গল্পে আড্ডায় তাসকিন-নাঈমা
ম্যাচ দেখবেন বলে অপেক্ষা করছেন! কিন্তু বৃষ্টি থামছেই না। মেজাজ ভালো থাকবে তখন? অথচ পেসার তাসকিন আহমেদ নাকি বৃষ্টির প্রেমে পাগল। তাসকিনের স্ত্রী রাবেয়া নাঈমা তো তেমনই বললেন, ‘তাসকিন বৃষ্টি পাগল। বৃষ্টি দেখলেই রাস্তায় নেমে পড়ে। এখনো এমন করে।’
তবে সেদিন বিকেলে রোদ ছিল। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম থেকে বাসায় ফিরেছেন তাসকিন। ব্যস্ততার মাঝে হাজির হলেন আমাদের সামনে। সঙ্গে ছিলেন তাসকিনের স্ত্রী রাবেয়া নাঈমা ও এক বছরে পা রাখা ছোট্ট তাসফিন।
এরপর টানা এক ঘণ্টা চলে এই দম্পত্তির সঙ্গে গল্প-আড্ডা। দুজন জানালেন নিজেদের আট বছরের সম্পর্কের নানা খুনসুটি। আড্ডার ছলে বিয়ের দুই বছরে জীবনের বাঁকে কতটা পরিবর্তন এলো সেসব নিয়ে গল্পের ঝাঁপি খুলে বসেন ২৪ বছর বয়সি এই পেস বোলার।
‘আমাকে পাত্তাই দিত না’
কোথা থেকে শুরু করা যায়। বিয়ের আগের জীবন নাকি পরের? প্রশ্নটা করতেই হাসি দিয়ে তাসকিন বললেন, ‘আমাদের পুরোনো দিনের কথাগুলোই আগে শেয়ার করি, ‘ওকে (নাঈমা) আরো আগে থেকেই চিনতাম। পছন্দ করতাম। কিন্তু যখন এসএসসি পরীক্ষা শেষ করি তখন সে আমার ছোট বোনের জন্মদিনে আসে। ওই দিনই প্রথম এসএমএস আদান-প্রদান শুরু হয়। তখন বন্ধুত্ব তৈরি হয়। এরপর আস্তে আস্তে আমি ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি। তখন সে আমাকে পাত্তাই দিত না। সে ক্লাসে চুপচাপ পড়াশুনা করত।’
তাসকিনের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে নাঈমা জানালেন পাত্তা না দেওয়ার কারণ, ‘পছন্দ না হওয়ার কারণও ছিল। কারণ সে খুব দুষ্টুমি করত।’
এরপর প্রেমের স্মৃতিতে ফিরে গেলেন তাসকিন, ‘প্রেমের আট বছরে আমরা বেশিরভাগ সময় রিকশায় ঘুরতাম। ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর থেকে লেকের দিকে অনেক হাঁটা হতো। দেখা যেত একসঙ্গে কোচিং থাকলে আমারা কোচিংয়ের ফাঁকে হাঁটতাম। তখন অনুর্ধ্ব ১৯-এর ক্যাম্পের কারণে বেশির ভাগ সময় থাকা হতো না। একটু ছুটি পেলেই ওকে বাসা থেকে নামার জন্য জোর করতাম। একটু রিকশায় ঘুরার জন্য অনুরোধ করতাম। অনেক সময়ে মানা করলেও আবার নিজেই আসত।’
তাসকিনের বৃষ্টি প্রেম
এরমধ্যে প্রেমিক তাসকিনের বৃষ্টি প্রেম নিয়ে পাগলামোর স্মৃতি শেয়ার করেন নাঈমা, ‘আমাদের সম্পর্কে বৃষ্টি নিয়ে একটা দারুণ স্মৃতি আছে। একদিন রাত প্রায় সাড়ে ৯টা বাজে। তখন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। আর ও একটু বৃষ্টি পাগল। বৃষ্টি দেখলেই রাস্তায় নেমে পড়ে। এখনো এমন করে। সেদিন এত বৃষ্টির মাঝে আমার বাসার নিচে চলে আসে। নিচে এসে বলে, ‘নাঈমা তুমি একটু নামতে পারবা?’ আমি খুব বিপাকে পড়ে যাই যে, কী বলে নামব। তখন বাসায় বলি বান্ধবীর কথা। এরপর ছাতা নিয়ে নেমে পড়লাম। ওর সঙ্গে বৃষ্টির মধ্যে হাঁটা শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে প্রায় ধানমণ্ডি শংকর চলে গেলাম।’
দুজনের মান-অভিমান
শুরুর দিকে একটু কিছু হলেই নাঈমা চিৎকার করে উঠত। এটা কেন হইছে, ওইটা কেন হইছে—এটা আসলে প্রেমের শুরুর দিকে বেশি হয়েছে। আমাদের তো প্রায় আট বছরের সম্পর্ক ছিল। দুই বছর হতে চলেছে বিয়ের। এখন সবকিছুর সঙ্গে অনেকটা মানিয়ে নিয়েছে।
নাঈমার উত্তর, ‘তাসকিন আমাকে খুব একটা বকা দিত না। তবে কোনো বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে তেমন মিশতে দিত না। এই জন্য আমার এখনো কোনো বন্ধু-বান্ধব নেই।’
বিয়ের আগে ও পরে দুজনের মধ্যে পার্থক্য
তাসকিন বলেন, ‘প্রেমিকা নাঈমা আর স্ত্রী নাঈমার মধ্যে পার্থক্য আমি পাইনি। আগে একটু বেশি রাগি ছিল সেটা কিছুটা কমেছে।’ নাঈমার উত্তর- আমিও তেমন পার্থক্য দেখিনি। সে আগেও যেমন দুষ্টুমি করত, এখনো করে। আমাকে কখনো রাগ করে থাকতে দেয় না। এটা বেশি ভালো লাগার।’
‘প্রেমের সময়টা উপভোগ করেছি’
তাসকিন বলেন, ‘প্রেমের মাঝখানের সময়টা আমি খুব উপভোগ করেছি। কারণ প্রেমের শুরুর দিকে ওকে রাজি করাতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। আবার বিয়ের প্রথম দিকে আরেক রকম খেচখেচানি। একটুতেই এটা কেন হইছে, ওইটা কেন হয়েছে। এইগুলো মাঝেমধ্যে বিরক্ত দিত। এটা থেকে বাঁচতে আমার অবিবাহিত ভক্ত বা ছোটভাই যারা আছেন, তাদের বলব বিয়ে দেরিতে করবেন।’
হঠাৎ বিয়ের সিদ্ধান্ত
তাসকিন বলেন, ‘২০১৭ সালে মাত্র এক সপ্তাহের সিদ্ধান্তে আমি নাঈমাকে বিয়ে করি। আমি তখন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ছিলাম। ফোনে বাবাকে বললাম, আমি নাঈমাকে বিয়ে করতে চাই। বাবা বললেন, ২০১৯ বিশ্বকাপ খেল, তারপর বিয়ে। আমি বললাম, না আমি ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছি। নাঈমাকে ফোন দিলাম। বললাম, যেদিন দেশে আসব সেদিনই তোমকে বিয়ে করব। সে বলে, তুমি পাগল হয়ে গেছ নাকি। বললাম, যেদিন আসব সেদিনই বিয়ে করতে চাই, যদি রাজি না হও আমি আর তোমাকে বিয়ে করব না। এরপর তো অনেককিছু হলো। ইচ্ছে ছিল, অনেক বড় করে অনুষ্ঠান করার। কিন্তু সবাই যেভাবে সমালোচনা শুরু করল সেটা নাঈমার জন্য মানিয়ে নেওয়া কষ্টকর ছিল। কারণ সে তো এসবের সঙ্গে অভ্যস্ত নয়।’
তাসকিনের চোখে নাঈমা
ভালো দিক হলো পরিবারের প্রতিটা মানুষকেই যে কাউকে আপন করে নিতে পারে। যেটা আমি সবসময় চেয়েছি। বাবা-মায়ের খুব খেয়াল রাখে। খারাপ দিকটা হলো, প্রচণ্ড একরোখা। নিজে যা ভালো মনে করে সেটাই করে। আর নিজের প্রতি খুব উদাসীন।
নাঈমার চোখে তাসকিন
তাসকিন অনেক দায়িত্বশীল। পরিবারের জন্য খুবই টান। বাবুকে খুব ভালোবাসে। আর সুইমিং করে। এটা ভীষণ ভালো লাগে। এরছাড়া ও খুব ভালো মানুষ। খারাপ গুণ হলো তাসকিন বেশি পাগলামি করে।
নারী ভক্তদের কাণ্ড
নারী ভক্তদের কাণ্ড নিয়ে নাঈমা কখনো রাগ করত না। কিছু কিছু ফ্যান ছিল, যে বাসায় এসে বাবা-আম্মুকে বাবা-মা ডাকা শুরু করে দিত। এক মেয়ে তো একদিন এসে বাসা ঝাঁড়ু দেওয়া শুরু করে দিয়েছে। নাঈমা নিজেও আসত। মাঝেমধ্যে এসে মায়ের সঙ্গে কাজ করত । মাকে পটানোর জন্য হয়তো, রান্না করতে চাইত, নুডুলস রান্না করতে চাইত।
এই মুহূর্তে ডেটিংয়ে যেতে বললে….
এই মুহূর্তে সবকাজ থেকে ছুটি দিয়ে ডেটিংয়ে যেতে বললে আমি নাঈমাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে যেতে চাই। আমার খুব পছন্দের জায়গা। নাঈমা আবার মালদ্বীপ পছন্দ করে। তো ওর পছন্দের জায়গাতেও নিতে চাই।