পুলিশ সদস্য হঠাৎ সহকর্মীকে গুলি করলেন কেন?
রাজধানীর বারিধারায় এক পুলিশ সদস্যের গুলিতে আরেক কনস্টেবল নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কাউসার নামের ওই কনস্টেবল তার সহকর্মী মনিরুল ইসলামকে কেন হঠাৎ এভাবে গুলি করলেন? এ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশ। তবে পুলিশ বলেছে, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে—তাদের দুজেনর মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে গুলি করেন কাউসার। এ ঘটনায় জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ শেখও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
আজ রোববার (৯ জুন) দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি জোনের একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য জানান।
পুলিশ সূত্র বলছে, দায়িত্ব পালনরত দুই পুলিশ সদস্যের মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। একপর্যায়ে কাউসার আলী অস্ত্র তাক করে গুলি করেন। বুকে গুলি লেগে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মনিরুল ইসলাম। ঘটনাস্থলেই তিনি প্রাণ হারান। ধারণা করা হচ্ছে, কাউসার আলী মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ছিলেন।
গতকাল শনিবার (৮ জুন) দিনগত রাত ১২টার দিকে রাজধানীর বারিধারা কূটনৈতিক এলাকায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই সড়কে যান চলাচল।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াট, গোয়েন্দা শাখাসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় আইজিপি বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণসহ সবকিছু শুনে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। তদন্তের আগে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।
কনস্টেবল কাউসারকে থানায় নেওয়া হয়েছে এবং তাকে নিরস্ত্র করা হয়েছে জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। মনিরুল ইসলামের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে কিছু গুলির খোসা ও ২০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা তদন্ত করছি। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কূটনৈতিক এলাকায় একজন কনস্টেবলকে দিনে ১৬ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। এই ডিউটি করার কারণে অনেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছেন কি না, বা কাউসার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল কি না জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘সবগুলো বিষয়ে আমরা তদন্ত করব।’
গতকাল শনিবার দিনগত রাতে এ ঘটনা ঘটার পর ফিলিস্তিনি দূতাবাসের নিরাপত্তাকর্মীরা গেটের সামনে আসা কাউসারকে জিজ্ঞাসা করেন, মনিরুল কেন রাস্তায় পড়ে আছেন। তখন কাউসার উত্তরে বলেন, ‘নাটক করতাছে। এমনি রাস্তায় পড়ে আছে।’
এ কথা বলে কনস্টেবল কাউসার দূতাবাসের বিপরীত পাশের রাস্তায় চলে যান। এর মধ্যেই নিরাপত্তাকর্মীরা বুঝতে পারেন, মনিরুলকে কাউসার গুলি করেছে। ওই সময় ঘটনাস্থলে থাকা ফিলিস্তিনি দূতাবাসের এক নিরাপত্তাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।
ওই নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘ঘটনা বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই কাউসারকে আটক করা হয়। ঘটনার সময় আমরা দূতাবাসের ভেতরে ছিলাম। হঠাৎ রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে ৭-৮ রাউন্ড গুলি শব্দ শুনে আমরা বাইরে আসি। বাইরে আসার পর কনস্টেবল কাউসারকে দেখি দূতাবাসের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আর একটু দূরেই পড়ে ছিল কনস্টেবল মনিরুল।’
ডিএমপির ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশার আরিফুল ইসলাম সরকার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, কাউসার আলী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলেন। প্রাথমিকভাবে আমরা হামলাকারী পুলিশ সদস্যের ব্যাপারে যতটুকু জেনেছি, তিনি পাঁচ-ছয় দিন থেকে খুব চুপচাপ ছিলেন। তার অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলছিলেন না। তার ব্যাচমেটদের সঙ্গে কথা বলে এসব জেনেছি।’
এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ শেখকে ভর্তি করা হয়েছে ইউনাইটেড হাসপাতালে। তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানা গেছে। তার হাতে ও পেটে গুলি লেগেছে। তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।