হয়ে গিয়েছে। পৃথিবীর একপ্রান্তে বসে আপনি অপর প্রান্তে থাকা প্রিয়জনের সঙ্গে খুব সহজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কথা বলতে পারবেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমারা এখনো অনেক উদাসীন। অনেকে না জেনে আবার কেউ কেউ জেনেও কিছু ভুল করে থাকেন। অনেকের ধারণা নিজেকে কম্পিউটার স্ক্রিনের আড়ালে রেখে যা ইচ্ছে তাই বলা যাবে। হ্যা, আপনি বলতে পারেন তার মানে এই নয় যে আপনার কথার মাধ্যমে অন্যকে আঘাত করা উচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু ভদ্রতা মেনে চলা উচিত। কারণ কম্পিউটার স্ক্রিনের অপরপাশে বসে ভুলে গেলে চলবে না যে আপনি আরেকজন মানুষের সাথে কথা বলছেন। যে কথা আপনি সামনাসামনি বলতে পারবেন না সেই কথা অনলাইনেও বলা উচিত নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুধু সাইবার বুলিং নয় আরও বেশ কিছু কাজ আছে যা অন্যদের বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়। তাই আজকে এমন নয় কাজ নিয়ে কথা বলব যা আপনার কখনোই অনলাইনে করা উচিত নয়।
নিজের ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন করবেন না
আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যাদের অনলাইন ব্যক্তিত্ব এবং অফলাইন ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ অলাদা। অনলাইনে তাদের ব্যবহার দেখে মানুষ যেমন আকৃষ্ট হয় তেমনি অফলাইনে তাদের ব্যবহার দেখে হয়তো আশাহত হয়। এধরণের দ্বৈত জীবন-যাপন করা মানুষের মাঝে নানা রকম মানসিক সমস্যা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই অনলাইন বা অফলাইন সবক্ষেত্রেই নিজের আসল ব্যক্তিত্ব মানুষের সমানে তুলে ধরুন।
অযথা কাউকে ট্যাগ করবেন না
কোন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার আগে যাদের সাথে ছবি তুলেছেন তাদের থেকে জেনে নিন ছবি আপলোডের সময় তাদের ট্যাগ করতে পারেন কিনা । কারণ অনেকেই এই ট্যাগ করার বিষয়টি পছন্দ করেন না। কারণ ট্যাগ করার ফলে অনেক নোটিফিকেশন আসে যার কারণে অনেকেই বিরক্ত হয়।
কাউকে অপমান করবেন না
কারও ছবি বা পোস্ট দেখে সেটাতে কখনোই অপমানজনক কিছু বলবেন না। তাদের আপনার পছন্দ না হলে এড়িয়ে যান। ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানোর জন্য অনলাইনে তাদের আক্রমণ করবেন না। এগুলো সাইবার বুলিং এর পর্যায় পড়ে এবং সেক্ষেত্র আপনি আইনি ঝামেলায় পড়তে পারেন। এছাড়া আপনার পরিবার ও অফিসের সহকর্মীদের মাঝে আপনার ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে।
ব্যক্তিগত ও পেশাগত কাজের জন্য আলাদা অ্যাকাউন্ট রাখুন
অনেক চাকরির ক্ষেত্রেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাকাউট থাকা বাধ্যতামূলক। সেক্ষেত্রে আপনার উচিত পেশাগত কাজের জন্য আলাদা অ্যাকাউন্ট তৈরি করা। কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার বন্ধুরা হয়তো আপনাকে নিয়ে মজা করছে বা আপনাকে কোনো মিমের সাথে ট্যাগ করেছে, যা আপনি কখনোই চাইবেন না আপনার অফিসের বস বা ক্লায়েন্টের সামনে আসুক। তাই নিজের ব্যক্তিগত ও পেশাগত কাজের জন্য আলাদা অ্যাকাউন্ট রাখুন।
অপরিচিত কাউকে বন্ধু বানাবেন না
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত কাউকে বন্ধু বানানো উচিত নয়। ব্যক্তি জীবনে যাদের আপনি বন্ধু হিসেবে চাচ্ছেন না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেন তাদের বন্ধু বানাবেন? এই সময়ে অপরিচিত কাউকে নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত করার মাধ্যমে আপানার নিরাপত্তার ব্যঘাত ঘটতে পারে। এছাড়া আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যেতে পারে। তাই অপরিচিত কাউকে কখনোই নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধু বানাবেন না।
নিজের রাগ প্রকাশ করবেন না
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে চায়। নিজের জীবনের আনন্দময় মুহূর্তগুলো অন্যদের সাথে ভাগ করতে চায়। কিন্তু অনেক সময় রাগের বশে এমন অনেক কিছু প্রকাশ করে বসে যা অন্যদের জন্য যেমন অপ্রীতিকর তেমনই নিজের জন্য লজ্জাজনক। তাই নিজের রাগ কখনোই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করবেন না। মানুষ অনলাইনে আপনাকে সান্ত্বনা দিলেও আড়ালে আপনাকে নিয়ে মজা করবে।
অন্যের অনুমতি ছাড়া ছবি ব্যবহার করবেন না
কেউ আপনার সাথে ছবি তুলতে রাজি হয়েছে তার মানে এই নয় যে আপনি তার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করবেন। আবার কারও টাইমলাইন থেকে ছবি নিয়ে সেটা নিজের বলে চালিয়ে দেওয়া একধরণের অপরাধ। তাই কারও ছবি ব্যবহার করার আগে অবশ্যই তার অনুমতি নিয়ে ছবি আপলোড করবেন।
গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন
প্রযুক্তির কল্যাণে খুব সহজেই খবর দ্রুত ছড়িয়ে যায়। আর সেক্ষেত্রে সাহায্য করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের শেয়ার অপশনগুলো। কিন্তু বিভিন্ন নিউজ শেয়ার করার আগে জেনে নেওয়া উচিত সেগুলো সঠিক কিনা। কারণ এসব ভুল খবর ছাড়ানোর ফলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যায়। ভুল খবর বা গুজব ছাড়ানোর ফলে অনেক সময় নানা অপ্রীতিকর সমস্যার সৃষ্টি হয়।
নিজের ব্যক্তিগত সকল খবর পোস্ট করা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সীমারেখা মেনে চলা উচিত। আপনি যদি সর্বদা নিজের ব্যক্তিগত সকল ঘটনা ও ছবি আপলোড করতে থাকেন তাহলে সেটা অনেক সময় মানুষের বিরক্তির কারণ হয়ে যায়। ব্যাপারটা এমন হয়ে যায় যে, কেউ এগুলো জানতে চাচ্ছে না আর আপনি জোর করে তাদের শোনাচ্ছেন। তাই নিজের ব্যক্তিগত সকল ঘটনা সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে আপলোড করা থেকে বিরত থাকুন।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে মানুষ নানা সমস্যায় পড়ছে। আর এগুলোর মূল কারণ হলো অসচেতনভাবে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।
সূত্র: রিডার ডাইজেস্ট