প্রয়োজনে আমাকে জেলে নিয়ে ছেলেকে মুক্তি দিন
দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চেয়েছেন তাঁর মা অধ্যাপক মাহমুদা বেগম। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘প্রয়োজনে আমাকে জেলে নিয়ে আমার ছেলেকে মুক্তি দিন। আমার পক্ষে এই যন্ত্রণা আর সহ্য হচ্ছে না।’
আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মাহমুদা বেগম। তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সংশ্লিষ্ট কোনো ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তাঁর ছেলের কোনো ধরনের সংশ্রব নেই। সত্যনিষ্ঠ লেখালেখির জন্য মাহমুদুর রহমানকে একের পর এক মিথ্যা মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে অন্যায়ভাবে জেলে আটক রাখা হয়েছে।
মাহমুদা বেগম তাঁর ছেলে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের প্রসঙ্গে একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করে তদন্ত করার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে তিনি সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে তাঁর ছেলেকে বেআইনি আটকাবস্থা থেকে মুক্তির নির্দেশ দিয়ে তাঁর হাহাকার দূর করার আবেদন জানান।
আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদের সঞ্চালনায় এ সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন কলামিস্ট-সমাজচিন্তক ও কবি ফরহাদ মজহার, মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দিন ও জয়নাল আবেদীন মেজবাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু ও আমার দেশের বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী।
লিখিত বক্তব্যে মাহমুদা বেগম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট যদি কোনো তথ্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রদান করেও থাকে সেখানে আমার ছেলে মাহমুদুর রহমানের কোনো রূপ সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে না। অতএব, মার্কিন সরকার নীরব না থেকে এ বিষয়ে সকল দলিলাদি স্বচ্ছতার স্বার্থে প্রকাশ করুন।’ তিনি আরো বলেন, ‘মার্কিন সরকার এবং বাংলাদেশে সে দেশের নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের নীরবতার সুযোগ গ্রহণ করে একটি স্বৈরতান্ত্রিক সরকার আমার ছেলেসহ এ দেশের অন্যান্য নিরপরাধ নাগরিকদের হয়রানি ও নির্যাতন করবে-এটা চলতে পারে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ প্রার্থনা করে মাহমুদা বেগম বলেন, ‘আমি আশা করি, তিনিও একজন নারী ও মা হিসেবে আমার ব্যথা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র নিবাসী পুত্রকে অপহরণের যদি সত্যিই কোনো ষড়যন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রে হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে বিষয়টি সঠিকভাবে বাংলাদেশের জনগণকে জানানো একজন কূটনীতিকের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এ ব্যাপারে কাউকে কোনো ধূম্রজাল সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।’
মাহমুদুর রহমানের মা বলেন, তাঁর ছেলেকে নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের একজন বিবেকবান মানুষও কি বিশ্বাস করবেন যে, শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমান মিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের পরিকল্পনা করবেন? দুজনই কি একেবারে নির্বোধ? বাংলাদেশের জনগণ তো জানে যে, সজীব ওয়াজেদ জয়সহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সব সদস্যই এসএসএফের নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। সেই এসএসএফের ভিভিআইপি নিরাপত্তার মধ্যে অপহরণের কল্পকাহিনী কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য?’
এ প্রসঙ্গে মাহমুদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে ২০০৬ সালে সরকারি দায়িত্ব পালন সমাপ্ত করে আজ পর্যন্ত একবারের জন্যও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যায়নি। পুলিশ ২০১১ সালের কল্পকাহিনী সাজিয়েছে। নাকি বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় রাষ্ট্রের ইমিগ্রেশনকে ফাঁকি দিয়ে ২০১১ সালে মাহমুদুর রহমান সকলের অজান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করে এসেছে? আপনারা সকলেই অবগত আছেন যে, আমার ছেলে কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য পর্যন্ত নন। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসে তাঁর ফেসবুকে বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেবেন আর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সেই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে যাবে! এর নামই কি আইনের শাসন? আজ প্রফেসর ইউনূস, কাল শফিক রেহমান, পরশু মাহফুজ আনাম, তার পরদিন মাহমুদুর রহমান, এভাবেই কি দেশের সম্মানিত নাগরিকদের হেয় করা চলতে থাকবে? এই অবস্থা তো নিকৃষ্ট রাজতন্ত্র এবং ফ্যাসিবাদের চাইতেও ভয়াবহ।’
মাহমুদুর রহমানের মা বলেন, ‘আমার একমাত্র সন্তান আজ তিন বছর ধরে সরকারের মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও ভুয়া মামলায় কারাগারে বন্দি। ৮৫ বছর বয়সে আমি সীমাহীন যন্ত্রণা বুকে নিয়ে এখনো বেঁচে আছি।’
সরকারের দায়ের করা ৮৩ মামলার আসামি দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করে অধ্যাপক মাহমুদা বেগম আরো বলেন, ‘সরকারের সীমাহীন জুলুম-নির্যাতনে মাহমুদুর রহমানের ওজন ১২ কেজি কমে গেছে। তাঁর একটি অঙ্গ অবস হয়ে আসছে। এরপরও পুলিশ প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয়কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ চেষ্টার কথিত অভিযোগ এনে তাঁকে ফের শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর আবেদন করেছে।’
মাহমুদুর রহমানের মুক্তির জন্য প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ কামনা করে তাঁর মা বলেন, একে একে ৮০টি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে তাঁর জামিন হলেও সরকার আবার পুরোনো আরো তিনটি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলা দায়েরের তারিখ হচ্ছে মাহমুদুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার ছয় মাস পরের।
এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদা বেগম প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয়ের অপহরণের বিষয়ে তথ্য উদ্ধারের নামে গোয়েন্দাদের সরবরাহ করা বায়বীয় তথ্য প্রকাশ না করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানান।