সভায় যোগ দিতে এসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডিসির মৃত্যু
রাজশাহীতে বিভাগীয় কমিশনারের অফিসে নিয়মিত সভায় যোগ দিতে এসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জাহিদুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন।
ডিসি জাহিদুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার শুকতাইল গ্রামে। আজ সকালে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার অফিসে কয়েকটি বৈঠকে অংশ নিতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার আবদুল হান্নান জানান, মিটিং শুরু হওয়ার দুই মিনিট আগে তিনি মোবাইল ফোনে জরুরি কথা বলতে সভাকক্ষের বাইরে চলে যান। মোবাইলে কথা বলা অবস্থায় তিনি পড়ে যান। এরপর তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সবুজ নগরী বা গ্রিন সিটি হিসেবে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলার শহর চাঁপাইনবাবগঞ্জকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন ডিসি জাহিদুল ইসলাম। তাঁর মৃত্যুতে আপাদমস্তক দেশপ্রেমিক এ মানুষটির শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয় বলে দাবি করেছেন তাঁর সহকর্মীরা।
সহজ-সরল ও সাধাসিধে জাহিদুল ইসলামের মৃত্যুতে শোকবিহ্বল তাঁর সহকর্মীরা। সেই সঙ্গে শোকাহত চাঁপাইনবাগঞ্জবাসীও। তাঁর মৃত্যুর পর অনেকেই সরাসরি আবার কেউ কেউ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শোক প্রকাশ করেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাংবাদিক ইমতিয়াজ ফেরদৌস সুইট তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সোমবার সকালে বৈঠক চলাকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম (ইন্না লিল্লাহি...রাজিউন)। গত শনিবার সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা হয়। ওই দিন জেলার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জকে সবুজ নগরী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। তা আর হলো না। পেশাগত কাজে খুব মিস করব আপনাকে। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতবাসী করুন।’
রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলাউদ্দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘অসাধারণ একজন লোক ছিলেন তিনি। দেশের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ ভালোবাসা। তিনি সবার সঙ্গেই খুব সহজেই মিশতে পারতেন। খোলা মনের এই মানুষটিকে আমরা অকালেই হারালাম।’
রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার আবদুল হান্নান বলেন, ‘অনেক ভালো একটা লোককে হারালাম আমরা। এই শোক কাটিয়ে ওঠা যাবে, কিন্তু তাঁর শূন্যতা কাটিয়ে ওঠা সহজ নয়।’
বিকেলে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলামের জানাজা চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে পাঠানো হবে লাশ। সেখানে দ্বিতীয় দফা জানাজার পর সদর উপজেলার শুকতাইল গ্রামের বাড়িতে তাঁর দাফন সম্পন্ন হবে বলে জানান রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার।
জাহিদুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে এমএ পাস করেন। পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ এবং চীনের বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিপি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৩তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা ১৯৯৪ সালের ২৫ এপ্রিল চাকরিতে যোগ দেন। গত ২৬ জানুয়ারি তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশিক্ষণ ও শৃঙ্খলা) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।