গ্যাস উত্তোলনে ১০০ কূপ, ব্যয় ১৯ হাজার কোটি টাকা
নিজস্ব জ্বালানি ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিয়েছে সরকার। দেশে চলমান জ্বালানি সংকট দূর করতে এরইমধ্যে নেওয়া হয়েছে নানা পরিকল্পনা। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে প্রস্তাবনা তৈরি করেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল-গ্যাস নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা পেট্রোবাংলা। সেই প্রস্তাবনায় বলছে, এই তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে খনন করা হবে ১০০টি কূপ। গ্যাসের ক্রমবর্ধমান এ চাহিদা মেটাতে এবং ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানোর জন্য এই কূপ খননে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ৫০ কোটি টাকা, যা খনন হবে ২০২৮ সালের মধ্যে। ইতোমধ্যে এই প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে।
পেট্রোবাংলা থেকে এনটিভি অনলাইনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা রয়েছে প্রায় চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। দৈনিক গড় সরবরাহ দুই হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এরমধ্যে আমদানিকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমাণ হচ্ছে ৬৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট। এখন দৈনিক ঘটতির পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাসের ক্রমবর্ধমান এ চাহিদা মেটাতে এবং ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে ১০০টি কূপ খননের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে জানান তারা।
এ প্র্রকল্পটি ছাড়াও পেট্রোবাংলা বর্তমানে দৈনিক অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের লক্ষ্যে ৪৮টি কূপ খননের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২৩টির খননকাজ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপক্সে) পরিচালনা করবে। বাকি ২৫টির কাজ আউটসোর্স করা হবে।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে যে হারে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে চলেছে, তাতে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ছয় হাজার ৬৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট হবে। এর মধ্যে চার হাজার ৩৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস নিজস্ব উৎস থেকে সরবরাহ করা যাবে বলে মনে করছেন তারা।
পেট্রোবাংলার এক নথি বলছে, এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ১০০ কূপ খননের বিষয়ে পেট্রোবাংলার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৫-২০২৮ সালের মধ্যে প্রস্তাবিত ৬৯টি কূপ খনন কার্যক্রমের সফল পরিসমাপ্তিতে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৯৮৫ এমএফসিএফ হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি বাপেক্স, বিজএফসিএল এবং এসজিএফসিএল কর্তৃক প্রস্তাবিত মোট ৩১টি ওয়ার্কওভার সম্পন্ন হলে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস সমন্বয় করা সম্ভব হবে।
প্রস্তাবিত একশটি কূপ খননের বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার সম্প্রতি এক আলোচনায় সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা নিরসন করে দেশকে জ্বালানি খ্যাতে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে সরকার, মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলা এবং এর আওতাধীন কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত নিরলসভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। সে লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে এবং পাশাপাশি দেশের সর্বসাধারণের সচেতনতা এবং নীতিগত মূল্যবোধ বজায় রেখে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হলে সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সমৃদ্ধশালী উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সকলে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।