মুন্সীগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আহত ৯
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ছয়জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অন্তত ৯ জন। আহতদের সাতজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আজ সোমবার (২৪ জুন) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার গোয়ালগাঁওয়ের দিলা মিয়ার মুদি দোকানের সামনে এ সংঘর্ষে জড়ায় উভয় পক্ষ।
আহতরা হলেন হারুন অর রশিদ (৩৫), রনি (৩৪), আক্তার (৪০), মুক্তার (৪২), আনন্দ(২৫), হাসিব (২২), শাহিনূর বেগম (৫৫), শাহ পরান গ্রুপের রিয়াদ হোসেন (২৪) ও আক্তার হোসেন (৪০)।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হোসেন্দী ইউনিয়নে শাহ পরান গ্রুপের সঙ্গে প্রতিপক্ষ হারুন অর রশিদ গ্রুপের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শাহ পরান মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহর পক্ষে অবস্থান নেয়, অন্যদিকে হারুন অর রশিদ গ্রুপের লোকজন অবস্থান নেয় আমিরুল ইসলামের পক্ষে। নির্বাচনে আমিরুল ইসলাম পরাজিত এবং মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ জয়লাভ করায় চাপে ছিল হারুনের পক্ষের লোকজন। এর মধ্যে গতকাল রোববার আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে আজ বিকেলে গোয়ালগাঁওয়ের দিলা মিয়ার মুদি দোকানের সামনে সংঘর্ষে জড়ায় উভয় পক্ষ। এতে হোসেন্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৩ নং ওয়ার্ড শাখার সভাপতি হারুন অর রশিদসহ তাঁর সমর্থক রনি, আক্তার, মুক্তা, আনন্দ, হাসিব গুলিবিদ্ধ হন। হামলার খবর পেয়ে হারুনের চাচি শাহিনুর আক্তার এগিয়ে এলে তাঁকেও মারধর করা হয়। অন্যদিকে শাহ পরানের পক্ষের রিয়াদ ও আক্তার হোসেন নামে দুজন আহত হন।
খবর পেয়ে পুলিশ এবং স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। আহতদের মধ্যে সাতজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং দুজনকে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হামলায় আহত হোসেন্দী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি, গতকাল আমরা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম—এটা কি আমাদের অপরাধ? এই ঘটনার জের ধরে শাহ পরানের নেতৃত্বে অন্তত ২৫ থেকে ২৬ জন আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের সবার হাতে পিস্তলসহ বিভিন্ন রকম অস্ত্র ছিল। তারা আমাদের লক্ষ্য করে একের পর এক গুলি ছুড়তে থাকে। আতঙ্কিত হয়ে আমরা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি শুরু করলে আমাদের ছয়জনের গায়ে গুলি লাগে।’
বিষয়টি সম্পর্কে অভিযুক্ত শাহপরান বলেন, ‘তারা মিথ্যাচার করছে। ঘটনার সময় আমি এলাকাতেই ছিলাম না, আমি এখনও এলাকার বাইরে আপনারা চাইলে আমার সঙ্গে দেখা করে যেতে পারেন। শুনেছি এলাকায় টুকটাক গ্যাঞ্জাম হয়েছে। আমাদের কয়েক নেতা-কর্মী সামান্য আহত হয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের পর বিভিন্ন এলাকায় আমার নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। আজকেও আমার কর্মী হারুন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটল। আমি এই ঘটনার নিন্দা জানাই এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।’
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাজিব খান বলেন, খবর পাওয়ার পর পরই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত। কেউ গুলিবিদ্ধ হয়েছে কি না আপাতত বলতে পারছি না। বিস্তারিত পরে বলা যাবে।’