খুলেছে অফিস-আদালত, উচ্ছ্বসিত রাজধানীবাসী
ছাত্র-জনতার তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর রাজধানীবাসীর মনে বিরাজ করছে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে কয়েকদিনের টানা বিক্ষোভ, সংঘাত-সহিংসতা, আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচার গুলিতে শত শত মানুষের প্রাণহানিতে দেশব্যাপী যে গুমোট অবস্থা ছিল, তা কেটে গেছে। খুলে দেওয়া হয়েছে সব অফিস-আদালত। নিজ নিজ কাজে ফিরছেন চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আজ মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাজধানী বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে রাজধানী যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় গিয়ে দেখা গেছে কয়েকজন অটোরিকশাচালক নিজদের মধ্যে উচ্চস্বরে আলাপ করছেন। তাদের আলোচায়ও শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি। একজন বলেন, ‘হাসিনা পলাইয়া গেল, কিন্ত কতগুলো মানুষকে খুন করে গেল। তারপরেও হে পালাইছে, এটাই খুশির বিষয়। এখন আর ওর নেতাগোরে চান্দা দেওন লাগব না।’
আরেকজন অটোরিকশাচালক বললেন, ‘সারা দিন রোদে পুড়ে ও মেঘে ভিজে যা ইনকাম করি ওগোরে চান্দা দিয়াই শেষ। কয়টা টাকা কম দিলেই গালে চড়-থাপ্পড় দেয়। এ চান্দাবাজগুলারে এহন পাইলে মজাডা দেহাইতাম।’
যাত্রাবাড়ী থানার উত্তর পাশে পত্রিকার স্টলটি ঘিরে অসংখ্য মানুষ। পত্রিকা পড়ছেন আর কেউ কেউ দেশের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছেন। এদের কথায়ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, লুটপাট, দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, টাকা পাচার ও দ্রব্যমূল্যসহ নানান প্রসঙ্গ।
পত্রিকা পড়া বন্ধ করে একজন বললেন, ‘শেখ হাসিনার জেদ আর আমিত্বই আজ দেশ ধ্বংসের জন্য দায়ী। সবকিছুই আমি করেছি, আমি দিয়েছি, আমি খাওয়াই, আমি এই, আমি সেই। তার এসব কথা শুনতো শুনতে বিরক্ত হয়ে গেছে পাবলিক। ওনার পিয়নও ৪০০ কোটি টাকার মালিক, হেলিকপ্টার ছাড়া চলেই না। এসব দাম্ভিকতাও ছিল অসহ্য। ওনার লোকেরাই দেশের লাখো কোটি টাকা দুর্নীতি করে বিদেশে পাচার করল, কোনো ব্যবস্থাই তিনি নিলেন না।’
অপর একজন বলেন, ‘জিনিসপাতির দাম বাড়লেই উনি একটা করে ফর্মুলা দিতেন। পেঁয়াজের দাম বাড়ল আর তিনি বললেন, পেঁয়াজ ছাড়া রান্না করতে। তিনিও পেঁয়াজ ছাড়াই রান্না করেন। কাঁচা মরিচের দাম বাড়ল, তখন তিনি বললেন, কাঁচা মরিচ কিনে শুকিয়ে রাখতে। মাংসের দাম বাড়ল আর তিনি বললেন, কাঁঠাল দিয়ে বার্গার বানিয়ে খেতে। ডিমের দাম বাড়ল আর তিনি বললেন, ডিম কিনে সেদ্ধ করে ফ্রিজে রাখতে। শেখ হাসিনা মূলত আমাদের সঙ্গে তামাশা করে গেছেন।’ সামনের দিনে এগুলো আর দেখতে হবে না, এমন প্রত্যাশার কথাও বলেন তিনি।
‘ছাত্ররা যা দেখাল এবার’, যোগ করলেন আরেকজন পথচারী। তিনি বলেন, ‘ছাত্ররাই আসলে আমাদের বীর। ওদের জন্যই স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন হলো।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, রামপুরাসহ সব এলাকায় উৎসবমুখর মানুষ কর্মস্থলে যাচ্ছেন। রাজধানী থেকে দেশের সব রুটে ছেড়ে যাচ্ছে যানবাহন। রাজধানীতে চলাচলকারী গণপরিবহণেও ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ঢাকা লংমার্চকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনার সরকার গত রোববার বিকেল থেকে অর্নির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ এবং গতকাল সোমবার থেকে তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছিল। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর ছুটি বাতিল করে আজ থেকেই অফিস-আদালত খুলে দেওয়া হয়।