বিএনপিতে আছি, বিএনপিতেই থাকব : মেজর হাফিজ
বিএনপি থেকে পদত্যাগ এবং নতুন দল গঠন করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। তিনি বলেন, ‘বিএনপিতে আছি, বিএনপিতেই থাকব। আর শিগগিরই বিএনপিতে থেকেই রাজনীতি থেকে অবসর নেব।’
আজ বুধবার (৮ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর বনানীতে নিজ বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মেজর হাফিজ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজ বলেন, ‘আমার শারীরিক অসুস্থতার কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেব না। শিগগিরই রাজনীতি থেকে অবসর নেব। সেটা বিএনপি থেকেই অবসর নিতে চাই। চিকিৎসার জন্য শিগগিরই বিদেশ যাব।’
গত সোমবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপির অনেক নেতা তারেক রহমানের দোষ দেন। তারা বলেন, তারেক রহমান আমাদের দলটা ধ্বংস করে দিলো। অনেকেই লাইন ধরে আছে, তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য। আর বিএনপির সাবেক মন্ত্রী মেজর হাফিজের নেতৃত্বে আরও একটি দল হতে যাচ্ছে। তারা শিগগিরই ঢাকায় কনভেনশন করবেন।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেজর হাফিজ বলেন, ‘বিএনপি যদি নির্বাচন করে, তাহলে বিএনপির হয়ে নির্বাচনে অংশ নেব। এ ছাড়া অন্য কোনো বক্তব্য নেই। বিএনপিতে আছি, বিএনপিতেই থাকব বলে আশা করি।’
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘২৩ বছর ধরে আমি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। ড. মোশাররফ ও রফিকুল ইসলাম মিয়া ছাড়া সবাই আমার জুনিয়র। কিন্তু, আমি ছাড়া সবাই উপরে উঠে গেছে। আমি পদবির জন্য রাজনীতি করি না। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করেছি। তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দলে যোগদান করেছি। বেগম জিয়ার অনুপুস্থিতিতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। জুনিয়র নেতারা সিনিয়র পদ-পদবি পেলেও কোনো অভিযোগ নেই। শারীরিক অসুস্থ্যতার কারণে নিষ্ক্রিয় আছি। রাজনীতে এখন কোনো আগ্রহ নেই।’
মেজর হাফিজ বলেন, ‘২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় আজগুবি ১১টি অভিযোগে। সরকারবিরোধী কর্মসূচিতে অংশ না নিলেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিন বছর পার হলেও নোটিশের উত্তরের কোনো পাল্টা জবাব পাইনি। ৩১ বছর রাজনীতি করে এমন প্রাপ্তি পীড়াদায়ক।’
নিজ দল বিএনপির সমালোচনা করে দলটির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনেক ভুল আমরা করেছি। দলীয় বলার সুযোগ নেই। ৮ বছর কোনো কাউন্সিল হচ্ছে না। জাতির স্বার্থে কিছু কথা বলতে হয়। দলের সব নেতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই কথা বলা। বিএনপিতে একটি সত্যিকথা বলা লোক চোখে পড়েনি, সাইফুর রহমান ছাড়া। সবাই ইয়েস স্যার, রাইট স্যার বলা লোক।’
মেজর হাফিজ বলেন, ‘বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত। কেয়ারটেকারের কথা না ভেবে বিকল্প ভাবা উচিত। জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় বিএনপির নির্বাচনে যাওযা উচিত। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ের সক্ষমতা লাগে তা নেই বিএনপির। বিএনপির আন্তর্জাতিক যোগাযোগ দুর্বল।’
সরকারে সমালোচনা করে মেজর হাফিজ আরও বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। জনগণ সুযোগ পেলে সঠিক বিচার করে। ক্ষমতাসীনরা মনে করে, উন্নয়ন কাজে ভোট পাবে। আসলে মানুষ বিচার করে নিত্যপণ্যের দাম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতায়। শুধু উন্নয়ন কাজে ভোট হয় না।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘অনুগ্রহ করে সামাজিক সম্প্রীতির দিকে লক্ষ্য রেখে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করুন। কারণ, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। পাশের দেশ ভারত দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছে। শক্ত ভিত্তির ওপর তাদের গণতন্ত্র। তাদের অনুসরণ করে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।’
বিএনপি ও অন্যান্য দলের সঙ্গে বসে সুষ্ঠু ভোটের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে মেজর হাফিজ বলেন, ‘দেশের অবস্থা খারাপ হলে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল দায়ী থাকবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দলের সংস্কার করতে হবে। ত্যাগী নেতাদের মুল্যায়ন করতে হবে। কেন দলের মধ্যে একনায়কত্ব হচ্ছে? কেন পদ বাণিজ্য হচ্ছে?’
এ ছাড়া হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারী আমলাদের পাচার করা টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান।