জেলা প্রশাসনের জমিতে পৌরসভার মার্কেট নির্মাণ
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/01/30/madaripur_pic_1.jpg)
জমি জেলা প্রশাসনের আর বহুতল মার্কেট করার টেন্ডার দিয়েছেন পৌর মেয়র। ঠিকাদারও দিন রাত কাজ করছেন। মাদারীপুরে তোহা বাজার হিসেবে পরিচিত জেলা প্রশাসনের এই জমিতে কাজ করছে রাজৈর পৌরসভা।
আবার স্থানীয় এক ব্যক্তি এই জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন। যা চলমান আছে। প্রকল্পের টাকা লুটপাট করার জন্য জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় পৌর মেয়র এই কাজ করছেন বলে এলাকায় গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী টেকেরহাট বন্দর। এই বন্দরের বাজারের মধ্যে একটি খোলা স্থানে ৬০ বছর ধরে চলে আসছিল মাছ, মাংস ও সবজির বাজার। যা তোহা বাজার হিসেবে পরিচিত।
বাংলাদেশ সরকারের হাট-বাজার গেজেটের ৬-এর ২ ধারার ৪নং উপধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে, হাট বাজারের অভ্যন্তরে নির্ধারিত পরিমাণ জমি তোহা বাজার হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে যা কোনো ধরনের বন্দোবস্ত দেওয়া যাবে না।
এই তোহা বাজারে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে দুটি টুলঘর নির্মাণ করে দিয়েছিল। টুলঘর দুটি অকশন না দিয়ে এবং ব্যবসায়ীদের কোনো নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে জেলা প্রশাসন ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে টুলঘর দুটি ভেঙে দিয়ে ‘জেলা প্রশাসনের জমি অনধিকার প্রবেশ নিষেধ’ একটি লাল সাইনবোর্ড দিয়ে দেয়। এর পরপরই তড়িঘড়ি করে রাজৈর পৌরসভার ঠিকাদার বহুতল মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু করে। জেলা প্রশাসনের এই উচ্ছেদ ও পৌরসভার ঠিকাদারের তড়িঘড়ি করে কাজ শুরু করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাহলে কি জেলা প্রশাসন পৌরসভার মার্কেট নির্মাণের জন্যই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। পৌরসভার মার্কেট প্রজেক্টের টাকা নয়-ছয় করতেই জেলা প্রশাসনের কিছু কর্মচারী ও কর্মকর্তার সঙ্গে আঁতাত করে তোহা বাজারে অবৈধভাবে এ মার্কেট নির্মাণ করছে রাজৈর পৌরসভা। এতে রাজৈরের ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ বলছেন, পৌরসভা মার্কেট করছে এটা ভালোই করছে। এই মার্কেটের প্রয়োজন আছে। আবার অনেকে বলছেন, তোহা বাজার দখল করার অধিকার কারো নেই। তারপরও পৌরসভা বাজারটি দখল করে মার্কেট করছে। এটা অন্যায়। প্রজেক্টের নামে মার্কেট নির্মাণ করে টাকা লুটপাট করতেই পৌরসভা এ কাজ করছে। কোনো নোটিশ ছাড়া ও তোহা বাজারের টুলঘর অকশন না দিয়ে জেলা প্রশাসনের হঠাৎ ভেঙে ফেলা এবং পৌরসভাকে কাজ করার সুবিধা করে দেওয়াকে ভালো চোখে দেখছে না কেউ।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2024/01/30/madaripur_pic_in.jpg)
এই তোহা বাজারের জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে চলছে মামলাও। সেই মামলার এখনও চুড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেননি আদালত। এ অবস্থায় কীভাবে জেলা প্রশাসন টুলঘর ভেঙে জেলা প্রশাসকের জমি দাবি করে সাইববোর্ড দেয় এমন প্রশ্ন জমির মালিকানা দাবি করা মামলার বাদী মো. মহাসিন উদ্দিন হাওলাদারের।
মো. মহাসিন উদ্দিন হাওলাদারের প্রশ্ন, জেলা প্রশাসন জমির মালিকানা দাবি করে যে সাইনবোর্ড দেয় এবং অনাধিকার প্রবেশ নিষেধ করে সেখানে পৌরসভা প্রকাশ্যে বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ কীভাবে শুরু করে? বিষয়টি তদন্ত করে এ অবৈধ কাজে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2024/01/30/madaripur_pic_inn.jpg)
এ বিষয়ে খালিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হামিদুল শাহ আলম মিয়া বলেন, পৌর মেয়র কীভাবে জেলা প্রশাসনের জমিতে টেন্ডার দিয়ে মার্কেট নির্মাণ করেন। সবকিছু নিয়মতান্ত্রিকভাবে হওয়া উচিত। জেলার সর্বোচ্চ কর্মকর্তারা যদি এ ধরনের অবৈধ কাজ করেন তাহলে দেশে আইন বলে কিছু থাকবে না। অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের জমি দখল করে যেভাবে অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে রাজৈর পৌরসভা তাতে প্রভাবশালীরা অবৈধ দখলদারিতে উৎসাহিত হবে।
তোহা বাজার উচ্ছেদ প্রক্রিয়া নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়নি বলে মনে করেন রাজৈর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি অবিলম্বে এই কাজ বন্ধ করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করার দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. মারুফুর রশিদ খান ও রাজৈর পৌরসভার মেয়র নাজমা রশীদ কোনো কথা বলতে রাজি হননি।