বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে বিএনপি-আ.লীগ সংঘর্ষ, আহত ৩
নড়াইলের লোহাগড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারীসহ তিনজন আহত হয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) রাতে উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের মণ্ডলভাগ বাজারে এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগের তীর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. লাবু মিয়ার বিরুদ্ধে। আহতরা হলেন উপজেলার শালনগর গ্রামের নাহিদ খান, আরাফাত শেখ ও মোছা. রোজিনা খানম।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার (৮ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত একটি টি-শার্ট পরেন স্থানীয় এক চা দোকানির ছেলে। এতে বিএনপিকর্মী আকিজের ছেলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগকর্মী নাহিদ খান ঘটনার প্রতিবাদ করেন। ঘটনা গড়ায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তরিকুল কাজী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগনেতা টুটুল পর্যন্ত। পরে গতকাল সন্ধ্যায় ইউনিয়নটির নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান মো. লাবু মিয়া স্থানীয়ভাবে দুই পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে শালিস করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চেয়ারম্যানের বিচারে অসন্তোষ প্রকাশ করে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। এ ঘটনার পর নাহিদকে মণ্ডলভাগ বাজারে একা পেয়ে সংবদ্ধ হামলা চালিয়ে আহত করে বিএনপিকর্মীরা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলার খবর শুনে পাল্টা হামলা চালায়। ঘটনাস্থলে সংঘর্ষের মাঝে পড়ে আহত হন আরও দুজন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
আহত নাহিদ বলেন, চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীকের হলেও তিনি বিএনপিকর্মীদের প্রশ্রয় দেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার বিচার কি শুধু ধমক? আজকের এ ঘটনার মূলহোতা ইউপি চেয়ারম্যান লাবু মিয়া। তিনি পেছনে থেকে কলকাঠি নেড়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন।
এদিকে আহত নারী রোজিনা খানম বলেন, ‘‘আমি বাজারে ওষুধ কিনতে গিয়েছিলাম। ঝামেলা চলছিল দেখে তাড়াহুড়া করে বাড়ি ফিরতে গেলে কে বা কারা আমার মাথায় কোপ দেয়। আমি মাটিতে পড়ে যাই। পরে আমার কিছু মনে নেই।’
অ্যাম্বুলেন্সচালক পিকুল মোল্যা বলেন, ‘শালনগর থেকে ফোন আসে মারামারিতে আহত রোগীকে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে হবে। আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে গেলে রোগী নাহিদকে নিয়ে আধা কিলোমিটার পার হওয়ার পর প্রতিপক্ষের লোকজন পথ আটকে দেয়। তারা ইটপাটকেল মেরে আমার অ্যাম্বুলেন্সের গ্লাস ভেঙে দেয়। পরিস্থিতি খারাপ দেখে আমি দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে চলে যাই।’
শালনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. লাবু মিয়া সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘স্থানীয় পর্যায়ে সামাজিক দ্বন্দ্বের সালিশ করে উভয় পক্ষকে শান্ত থাকতে বলি। কিন্তু নাহিদ ও শিমুল বিচার নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন। পরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।’
কী বিষয় নিয়ে বিরোধ হয়েছিল এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, কী নিয়ে বিবাদ তা ঠিক জানা যায়নি।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে—এমন অভিযোগের শালিস করেছেন কি না, এমন প্রশ্নে লাবু মিয়া বলেন, না এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাঞ্চন কুমার রায় বলেন, সংঘর্ষের ঘটনা জানতে পেরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে এলাকায় পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।