১১ আসামির খালাসের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন
আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার আপিলে ১১ আসামিকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
আজ সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের জানান, চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালতে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গত ১৫ জুন সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় আপিলের রায়ে বিএনপি নেতা নূরুল ইসলাম সরকারসহ ছয়জনের ফাঁসির আদেশ বহাল এবং আটজনের যাবজ্জীবন বহাল রেখে রায় দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ। মামলার ১১ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। এ ছাড়া দুই আসামি মারা যাওয়ায় তাঁদের ব্যাপারে কোনো আদেশ দেওয়া হয়নি এবং একজনের পক্ষে কোনো আপিল করা হয়নি।
রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় আহসানউল্লাহ মাস্টারের ছেলে সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল জানিয়েছিলেন, হাইকোর্টের রায়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেননি তাঁরা। সেদিনই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।
নিম্ন আদালতে ২২ আসামি মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। আসামিদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড বহাল রয়েছে : নূরুল ইসলাম সরকার, নূরুল ইসলাম দীপু, মাহবুবুর রহমান মাহবুব, শহীদুল ইসলাম শিপু (পলাতক), হাফিজ ওরফে কানা হাফিজ ও সোহাগ ওরফে সরু।
নিম্ন আদালতে পাওয়া মৃত্যুদণ্ড বাতিল হয়ে হাইকোর্ট থেকে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আসামিরা হলেন—মোহাম্মদ আলী, আনোয়ার হোসেন আনু, জাহাঙ্গীর ওরফে ছোট জাহাঙ্গীর, রতন মিয়া ওরফে বড় রতন, আবু সালাম ওরফে সালাম ও সৈয়দ আহমেদ হোসেন মজনু ও মশিউর রহমান মশু। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন আমির হোসেন, বড় জাহাঙ্গীর, ফয়সাল, লোকমান হোসেন ওরফে বুলু, রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির, খোকন ও দুলাল মিয়া।
মামলা চলাকালে ছোট রতন ও আল আমিন মারা যাওয়ায় তাঁদের আপিল নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে। যাবজ্জীবন বহাল রয়েছে নুরুল আমিনের। এ ছাড়া যাবজ্জীবন থেকে খালাস পেয়েছেন রাকিব উদ্দিন সরকার ওরফে পাপ্পু, আইয়ুব আলী, জাহাঙ্গীর ও মনির।
অন্যদিকে যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ওহিদুল ইসলাম টিপু পলাতক থাকায় তাঁর পক্ষে কোনো আপিল করা হয়নি। ফলে তাঁর বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি আদালত।
চলতি বছরের শুরুতে হাইকোর্টের এ বেঞ্চেই ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়। ছয় মাসে ৩৪ দিন শুনানির পর গত ৮ জুন উভয় পক্ষের বক্তব্য ও যুক্তিতর্ক শেষে ১৫ জুন রায় ঘোষণা করা হয়।
দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টারকে বিএনপি জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ৭ মে দুপুরে একদল সন্ত্রাসী টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে হত্যা করা হয়। হত্যার ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মতিউর রহমান মতি বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে দ্রুত বিচার আইনে টঙ্গী থানায় মামলা করেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের ছেলে নামে পরিচিত জাতীয় ছাত্রসমাজের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম দীপুকে। এ ছাড়া এজাহারে যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় শিল্পবিষয়ক সম্পাদক নূরুল ইসলাম সরকারকে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মো. খালেকুজ্জামান প্রায় দুই মাস তদন্ত শেষে ৩০ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। আসামিদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও জাতীয় পার্টির সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজের নেতাকর্মী। আর পাঁচজন আসামি বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।
এ মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক শাহেদ নূরুদ্দিন ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে প্রধান আসামি নূরুল ইসলাম দীপু ও যুবদল নেতা নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দুজনকে খালাস দেওয়া হয়।
ওই বছরই আসামিরা ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। ২০০৯ সালের নভেম্বরে আপিলের শুনানি শুরু হয়। তিন দিন শুনানির পর আপিলটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। পরে বিচারপতি আবু তারিক ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানি চলাকালে ২০১০ সালের ৭ জুলাই আপিলটি তৎকালীন প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়। এভাবে পার হয়ে যায় প্রায় সাত বছর।
অবশেষে ১৪ জানুয়ারি থেকে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের বেঞ্চে এ মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। বুধবার সেই আপিল শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য এই দিন ঠিক করেন।
গাজীপুর-২ (গাজীপুর সদর-টঙ্গী) আসনে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আহসানউল্লাহ মাস্টার। এর আগে ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৩ ও ১৯৮৭ সালে দুই দফা পুবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।