সিনেমা থেকে পাঁচ জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিজ
গল্পের আবেদন এবং পূর্ববর্তী নির্মাণের সফলতা-মূলত এই দুই কারণ থেকে উৎসাহিত হয়েই ‘সিনেমা’ কিংবা সিনেমার গল্পকে টিভি-সিরিজে রূপান্তর করেন নির্মাতারা। কিন্তু এই রূপান্তরের সফলতা খুব কম গল্পেরই আছে। অভিনেতা-অভিনেত্রী কিংবা কলাকুশলীদের বারবার পরিবর্তনের কারণে অধিকাংশ সিরিয়ালই হয় মাঝপথেই বন্ধ হয়ে গেছে, নতুবা হারিয়েছে দর্শকপ্রিয়তা। আবার জনপ্রিয়তা কিংবা মানের বিচারে সিনেমাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার গল্পও আছে অনেক। সিনেমা থেকে পরবর্তী সময়ে ছোটপর্দায় ‘সিরিয়াল’ হয়েছে এ রকম পাঁচটি গল্প নিয়ে এই আয়োজন।
১. ফার্গো
ফ্রান্সেস ম্যাকডর্ম্যান্ড, উইলিয়াম এইচ ম্যাসি এবং স্টিভ বুসেমির অভিনয়ে এই সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৯৬-এর মার্চে আর পেয়ে যায় অস্কারের সাতটি শাখায় মনোনয়ন। সেরা অভিনেতা হিসেবে ম্যাকডর্ম্যান্ড এবং অরিজিনাল স্ক্রিনপ্লের জন্য কোয়েন ব্রাদার্স, এই দুই মিলে ‘ফার্গো’ জিতে নেয় দুটি অস্কার। প্রায় ২০ বছর পরে ছোটপর্দায় আবারও ফিরে আসে ‘ফার্গো’। ২০১৪ সালে জোয়েল ও এথান কোয়েন নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে কাজ করেন ছোটপর্দার ‘ফার্গো’র জন্য। প্রতি কিস্তিতে নতুন নতুন তারকা আর আর তালিকায় কলিন হ্যাংকস। প্যাট্রিক উইলসন আর মার্টিন ফ্রিম্যানদের উপস্থিতি জমিয়ে তুলেছে এই টেলিভিশন সিরিজকে।
২. টেন থিংস আই হেইট অ্যাবাউট ইউ
১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমায় জুলিয়া স্টাইলেস আর ল্যারিসা ওলেইনিক অভিনয় করেছিলেন। এই দুজনের অনবদ্য অভিনয় আর গল্পের সুবাদে সিনেমাটি মর্যাদা পায় একটি ‘রোমান্টিক-কমেডি’ ক্ল্যাসিকের মর্যাদা, রীতিমতো তারকা বনে যান শিল্পীরা। পরবর্তীতে এবিসি ফ্যামিলি আর পরিচালক গিল জাঙ্গারের মধ্যকার টানাপড়েনের কারণে একসময় ইস্তফা দেন সিরিয়ালটির পরিচালক। নতুন পরিচালক নিয়ে খুব বেশি দূর আর যেতে পারেনি এবিসি ফ্যামিলি। ফলস্বরূপ প্রথম সিজনের পর সিরিয়ালটি বাতিল করতে বাধ্য হয় ‘এবিসি ফ্যামিলি।
৩. প্যারেন্টহুড
১৯৮৯ সালের ‘প্যারেন্টহুড’ দর্শকদের কাছ থেকে একটি ধন্যবাদ পেতেই পারে। কারণ, এর থেকেই তো এসেছে ইতিহাসের অন্যতম সফল মুভি-থেকে-টিভি অ্যাডাপশন। গিল বাকম্যান চরিত্রে স্টিভ মার্টিন ছাড়াও এই সিনেমায় অভিনয় করেন টম হালস, রিক মোরানিস, মার্থা প্লিম্পটন, দায়ানে উইস্টসহ আরো অনেকে। তারকাদের অনবদ্য অভিনয় আর অসাধারণ গল্পের কল্যাণে ‘প্যারেন্টহুড’ অর্জন করে দুটি অস্কার আর তিনটি গোল্ডেন গ্লোব মনোনয়ন, সঙ্গে বক্স অফিসের ১২৬ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার আয় তো আছেই। জনপ্রিয় এই সিনেমাটি ছোটপর্দায় ফিরে আসে মাত্র এক বছর পরেই ১৯৯০ সালের আগস্টে, যার প্রযোজক ছিলেন হাওয়ার্ড আর তারকাদের তালিকায় ছিলেন ডেভিড অর্কেট, জেইন অ্যাটকিন্সন, থোরা বার্চ, এদ বেগলে জুনিয়র ও লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও; যদিও তা প্রথম সিজনের পরেই বাতিল হয়ে যায়। পরে আবারও ২০১০ সালে ‘প্যারেন্টহুড’ ছোটপর্দায় ফিরেছে সেই এনবিসির হাত ধরেই। পাঁচ বছর ধরে চলেছে এই সিরিজ, মনোনয়ন পায় অ্যামির জন্য, আর গোল্ডেন গ্লোবও জিতে নেয়।
৪. অ্যাবাউট আ বয়
২০০২ সালের ‘ড্রামেডি’ (ড্রামা ও কমেডির সংমিশ্রণ!) ঘরানার ছবি ‘অ্যাবাউট আ বয়’-এ অভিনয় করেন হিউ গ্র্যান্ট, পিটার হেজেস। লেখক ও পরিচালক ছিলেন ক্রিস উইটজ এবং পিটার উইটজ। অল্পবয়সী এক তরুণের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের জীবনকে সাজাতে শুরু করেন এক ধনী ব্যক্তি, যাকে কেন্দ্র করে অসাধারণ এক উপন্যাস রচনা করেন নিক হর্নবি। ১৯৯৮ সালের এই উপন্যাসই পরবর্তীকালে পর্দায় আসে ‘অ্যাবাউট আ বয়’ হিসেবে এবং দুনিয়াজোড়া ১৩০ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার আয়ের পাশাপাশি পেয়ে যায় অস্কারের মনোনয়নও। সিনেমাটির নির্মাণের প্রায় দশ বছর পর ২০১৪ সালে এনবিসি ‘অ্যাবাউট আ বয়’ কে নিয়ে আসে ছোট পর্দায়, যেখানে অভিনয় করেছিলেন ডেভিড ওয়াল্টন আর অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন মিনি ড্রাইভার, অ্যাল মাড্রিগ্যাল, আড্রিয়ান প্যালিকি প্রমুখ। প্রায় বছরখানেক চলার পরে সিরিয়ালটি বাতিল করে দেয় এনবিসি।
৫. ডার্টি ড্যান্সিং
১৯৮৭ সালের আগস্টে মুক্তি পাওয়া ‘ডার্টি ড্যান্সিং’ সিনেমায় ফ্রান্সেস ‘বেবি’ হাউসম্যান আর জনি ক্যাসল চরিত্রে অভিনয় করে জেনিফার গ্রে ও প্যাট্রিক সোয়েজ দারুণ খ্যাতি পান। এই জুটির অভিনয়শৈলী আর কলাকুশলীদের পরিশ্রমের ফলস্বরূপ শিগগিরই ‘ডার্টি ড্যান্সিং’ পেয়ে গেল ‘ক্ল্যাসিক’-এর মর্যাদা। আয়ও করল বেশ। আন্তর্জাতিক বক্স অফিসে ২১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পাশাপাশি জয় করল ‘অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড’ আর ‘গোল্ডেন গ্লোব’ মনোনয়ন। এই সফলতার সূত্র ধরে মাত্র একবছর পরই সিবিএস এই ড্যান্সিং ফ্লিককে নিয়ে এলো ছোটপর্দায়। এখানে বেবি আর জনি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন যথাক্রমে মেলোরা হার্ডিন ও প্যাট্রিক ক্যাসিডি। কিন্তু কয়েক মাস পরেই এই সিরিজ বাতিল ঘোষণা করে সিবিএস কর্তৃপক্ষ। ‘ডার্টি ড্যান্সিং’ ভক্তদের জন্য সুখবর হলো, সম্প্রতি এবিসির নতুন ‘টিভি-মুভি মিউজিক্যাল’ রিমেক করার ঘোষণা দিয়েছে, যার মাধ্যমে অচিরেই আবার ছোটপর্দায় ফিরতে যাচ্ছে এই ‘ক্ল্যাসিক’।