খাদ্যের অপচয় এড়াতে ইন্দোনেশিয়ায় চমকপ্রদ অ্যাপ
খাদ্যের অপচয় আধুনিক যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য৷ ইন্দোনেশিয়ায় এমন অপচয় কমাতে এক অ্যাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকার আইন প্রণয়ন করে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করতে চাইছে।
ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে নাসি গোরেং অন্যতম। তবে প্রায়ই দেশের রেস্তোরাঁগুলোর জঞ্জালের মধ্যে এই পদ পড়ে থাকতে দেখা যায়। বারিলা সেন্টার ফর ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশনের গবেষণা অনুসারে, আসলে গোটা দেশের জঞ্জালের প্রায় ৪০ শতাংশই খাদ্য।
পাইকারি খাদ্য বিক্রেতা, খাদ্য বিতরণ পরিষেবা থেকে শুরু করে বাসার রান্নাঘর– সব জায়গায় এমন অপচয় ঘটে৷ গোটা বিশ্বে খাদ্য অপচয়ের নিরিখে ইন্দোনেশিয়া তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা সহজ নয়।
হ্যারিস সুইটস পুরি ম্যানসনের জেনারেল ম্যানেজার আন্তন রেজি মনে করেন, ‘‘হোটেলে ফুড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে কোনো কিছু অপচয় না করাই সবচেয়ে জরুরি। কিন্তু কখনো সেটা পুরোপুরি সম্ভব হয় না। আমরা এখন ‘সারপ্লাস অ্যাপ্লিকেশন’ নামের এক অ্যাপ ব্যবহার করে খাদ্যের অপচয় কমাতে পারছি৷’’
আন্তন রেজির রেস্তোরাঁর বাড়তি খাদ্য এখন সারপ্লাস অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে৷ রেস্তোরাঁ, হোটেল, সুপারমার্কেট, এমনকি খামারের উদ্বৃত্ত খাবারও কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে এই অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রি করা যায়৷
দোকান বা রেস্তোরাঁ বন্ধ করার প্রায় তিন ঘণ্টা আগে বিক্রেতারা অ্যাপে খাবারের তালিকা প্রকাশ করেন। সেই খাবার হয় তুলে নেওয়া হয়, অথবা কুরিয়ারের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। ইন্দোনেশিয়ার ১২টি শহরে ইতোমধ্যেই এই অ্যাপ চালু হয়ে গেছে। সারপ্লাস অ্যাপের কর্ণধার মুহাম্মাদ আগুং সাপুত্রা বলেন, ‘‘আসলে প্রায় ৮০ শতাংশ খাদ্যের অপচয় বন্ধ করে উলটে উপার্জন করা সম্ভব। ব্যবহারকারীরা যাতে বাড়তি খাদ্য মজুত করে লোকসান না করেন, সেটাই আমাদের অ্যাপের লক্ষ্য৷’’
তবে প্রতি বছর লাখ লাখ টন খাদ্য ফেলে দেওয়া হয়৷ অথচ সে দেশেই অনেক শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। সবে বিষয়টি নিয়ে সরকারের টনক নড়েছে৷ স্লামেত নামের সংসদ সদস্য বলেন, ‘‘এমন খাদ্যের অপচয় নিয়ন্ত্রণ করতে সবে আইনের খসড়া প্রস্তুত হয়েছে৷ আমরা ২০২৪ সালের মধ্যে সেই প্রক্রিয়া শেষ করার অঙ্গীকার করেছি৷ খাদ্য নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে সরকারের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত৷ তবে এখনো কোনো বিধিনিয়ম নেই৷’’
আইন প্রণয়ন হওয়া পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার সরকার দেশের ছয় ধর্মের নেতাদের খাদ্য অপচয় কমানোর দূত হিসেবে কাজে লাগাতে চাইছে।
স্থানীয় সমাবেশ ও ধর্মীয় বাণী প্রচারের সময় তাঁদের অপচয় এড়ানোর বার্তা দেবার অনুরোধ করা হয়েছে। আপাতত এভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা সত্ত্বেও সরকার দ্রুত দীর্ঘমেয়াদী সমাধান সূত্রের আশা করছে।